ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

অবশেষে ধরা দিল অধরা স্বপ্ন

তদ্বির ছাড়া সরকারি চাকরি পেয়ে আত্মহারা ৯০ জন

বাবুল সরদার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ২২:৫০, ১ ডিসেম্বর ২০২২

তদ্বির ছাড়া সরকারি চাকরি পেয়ে আত্মহারা ৯০ জন

নিয়োগপত্র পাওয়া এক মেধাবী

বৃদ্ধ বাবা বিকাশ সরদার দিনমজুর। মা শিলু বেগম প্যারালাইসিসে শয্যাশায়ী। থাকেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে। নানা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মামাদের অংশ বাদ দিয়ে নানার মুক্তিযোদ্ধার ভাতার যে অংশ মা পান, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে বন্যা সরদারের। তবু অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম করে রামপাল উপজেলার পিপুলবুনিয়া গ্রামের মেধাবী বন্যা এমএ প্রথম পর্ব পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু নিদারুণ সংকটে আর এগোতে পারছিলেন না। তাই হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছিলেন। অবশেষে অধরা স্বপ্ন বাস্তব হলো। তিনি সরকারি চাকরি পেয়েছেন কোনো তদ্বির ও টাকা ছাড়াই।
বুধবার পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে যোগদান করে আনন্দে কেঁদে কেঁদে বলেন, এও সত্যি! টাকা নেই-পয়সা নেই, তদ্বির নেই। তার পরও সরকারি চাকরি পেলাম। আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া।..’  
আর মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঢুলিগাতী গ্রামের ফাহমিদা মিতুর বাবা দিনমজুর। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে জীবিকা চলে। খেয়ে না খেয়ে অতি কষ্টে নিজে লেখাপড়া করলেও ছোট ভাইয়ের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। নিরুপায় মিতুর সংসার বাঁচাতে চাকরি করা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। একের পর এক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে থাকেন। অবশেষে তিনি চাকরি পেয়ে হতবাক।
নিয়োগপত্র পেয়ে বন্যার মতো মিতুও আত্মহারা আনন্দে কেঁদে ফেলেন। শুকরিয়া আদায় করেন পরম করুণাময়ের প্রতি। তার ভাষায়, ‘কল্পনাও করিনি আমার মতো গরিব মেয়ের বিনে পয়সায়, বিনে তদ্বিরে চাকরি হবে। আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না, আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে।’ এ সময় তার মা-বাবা এগিয়ে এসে বলেন, ‘সব আল্লাহপাকের ইচ্ছে। মেয়েটা যে কী কষ্ট করে পড়েছে তা বলে শেষ করা যায় না। ..’
সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলার মালিয়া রাজাপুর গ্রামের মনিকা রানী মাঝির বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বামী বেকার। মা বৃদ্ধ। দুই ভাইবোনসহ ৫ জনের সংসার চলে বাবার ভাতার টাকায়। টানাটানিতে সংসার যেন আর চলছিল না। এমন সময় নিয়োগপত্র পেয়ে মনিকাও আবেগে আত্মহারা। তার বাবার ভাষায়, আমার মেয়ের তদ্বির করেছেন ‘ঠাকুর ভগবান।’ তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।  
এভাবে মোংলা উপজেলার মিঠাখালি ইউনিয়নের চৌরিডাঙ্গা গ্রামের হাওয়া খাতুন ৬ ভাইবোন আর দিনমজুর মা-বাবাকে নিয়ে গোলপাতার ছাউনি আর পলিথিন ও সিমেন্টের খালি ব্যাগের বেড়া দেওয়া ঘরে বসবাস করেন। মেধাবী হাওয়া খাতুন অবর্ণনীয় কষ্ট সত্ত্বেও কঠিন সংগ্রাম করে লেখাপড়া করেন। কিন্তু তীব্র অভাবের কারণে অন্য ভাইবোনদের লেখাপড়া হয়নি। তিনি চাকরি পেয়ে যেন ‘সোনার হরিণ’ পেয়েছেন।

উচ্ছ্বসিত তার ভাষায়, আমার মতো গরিব মেয়ের বিনে পয়সায়, তদ্বির ছাড়াই সরকারি চাকরি হবে জীবনে ভাবিনি। আমি প্রধানমন্ত্রীসহ নিয়োগ বোর্ডের সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের সুস্থ দীর্ঘায়ু কামনা করি।  এভাবে বাগেরহাট জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে পৃথক ৪টি পদে জেলাব্যাপী সদ্য চাকরি পাওয়া ৯০ জনের জীবন সংগ্রাম প্রায় অনুরূপ হলেও তারা সবাই মেধাবী। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তার দীর্ঘায়ু প্রার্থনা করেন।  
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘চেষ্টা করেছি সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে স্বচ্ছতার সঙ্গে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ নিশ্চিত করার। ভবিষ্যতেও সকল নিয়োগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

×