স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ॥ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ভিন্ন আমেজ বইতে শুরু করেছে সিরাজদিখান উপজেলাসহ মুন্সীগঞ্জ জেলার সর্বত্র। শরতের কাশফুলের সাদা শুভ্রতা মনে করিয়ে দেয় বিপদনাশিনী দেবী দুর্গার আগমণী বার্তা। আর সেই শারদীয় উৎসবের অন্যতম দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে এখন মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান উপজেলার প্রতিমা শিল্পীরা। সিরাজদিখান উপজেলায় এ বছর ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়নে ৯৬টি ম-পে দুর্গোৎসব হচ্ছে। ইতোমধ্য উপজেলার অধিকাংশ ম-পের প্রতিমা গড়ার মূল কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলার পূজা মন্ডপগুলো চলছে দূর্গা দেবীকে আকর্ষনীয় গড়ে তোলার ধুম। এরই মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে দেবীর মূল অবয়ব। দুর্গা মন্দিরে রং তুলি আঁচড়ে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা এ উৎসবকে ঘিরে দেবী দূর্গা ও অসুরের রণ যুদ্ধের ঘটনাগুলোর সংক্ষিপ্ত পৌরাণিক কাহিনী মূর্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। শিল্পীর তুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠছে দেবীর রূপ। ফলে এখন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। এখন চলছে প্রতিমা রাঙানোর কাজ। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্গোৎসবে দ্বিগুণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে আয়োজকদের। এরপরও থেমে নেই কোনো আয়োজন। রকমারি আলোক সজ্জার বর্ণালী বাহারে সাজানো হচ্ছে মন্ডপ ও তার আশপাশ। হাতে আর মাত্র আট দিন বাকি। তাই রাত-দিন চলছে সাজসজ্জার ধুম। সবমিলিয়ে উৎসবের রঙে সাজছে রাজধানীর কাছের উপজেলা সিরাজদিখান। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন মণ্ডপে চলছে উৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে কোনো কোনো মণ্ডপে চলছে রঙতুলির কাজ, আবার কোথাও কোথাও চলছে সাজসজ্জা, প্যান্ডেল ও ডেকোরেশনের কাজ। অপরদিকে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সনাতন ধর্মালম্বীরা। ঘরে-বাইরে পূজাকে নিয়ে চলছে চরম ব্যস্ততা। জামা কাপড় তৈরি, কেনাকাটায় সরগরম বিপণিবিতানগুলো। চারপাশে চলছে উৎসবের আমেজ। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৯৬টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে চিত্রকোট ইউনিয়নে ২০টি,শেখরনগর ইউনিযনে ১১টি,রাজানগর ইউনিযনে ১০টি,কেয়াইন ইউনিযনে ১৪টি, বাসাইল ইউনিয়নে ০৪টি,লতব্দী ইউনিয়নে ০৩টি,বয়রাগাদী ইউনিয়নে ০৫টি, রশুনিয়া ইউনিয়নে ০৮টি,মালখানগর ইউনিয়নে ১০টি,ইছাপুরা ইউনিয়নে ০২টি, মধ্যপাড়া ইউনিয়নে ০৩টি,জৈনসার ইউনিয়নে ০৬টি, কোলা ইউনিয়নে ও বালুচর ইউনিয়নে কোন পূজা হচ্ছে না। এ বছর প্রতিমা তৈরিতে দ্বিগুণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানালেন সিরাজদিখানে আবির পাড়া গ্রামের প্রতিমা তৈরির ভাস্কর শিল্পী বাবুল পাল জানান, এ বছর তিনি সিরাজদিখানে ৭টি প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। সহশিল্পী নিয়ে তিনি প্রতিমা শুকানোর পর রঙের কাজ শুরু করেছেন। প্রতিটি প্রতিমা গড়ার জন্য তিনি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর রঙ, মাটিসহ সব জিনিসের দাম ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রাত-দিন পরিশ্রম করেও লাভের মুখ দেখছেন না তারা। শ্রীনগর উপজেলার তন্তর ইউনিয়নের রোজদী গ্রামের মৃৎশিল্পী লক্ষন পাল সিরাজদিখানের ইছাপুরার প্রতিমা বানাতে এসে জানান, বাবা মৃত জয়দেব পালের কাছে প্রতিমা গড়ার হাতেখড়ি। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এই কাজে নিয়োজিত আছেন।
পূজা উদযাপন পরিষদ রশুনিয়া ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ডাঃ রনবীর ঘোষ বলেন,মুৎশিল্পীদের সুনিপুন হাতে গড়া প্রতিমাতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে মর্তলোকে মায়ের বাড়ীতে দুর্গা দেবীর আগমন হবে। ৭ অক্টোবর শুক্রবার মহাষষ্ঠী, ৮ অক্টোবর শনিবার মহাসপ্তমী, ৯ অক্টোবর রবিবার মহাঅস্টমী, ১০ অক্টোবর সোমবার নবমী পূজা সমাপন হবে। ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার দশমী বিহিতপূজা শেষে দেবী মর্তলোক ছেড়ে স্বর্গলোকে শিবের বাড়ী ফিরে যাবেন। মুন্সীগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি এডভোকেট সমরেশ নাথ বলেন, দুর্গাপূজা পরিচালনার লক্ষ্যে সরকার থেকে কিছু অনুদান আমরা পেয়ে থাকি। তবে তা অতি সামান্য। এ বছর আমরা সরকারের কাছে অনুদান বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছি। তিনি আরো বলেন, এবার কোন অপৃতিকর ঘটনা না ঘটার লক্ষে প্রতিটি ম-পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় পূজা কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবককর্মী নিয়োগ করা হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব পালনের লক্ষ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জেনেছেন, জানান তিনি।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, পূজার দিনগুলোতে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। থাকছে র্যােবের বাড়তি টহল। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে সহযোগিতা দেবে আনসার-ভিডিপি। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি পূজার দিনগুলোতে নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।