ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৩৪টির মধ্যে ২৫টিই অকেজো

মাদারীপুরে অকেজো লকগেট দেখার কেউ নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ২২:৫১, ৭ অক্টোবর ২০২২

মাদারীপুরে অকেজো লকগেট দেখার কেউ নেই

রাজৈর গণউন্নয়ন প্রচেষ্টার সামনে অকেজো লকগেট

 নদ-নদীর জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিকতা রক্ষা আর কৃষিকাজে কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য ব্রিটিশ আমলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লকগেট বা স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। তা থেকে মাদারীপুরও বাদ পড়েনি। এই জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় রয়েছে ৩৪ লকগেট বা স্লুইসগেট। কিন্তু সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না করায় অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে লকগেটগুলো।  কৃষকদের কাজে আসা তো দূরের কথা ইতোমধ্যে ২৫ স্লুইসগেট সম্পূর্ণভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। বাকি ৯টি মেরামতযোগ্য হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় রয়েছে বছরের পর বছর। ফলে কোটি টাকার সম্পদ স্লুইসগেটগুলো নষ্ট হচ্ছে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে জেলায় কৃষিকাজে বছরজুড়ে পানি সরবরাহ করতে মাদারীপুর সদরের মস্তফাপুর এবং সমাদ্দার ও রাজৈর উপজেলার চৌকদার, আমগ্রাম ও রাজৈর গণউন্নয়ন এলাকায় বড় পাঁচটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এরপর স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৮৪ সালে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কালকিনির উত্তর-দক্ষিণ দুই দিকে ছোট-বড় আরও ২৯ স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বড় পাঁচটি স্লুইসগেট পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়েছে। আর কালকিনির ২৯টির মধ্যে কার্যক্রম বন্ধ ২০টি স্লুইসগেটের। বাকি ৯টি কিছুটা মেরামতযোগ্য। মাদারীপুর সদরের স্লুইসগেটটি ‘মস্তফাপুর স্লুইসগেট’ নামে পরিচিত। পরবর্তী সময় এখানকার নদীতে পলি জমে ভিন্ন নৌপথ তৈরি হলে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে স্লুইসগেটটি। এর তিন মুখের কোনটিতেই ডালা নেই। প্রতিটি ডালার মুখ ভাঙ্গা। মুখের অংশগুলো কাটা ও গাছ-গাছালিতে ভরা। তাকালেই বোঝা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে সøুইসগেটটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবোর তদারকির অভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে সøুইসগেটগুলো।
মাদারীপুরে ছোট-বড় মিলে ১৩টি নদ-নদী রয়েছে। এসব নদী থেকে পানি উত্তোলন করে কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। স্লুইসগেট সচল থাকলে সারা বছরই নদীগুলোর পানি ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করছেন প্রান্তিক চাষীরা। রাজৈর উপজেলার আমাগ্রাম এলাকার কৃষক মনোয়ার বয়াতী বলেন, ‘এ গেটে কোন কাজ হয় না। বর্ষার সময় যেমন পানি আসে, তেমনি খরার সময়ও পানি আসে। পানি যে গেট দিয়ে ধরে রাখবে, তার  কোন ব্যবস্থাই নেই। এখন অকেজো হয়ে পড়ায় গেট জঙ্গলে পরিণত হয়ে আছে।’ পাউবো বলছে, নতুন প্রকল্প পেলে মেরামতযোগ্য স্লুইসগেটগুলো সচল করা যাবে। মাদারীপুরে ছোট-বড় ৩৪টি পানিধারক গেট রয়েছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ আমলে তৈরি গেটগুলো সম্পূর্ণ অকেজো। আর যেগুলো পরে নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মাত্র ৯টি মেরামতযোগ্য। উর্ধতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে স্লুইসগেটগুলো পরিদর্শন করে গেছেন। নতুন প্রকল্প অনুমোদন হলে গেটগুলো মেরামত করে সচল করা হবে।’ তবে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়া গেটগুলো নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি কোন কর্মকর্তা। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাউবোর সঙ্গে কথা বলে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষি ও কৃষকদের কথা চিন্তা করে স্লুইসগেটগুলো সচল করতে সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কারও গাফিলতি থাকলে তাও খুঁজে বের করা হবে। আর যেসব জায়গায় পানিপ্রবাহ নেই, সেগুলো প্রয়োজনে ভেঙ্গে ফেলা উচিত হবে।  

 

×