ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় বেপরোয়া ১৪ ইটভাঁটি মালিক

প্রবীর বিশ্বাস, খুলনা অফিস

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ২৬ নভেম্বর ২০২২

খুলনায় বেপরোয়া ১৪ ইটভাঁটি মালিক

ডুমুরিয়া উপজেলায় নদী দখল করে গড়ে তোলা ইটভাঁটি

রাজনীতির মাঠে একে অপরের মুখোমুখি অবস্থান করলেও নদীর বুক চিরে অবৈধভাবে ইটভাঁটি নির্মাণ করে পরিবেশ দূষণে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন। আছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা, সাবেক মন্ত্রী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিএনপি কর্মী ও জাতীয় পার্টি নেতা। ফলে খুলনার ডুমুরিয়ার এক সময়ের আশীর্বাদ হরি ও ভদ্রা নদী এখন মরাগাঙে পরিণত হয়েছে। মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া যায়নি। সম্প্রতি এমন ১৪টি ইটভাঁটি উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তাতেও ঢিমেতাল দেওয়ায় জেলা প্রশাসক, নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৫ জনকে তলব করেছে হাইকোর্ট।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডুমুরিয়ার খর্নিয়ার ভদ্রার পাড়ে গড়ে ওঠা কেপিবি ব্রিকস নামে ইটভাঁটির মালিক সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ভদ্রা নদী দখল করে গড়ে তোলা ইটভাঁটিতে নদীর মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ জেলা শাখার সদস্য এজাজ আহমেদের মালিকানাধীন সেতু ব্রিকসে গিয়ে দেখা যায়, ভাঁটির চিমনি দিয়ে দেদার বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। তার পাশেই জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কাশেমের জামাতা শাহজাহান জমাদ্দারের নূরজাহান-১ ও শান ব্রিকসের ভাঁটি।
এ ছাড়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর বুলুর ছেলে সালেহ আকরাম মাহির কেবি-২ ব্রিকস, সৈনিক লীগের আহ্বায়ক গাজী আবদুল হকের সেতু-৪ ব্রিকস, উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আবদুল লতিফ জমাদ্দারের জেবি-১ ব্রিকস, শ্রমিক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন বিশ্বাসের আল মদিনা ব্রিকস, ব্যবসায়ী সোবহান সানার এফএমভি ব্রিকস, মশিউর রহমানের মেরি ব্রিকস, আমিনুর রশীদের লুইন ব্রিকস, গাজী ইমরানুল কবিরের টিএম ব্রিকস, ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন এস.বি ব্রিকস এবং জাহিদুল ইসলামের কে.বি ব্রিকস ভদ্রা, হরি, তেলিগাতি ও ঘ্যাংরাইল নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইটভাঁটির শ্রমিকেরা রাতে বস্তার মধ্যে ইটের টুকরো ভরে ভাঁটির সামনে নদীতে ফেলছে। দখল দূষণে নদী মরাগাঙে পরিণত হয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলে পানি না সরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। কালো ধোঁয়ায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কমে যাচ্ছে ফসলের ফলন।
জানা যায়, গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি এইচআরপিবি সংগঠনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ হরি ও ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাঁটি উচ্ছেদের জন্য জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করেন। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে শুনানি শেষে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে ১৪টি ইটভাঁটির মধ্যে সরকারি জায়গায় স্থাপিত সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। কিন্তু তা কার্যকরে নীরব প্রশাসন।

সে কারণে গত ১৩ নভেম্বর পুনরায় রিট করেন তিনি। এতে অবৈধ ইটভাঁটি অপসারণসহ হাইকোর্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, ইউএনও ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিষ্ক্রিয় থাকার কারণ জানতে চেয়েছেন। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান জানান, আদালতের নির্দেশে আমার ইতোমধ্যে এফএমভি নামে একটি ভাঁটি অপসারণ করেছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, ভাঁটিতে কাঠ পোড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আর ইটভাঁটির আইন অনুযায়ী হলফনামায় উল্লেখ করে অনুমতি সাপেক্ষে মজাপুকুর, খাল, বিল এমনকি নদীনালা থেকে মাটি সংগ্রহ করতে পারে। এ ছাড়া অবৈধ ভাঁটিগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

×