ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক বিক্রেতা, চাঁদাবাজদের আশ্রয় দিত এক বিতর্কিত নেতা

টর্চার সেলে নির্যাতন, ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মী বহিষ্কার

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

টর্চার সেলে নির্যাতন, ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মী বহিষ্কার

বহিষ্কৃত শাহরুখ আলম, কাওসার আজম রাফি, রাজু আহম্মেদ ও ওয়ালিউর রহমান রিফাত

রাজশাহী সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসে গড়া টর্চার সেলে সাংবাদিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার রাতে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাম মুবিন সবুজ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলো- নগর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক শাহরুখ আলম, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক কাওসার আজম রাফি, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রাজু আহম্মেদ ও রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী ওয়ালিউর রহমান রিফাত। তারা সবাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তের অনুসারী। এদের প্রত্যেককে মহানগর শাখার সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে আগামী ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, আমরা যারা ছাত্রলীগ করি সাধারণ ছাত্রদের ভালোর জন্যই করি। তাদের পড়াশোনা এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করাই আমাদের কাজ। ছাত্রলীগের প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও এমন দিকনির্দেশনাই ছিল। যারা ছাত্রলীগ করে সাধারণ ছাত্রদের আঘাত করবে বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে তারা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থার মধ্যে পড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি জোর করে দলীয় প্রোগ্রামে নিতে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) দুই শিক্ষানবিস সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম ও সাকিবসহ অন্তত ৩০ সাধারণ শিক্ষার্থীকে পৃথক কক্ষে (টর্চার সেল) নিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হামলাকারী শাহরুখ, রাফি, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান, আহসানসহ সবাই রাশিক দত্তের অনুসারী বলে জানা যায়।
এ ঘটনার পরদিন রাজশাহী কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) ও রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরটিজেএ) নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তকে। এ সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত সুপারিশ করতে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি রাশিক। অভিযোগ রয়েছে, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, বহিরাগত বখাটেদের সেল্টার দিয়ে থাকে বিতর্কিত এই নেতা। রাশিকের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই বিভিন্ন কর্মকা- করে থাকে তার কর্মীরা।
অভিযোগ ওঠে, কলেজ ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক মিছিল-মিটিংসহ দলীয় কর্মসূচিতে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ। যেতে না চাইলে মারধরসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। নির্যাতন করা হয় টর্চার সেলে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা অসুস্থ থাকলেও ছাড় পান না শিক্ষার্থীরা। এছাড়া রয়েছে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মা-বাবা তুলে গালিগালাজসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হন প্রতিনিয়তই।
এ ঘটনায় ছাত্রাবাস পরিদর্শনে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সামনে কলেজ অধ্যক্ষকে হুমকি দেওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক এবং ছাত্রাবাস সুপার ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মানিক। পরে কলেজ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের ডাকলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রুমে ফিরে যায়। এদিকে সম্প্রতি কলেজ হোস্টেলের কক্ষে মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল হলে আলোচনায় আসেন রাশিক দত্ত। এছাড়া প্রোগ্রামে না যাওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনায় ক্যাম্পাসে ও হোস্টেলে একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধরসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে রাশিক ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
রাবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি ॥ এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হলকক্ষে ডেকে কৃষ্ণ রায় নামের সেই সনাতন ধর্মালম্বী শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নির্যাতন ও শিবির ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকির ঘটনার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। প্রাধ্যক্ষ বলেন, হলে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তারা ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আমরা হল প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে একটি সভা করব। সভা শেষে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট পাঠিয়ে দেব। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি যে ধরনের শাস্তির সুপারিশ করবেন, তার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, এই ঘটনা আমরাও সাংগঠনিকভাবে যাচাই বাছাই করেছি। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মারধরের কোনো অভিযোগ পাইনি। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বিরুদ্ধে শিবির ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়।

×