গাংনী উপজেলা নিয়ে গঠিত মেহেরপুর-২ আসন
গাংনী উপজেলা নিয়ে গঠিত মেহেরপুর-২ আসন। এরই মধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনটিতে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি নিজ এলাকাতেও চলছে নির্বাচনী প্রচার, ছুটছেন গ্রাম-গঞ্জ, পাড়া মহল্লায়, গণসংযোগের মাধ্যমে ব্যস্ত সময় পার করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরছেন তারা।
এদিকে বিএনপি তাকিয়ে আছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর। দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবেন। আর নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াত ইসলামের কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা না গেলেও জাতীয় পার্টি ঘর গোছাতে শুরু করেছে। দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন তারাও।
গাংনী উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মেহেরপুর-১ আসন। এই আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৭৬ হাজার ২০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৭ জন আর মহিলা ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৩৭ হাজার ৬৫২ জন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকলেও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজের অবস্থানকে জানান দিতে এলাকার নেতা কর্মীদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন।
মেহেরপুর-২ আসনের বিগত নির্বাচনী ফল থেকে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে আব্দুল গনি, আওয়ামী লীগ থেকে হিসাব উদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মকবুল হোসেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক এমপি মকবুল হোসেন বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী আব্দুল গনি। নৌকার প্রার্থী হিসাব উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেননি।
জনপ্রিয়তা দেখে ২০০১ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী মকবুল হোসেনকে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দেয়। তবে সেবার তিনি বিএনপির প্রার্থী আব্দুল গনির কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারও নৌকা প্রতীক পান মকবুল হোসেন। সেবারও তিনি বিএনপির প্রার্থী আমজাদ হোসেনের কাছে পরাজয় বরণ করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী বদল করে নৌকার টিকিট তুলে দেয় সে সময়ের গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকের হাতে।
মনোনয়ন না পেয়ে মকবুল হোসেন আবারও মাঠে নামেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে। নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে নেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাহিদুজ্জামান খোকন।
গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, গাংনীকে সুন্দর করে সাজানোর স্বপ্ন আছে আমার। স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট, কৃষি শিক্ষা, নারীর কর্মসংস্থান, বেকার সমস্যা দূরীকরণ, যুবসমাজে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা, একটি কৃষি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। এরই মধ্যে কৃষি ও কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তনে যা যা করার আমি তাই করছি। কৃষক ছাউনি তৈরি করছি। আমি আমার মতো করে শৈশব থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। আমার কর্মের কারণেই নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করেছেন।
আমি মানুষের পাশে থেকে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। আমি বিশ্বাস করি, নেত্রী সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে আমাকে আবারও নির্বাচন করার সুযোগ দিবেন। দলের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। তবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। দলের মধ্যে যেই মনোনয়ন পাক না কেন আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে পারব।
গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মখলেসুর রহমান মুকুল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। আমি প্রতিনিয়ত গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় যাই এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ করি। বর্তমান সরকারে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে তাদের বুঝাই এবং তারা এখন ঐক্যবদ্ধ। রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখন চোর-ডাকাতের উৎপাত নেই। মানুষ নির্বিঘেœ ঘুমাতে পারে। দলের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে তবে দল সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে দক্ষ, পরিশ্রমী এবং তৃণমূল জনগণের পাশে থেকে কাজ করবে এমন মানসিকতা প্রয়োজন। আমি আমার এলাকার প্রতিটি মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরছি। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না বলে আমি বিশ^াস করি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক বলেন, সারা বছরই আমাদের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরছি। এখন আমরা সময়ের অপেক্ষায় আছি। বিগত সময় যখন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তখন আওয়ামী লীগের মধ্যে একাধিক প্রার্থী দেখা গেছে। সেই অবস্থা থেকে আমরা এখন ভালো অবস্থানে আছি। দলের মধ্যে এখন বড় ধরনের কোনো লবিং গ্রুপিং নেই। সহিংসতা নেই। সবাই মিলেমিশে আছি।
এবার আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনটিতে পুরাতন মুখের পাশাপাশি নতুন মুখ আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ডা. এ এস এম নাজমুল হক সাগরের নাম শোনা যাচ্ছে। পারিবারিক ঐতিহ্যর সূত্র ধরে তিনি রাজনৈতিতে সক্রিয় হয়েছেন। ছেড়েছেন ডাক্তারি পেশা। ২০০৮ সালে তিনি ভোলা উপজেলায় দৌলতখান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জেনারেল সার্জারি হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সহ-পরিচালক হিসেবে দাায়িত্ব পালন করেন।
ডা. এ এস এম নাজমুল হক সাগর বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবার থেকেই এসেছি। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে আমি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলাম। সরকারি চাকরির কারণে ২০০৮ এর সময় আমার মনোনয়ন চাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এলাকার জনগণের ভালোবাসা সবসময় আমার ওপর ছিল। জনগণের পূর্ণ সমর্থনে এবং পরিবারে সঙ্গে আলোচনা করে ২০২০ সালে আমি চাকরি ছেড়ে দেই। এরপর থেকে আমি সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি।
আমি আশাবাদী এই কারণে, যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে স্মার্ট মানুষ প্রয়োজন। এর আগেও আমি ২০০০ সাল থেকে এলাকার উন্নয়ন, জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করা, আমার আব্বার নামের নূরুল হক ফাউন্ডেশন থেকে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তিসহ বিভিন্ন কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছি। জনসম্পৃক্ততা এবং জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা, জিতে আসার ক্ষমতা, পূর্বের ডেডিকেশন, ভবিষ্যতে জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারবে এমন কাউকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে আমরা আভাস পাচ্ছি।
এদিকে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছে এবং আমি কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, আমি এলাকার জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। নেতা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গাংনীবাসীর প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছি। নির্বাচনের যদি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেব।
জেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কিতাব আলী মাস্টার বলেন, আমরা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে যে সব কর্মসূচি আছে তা পালন করে যাচ্ছি। আমাদের নেতাকর্মীদের আরও সক্রিয় করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। এখনো অনেক মানুষ জাতীয় পার্টির ওপর আস্থা রেখেছে। আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আমার এলাকার জনগণের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক নেতা-কর্মী যারা ঝিমিয়ে গিয়েছিল তারা এখন অনেক সক্রিয়। আমি আশাবাদী দল মূল্যায়ন করবে।
তবে গাংনীর সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করলে নির্বাচনের পরিবেশ ভিন্ন হবে। তবে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে যদি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এক কাতারে এসে সমর্থন করে তাহলে এই আসনটি পেতে পারে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে জনগণের সুখে, দুঃখে পাশে থেকে কাজ করবে এমন প্রার্থীকেই এবার বেছে নিতে চান সাধারণ ভোটাররা।