ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণের টাকা পরিশোধে বিক্রি করা শিশুকে ফিরে পেল মা

নূরুল ইসলাম, টঙ্গী, গাজীপুর

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

ঋণের টাকা পরিশোধে বিক্রি করা শিশুকে ফিরে পেল মা

শিশুসহ মা

ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া সন্তানকে পুনরায় ফিরে পেতে এক মা পাগলের মতো ছুটাছুটি করতে থাকলে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ এগিয়ে আসে সন্তান হারা মাকে বিক্রিত সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে। সন্তান বিক্রির ঘটনাটি ঘটে গেল সোমবার। 

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) টঙ্গী থানা পুলিশের সহায়তায় মা ফিরে পান তার বিক্রি করা সন্তানকে। টঙ্গীর পূর আরিচপুরের আইনউদ্দিনের বাড়িতে ঘটে এ ঘটনা। 

শিশুটির মায়ের নাম লিমা হনুফা। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, পাঁচ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেন তার স্বামী মাসুম। এক মেয়ে, দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে পাঁচজনের পরিবার লিমার। 

সংসারের অভাব-অনটনের কারণে ৩০ হাজার টাকার মতো ঋণ করেন তিনি। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গত সোমবার ৫৭ দিনের শিশুকে স্বর্ণা আক্তার নামে এক নারীর কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। শিশু বিক্রির দুদিন না পেরোতেই সন্তানের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন মা লিমা হনুফা। 

দিক্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকেন মা লিমা। সন্তান হারিয়ে পাগলের মতো হয়ে যান মা। দ্বারস্থ হন স্থানীয়দের কাছে। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে ঘটনাটি জানালে  বৃহস্পতিবার ঢাকা জেলার দোহার থানার লারিসা গ্রামের কাশেম-স্বর্ণা দম্পতির কাছ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ।

শিশুটির মা লিমা হনুফা বলেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমি মানুষের বাসায় আয়া হিসেবে কাজ করতাম। শিশু জন্ম দেওয়ার পর কাজ করতে পারছি না। আমার স্বামী পঙ্গু হওয়ায় তাকে কেউ কাজে নেয় না। আমার তিন মাসের ঘর ভাড়া ১২ হাজার, দোকানে বাকি ১০ হাজার ও ওষুধের দোকানে ৮ হাজার টাকা ঋণ হয়। বাড়ির মালিক পাওনা টাকার জন্য চাপ দিলে আমার শিশুটিকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেই। দুদিন পর আমার সন্তানের জন্য কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছিল। না খেয়ে কাটিয়েছি গত ৩ দিন। গলা দিয়ে দানাপানি যাচ্ছিল না আমার। 

লিমা হনুফা আরও বলেন, টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করে আমার শিশুকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আমার স্বামীকে একটি কারখানায় কাজের ব্যবস্থা এবং আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবার আশ্বাস দিয়েছেন। 

শিশুটিকে কিনে নেয়া স্বর্ণা আক্তার বলেন, আমরা নিঃসন্তান। তাই একটি শিশু লালন-পালনের জন্য নিয়েছিলাম সন্তানের মতো মানুষ করতে। পুলিশের নির্দেশে এবং ৩০ হাজার টাকা ফেরত পেয়ে আমরা শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি।

স্বামীকে চাকরি দেয়া প্রতিষ্ঠান হক গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা হযরত আলী ঈশান বলেন, ‘টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আমাদের মর্মস্পর্শী বিষয়টি জানান। আমরা শিশুটির বাবা মাসুমকে আমাদের কারখানায় কাজের সুযোগ করে দেবো। 

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা এক মায়ের সন্তানকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আজ আমার মনে হচ্ছে- সৃষ্টিকর্তা আমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একটি কাজ করিয়েছেন।
 

 

এসআর

×