ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

সিরাজগঞ্জ-৩

জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বড় দুই দলে

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:০০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বড় দুই দলে

.

সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-সলঙ্গা-তাড়াশ) নির্বাচনী এলাকাটি কৃষিনির্ভর। বৃহত্তর চলনবিলের একটি অংশ এই দুই উপজেলাকে স্পর্শ করেছে। মৎস্য ও শস্য সম্পদে ভরপুর এই এলাকার মানুষ খুবই সাদাসিধে। কৃষিকাজ এবং মৎস্য আহরণ তাদের উপার্জনের প্রধান উৎস। এখানে রয়েছে মিঠা পানির শুঁটকি পল্লী। গুমানী নদী এবং করতোয়া নদীপাড়ের এই দুই উপজেলার বুক চিরে উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক অতিবাহিত হয়েছে। বিনা চাষে রসুন ও সুস্বাদু তরমুজ তাড়াশ উপজেলার  মৌসুমী ফসল।
এলাকাটি কৃষিনির্ভর হলেও এ আসনের ভোটাররা বরাবরই রাজনৈতিক সচেতন। গত ১৪ বছরে এই নির্বাচনী এলাকার সার্বিক চিত্রও পাল্টে গেছে। ১৪ উন্নয়নের ছোঁয়ায় এই নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাটসহ জীবনমানের ধরনও বদলে গেছে। ইতোমধ্যে সারাদেশের মতো এই নির্বাচনী এলাকাতেও বইছে ভোটের হাওয়া। বড় বড় রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, ভোটারদের মন জয়ে এলাকার উন্নয়নে দিচ্ছেন ভূরিভূরি প্রতিশ্রুতি।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার এই আসন থেকে বিজয়ী হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও এই বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করছে ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা। এর আগের তিনবারের নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপিও বসে নেই। তারাও আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আগামী নির্বাচনেও আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
রায়গঞ্জ উপজেলার ৯ ইউনিয়ন, এক পৌরসভা ও তাড়াশ উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫শ’ ২৯।  নির্বাচনের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনে পর পর তিনবারই বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের সর্বশেষ তিনটি নির্বাচনেই পর পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ। তিনি এক সময় ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। গত পাঁচ বছরে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদী। তবে এ আসনেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে একাধিক প্রার্থী। এ নিয়ে কোন্দলেরও কমতি নেই।
এ আসন থেকে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুুুুইট, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাদী আলমাজি জিন্নাহ, বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইমন তালুকদার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফের  নাম শোনা যাচ্ছে। জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্তাও রয়েছে। তারা মাঠেও আছেন। দলের হয়ে প্রতিটি সভা-সমাবেশ আয়োজনসহ সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। দল গোছানোর কাজ করছেন ।
অপরদিকে এ আসনে সুখে নেই বিএনপিও। তাদেরও রয়েছে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান তালুকদার। তিনি এই নির্বাচনী এলাকায় পর পর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে করেছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আ্য়নুল হক, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীরও মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য কয়েকটি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে।
সচেতন ভোটারদের মতে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে মূলত বিএনপিরই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। পর পর তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ অঞ্চলের উন্নয়নের রায় পেয়ে জনকল্যাণে কাজ করেছেন। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ নানান উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন। জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগের দাবিÑ এত উন্নয়ন করার পর  জনগণ নৌকার মনোনীত প্রার্থীকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবে। অতিথি পাখির মতো অনেকের আনাগোনা বাড়লেও জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন- বিগত নির্বাচনে দল তাঁকে মনোনয়ন দেবার পর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দলকে সুসংগঠিত করার কাজ করেছি। নির্বাচনে এলাকার উন্নয়নে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, গত চার বছরে সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করেছি। আঞ্চলিক সড়ক, গ্রামীণ সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টসহ অবকাঠামোগত অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। রায়গঞ্জের ঘুড়কা সেতু, তাড়াশে গুমানী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ কাজ এ বছরই শুরু হবে। আইআরডিপি প্রকল্প বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এলাকায় এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা,মহাশ্মশান সংস্কারসহ নতুন নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এই শীতে মানুষের কষ্ট লাঘবে গভীর রাত পর্যন্ত এলাকা এলাকা ঘুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে চলনবিলকে একটি পর্যটন শিল্প এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনাও হাতে রয়েছে। আমি আবারও মনোনয়ন পেলে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করব।
অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট একাধারে শেরে বাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য। তিনি বলেন, রায়গঞ্জ-তাড়াশ নির্বাচনী এলাকার মানুষ কৃষিনির্ভর। কৃষিক্ষেত্রে গৃহীত কৃষি ও কৃষিবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমি ইতোমধ্যেই রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা জলাবদ্ধতা নিরসন করে প্রায় ২০ হাজার বিঘা অনাবাদি জমি তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরের কাজ করেছি। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এই এলাকার কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষ আমাকে ভোট দেবে বলে বিশ^াস করি। আমি নির্বাচিত হলে কৃষি সংশ্লিষ্ট সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা দূর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ অঞ্চলকে কৃষি উৎপাদনে আধুনিক মডেলে পরিণত করার ইচ্ছা পোষণ করি।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এ আসনের তিন-তিনবারের এমপি আব্দুল মান্নান তালুকদার বলেন, ১৯৯১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়ে জনকল্যাণে যে কাজ করেছি, তার সাক্ষী এ অঞ্চলের জনগণ। তিনি স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছিলেন।  তার দাবি, মনোনয়ন পেলে এ অঞ্চলের মানুষ আমাকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবেন।
বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী আয়নুল হক বলেন, আমি রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন এলাকার উন্নয়ন করেছি। মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আগামী নির্বাচনে এই অবৈধ সরকারের কোনো প্রার্থীকে এ অঞ্চলের মানুষ আর তাদের ভোট দেবে না। দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে, দুর্নীতিতে এই নির্বাচনী এলাকা ছেয়ে গেছে। ভোট দেবার সুযোগ পেলে ভোটাররা বুঝিয়ে দেবে তাদের ভোটের মূল্য কত।
সাধারণ মানুষ কেমন জনপ্রতিনিধি চান এমন প্রশ্নে রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী আসাদুল্লাহ বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, সকল ভোটার ভোট দেবার সুযোগ পেলে এবং যিনি মমত্ববোধ দিয়ে এলাকার উন্নয়ন করবেন তেমন জনপ্রতিনিধিই আমরা নির্বাচিত করতে চাই। পাঙ্গাসী ইউনিয়নের চকনুরের কৃষক আমদ আলী বলেন, আমরা কৃষক মানুষ। মাঠে আবাদ করি। এলাকার উন্নয়ন হোক, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকুক এবং যিনি জনগণের কল্যাণে কাজ করেছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন তাদের আমরা নির্বাচিত করতে চাই।
বাঐখোলা গ্রামের মিজানুর বলেন, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বসভায় আজ বাংলাদেশ সমাদৃত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম প্রধান নেত্রী। নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। রায়গঞ্জ উপজেলা সদর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম সরকার বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিগত ১৪ বছর বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের দেড়দশক। একটা স্বাধীন দেশের উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় তা শেখ হাসিনার সরকারই করেছেন।

 

×