ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ১৩ মার্চ ২০২৩

দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই ॥ ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

পঞ্চগড়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে পুলিশি হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার এবং জিয়া পরিবার ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে ফখরুল ইসলাম বলেন, মানুষের ভোট ও মত প্রকাশের অধিকার হরণকারী ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী নিশিরাতের ভোটের সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। বর্তমানে দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই, নেই জানমালের নিরাপত্তা। যেখানেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে সেখানেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিচ্ছে সরকার। সাধারণ মানুষের ওপরও গুলি চালাতে কুণ্ঠাবোধ করছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সেখানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটে নেওয়ার চেষ্টা করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও নিরীহ মানুষের ওপর পুলিশ যেভাবে গুলি চালিয়েছে তা সরকারের নিষ্ঠুরতার আরেকটি বহির্প্রকাশ। পুলিশের নির্বিচার গুলি ও হামলায় শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একদিকে গুম-খুন-লুটপাট ও নিপীড়ন চলছে, অন্যদিকে চলছে গোয়েবলসীয় কায়দায় অকথ্য মিথ্যাচার। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকারের লোকজন উন্মাদ হয়ে গেছে। অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মহান স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন ও চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেতা তারেক রহমানকে নিয়ে যেসব মিথ্যাচার চালাচ্ছেন তা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিবর্জিত। ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধানের মুখে এসব কথাই শোভা পায়।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মানুষের ভোটের অধিকার পুনর্প্রতিষ্ঠায় যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখে অবৈধ সরকার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। সরকার বুঝে গেছে, তাদের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। তাই নানা নাটক ঘটিয়ে জনগণের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার কূটকৌশল চালাচ্ছে।
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষের ঘটনার জন্য দায়ী সরকার ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, পঞ্চগড়ের একটি জলসাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি যে অনাকাক্সিক্ষত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যববহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওই ঘটনায় সরাসরি সরকার জড়িত। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এই ঘটনা ঘটেছে।

সোমবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে জেলা বিএনপির এক বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের আগে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পঞ্চগড়ের ঘটনায় সাবেক এমপি হারুন ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে দায়ী করে বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তথ্যমন্ত্রীর মিথ্যা ও বানোয়াট ভিত্তিহীন কথা এখন আর কেউ বিশ্বাস করেন না। 
ফখরুল বলেন, পার্লামেন্টারি এক কমিটিতে আওয়ামী লীগও মতামত দিয়েছিল দেশে আরও দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া উচিত। এছাড়াও হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছিল। সেখানে নয়জনকে ডাকা হয়েছিল। তাদের মধ্যে আটজনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে কথা বলেছেন। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এড়ানোর একমাত্র সমাধান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের  সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমানসহ অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  
বিরোধী কণ্ঠরোধে নির্যাতন চলছেÑ খন্দকার মোশাররফ ॥ সরকার বিরোধীদের কণ্ঠরোধে হিটলারি কায়দায় নির্যাতন করছে বলে  অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু চাপাবাজি ও গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। আর এই ক্ষমতা ধরে রাখতে ও বিরোধী কণ্ঠকে রোধ করার জন্য গত ১৪ বছর ধরে এই ফ্যাসিস্ট সরকার হিটলারি কায়দায় যত নির্যাতন করতে পারে এই বাংলাদেশে ওই রকমভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। 
সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ‘মৃত্যুকূপে ধাবমান বাংলাদেশ-দুই’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়া পরিষদ।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গত ১৪ বছরে ছয় শতাধিক মানুষকে গুম করেছে। কত হৃদয়বিদারক, এই গুম হওয়ার পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে পিতার নামের জায়গায় মরহুম কিংবা জীবিত কোনোটাই লিখতে পারে না। যদি মৃত লিখতে হয় তার একটা দলিল থাকতে হবে।
গত ১৪ বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে এক লাখের বেশি মিথ্যা মামলা হয়েছে আর আসামি ৩৫ লাখের কাছাকাছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তৃণমূলের এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যার নামে একাধিক মিথ্যা মামলা নেই। আজ আমাদের নেত্রী একটি বানোয়াট মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দি।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব সুষ্ঠু হয়েছে বলে মনে করে না উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সারাবিশ্ব এই সরকারকে সবক দিচ্ছে আগামী নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। বাংলাদেশ আজ একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছে দাবি করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিশ্ব আজ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছে।
স্বাধীনতার পর থেকে কোনো রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের সংকট উত্তরণে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। তার মধ্যে প্রথমে রয়েছে এই সরকারের পদত্যাগ ও অবৈধ সংসদ বাতিল। এর পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে, তার প্রমাণ এসব দাবিতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলো সফল হওয়া। এরপর আমাদের গণমিছিল, গণঅনশন, পদযাত্রাও সফল হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি কর্মসূচিও সফল হয়েছে। এসময় সরকার বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে ভয় পায় বলে দাবি করেন তিনি।