ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে সিটি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ০১:১৯, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

গাজীপুরে সিটি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে সিটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ওই মেডিকেল কলেজ থেকে অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের দাবিতে এবং কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের প্রতিবাদে রবিবার ক্লাশ বর্জন, বিক্ষোভ, সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। এসময় তারা আগুন জ্বালিয়ে প্রায় একঘন্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন ইটাহাটা এলাকাস্থিত সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ব্যাচের শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজ মাইগ্রেশনের দাবিতে এবং কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের প্রতিবাদে রবিবার সকাল হতে ক্লাশ বর্জন শুরু করে। এসময় তারা বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনসহ কলেজের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা বেলা ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে বের হয়ে কলেজের সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়কের উপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। প্রায় একঘন্টা ব্যাপী অবরোধের কারণে যানবাহন আটকা পড়ে মহাসড়কের উভয়দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সড়কের উপর থেকে আন্দোলনরতদের সরিয়ে দিলে দুপুর একটার দিকে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পরে শিক্ষাথীরা বিকেল পর্যন্ত অধ্যক্ষ কার্যালয় ভবনের সামনে অবস্থান করে। সিটি মেডিক্যল কলেজের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নূর, প্রথমা মোদক ও চতুর্থ বর্ষের আশিকুর রহমানসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন ইটাহাটা এলাকাস্থিত সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিবিএস কোর্সে ভর্তি হয়। এ কলেজের নিজস্ব কোন ভবন, জমি ও ক্যাম্পাস নেই। এছাড়া হাসপাতালের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীও নেই। এ মেডিকেল কলেজে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষকও নেই। বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নীতিমালা মেনে না চলার কারণে ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম এবং বিএমডিসির অনুমোদন স্থগিত করা হয় এবং সকল শর্ত পূরণ করার জন্য এক বছর সময় দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত এসময়ের মধ্যেও কলেজ কর্তৃপক্ষ সরকারি শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ফলে, ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবন নিয়ে অনিশ্চিয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অনুমোদনহীন মেডিকেল কলেজে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে অনিচ্ছুক। এরপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা বিএমডিসি কর্তৃক অনুমোদিত মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করার জন্য দাবী জানায়। কলেজের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নূর, চতুর্থ বর্ষের আশিকুর রহমান এবং তৃতীয় বর্ষের জাহিন খান জানায়, এ কলেজে নেপাল ও ভারতের অন্তত ২৭জন শিক্ষার্থীসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। ওই তিন ব্যাচের অনুমোদন ও রেজিস্ট্রেশনের শর্তপূরণের জন্য কলেজের অধ্যক্ষ, চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিভিন্ন সময় তাগিদ দিলেও তারা এ ব্যাপারে কোন সাড়া দেয় নি। কলেজ কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, দূর্নীতি আর অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যায়ে এসে এখন চরম অনিশ্চিয়তায় পড়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা ও অসন্তোষ দেখা দেয়। তাদের দাবি ওই তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করতে না পারলে তাদের অন্য কোন অনুমোদিত কলেজে তাদের মাইগ্রেশনের সুযোগ করে দেয়া হউক। পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রথমা মোদক জানান, আমাদের বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন নেই। বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া আমরা কোথাও প্র্যাকটিস করতে পারবোনা। প্রথম দুই ব্যাচের অনুমোদন থাকলেও পরের ব্যাচগুলোতে আর অনুমোদন দেয়া হয়নি। যেখানে দেশের শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন নেই সেখানে তারা ভারত ও নেপালসহ বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করিয়েছে। আমরা চাই আমাদের মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করা হোক। আমরা একাধিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনুমোদন দেন তাহলে আমরা মাইগ্রেশন নিয়ে অন্য মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারব। সিটি মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এমদাদুল হক নয়ন ও তৃতীয় বর্ষের মাহবুবা মাঈশা জানান, শিক্ষার্থীরা প্রায় ১৬ লাখ টাকা দিয়ে এ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তারা প্রতিবছর সেশন ফি বাবদ ৭২ হাজার টাকা এবং প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা করে বেতন দিচ্ছেন। আর অন্যান্য ফি তো রয়েছেই। অথচ কলেজ কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, দূর্নীতি আর অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যায়ে এসে এখন চরম অনিশ্চিয়তায় পড়েছে। এব্যপারে ওই মেডিক্যল কলেজের পরিচালক হায়াতুল ইসলাম আহাদ বলেন, বিএমডিসি এ কলেজ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দুই বছর ছাড়া অন্য শিক্ষাবর্ষের জন্য অনুমোদন না দিলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৩-২০১৪ এবং ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিয়েছে। তবে নিজস্ব ভবন না থাকাসহ কিছু শর্ত পূরণ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ কলেজসহ দেশের ৯টি মেডিক্যাল কলেজের গত বছরের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জনের শর্তপূরণ করা হলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের লক্ষ্যে ওইসব কলেজসমূহ পূনঃপরিদর্শণ করে রিপোর্ট দাখিলের জন্য গত ২৬ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠণ করে। সরেজমিন পরিদর্শণ করে কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি ওই কমিটি এ মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনের পর শীঘ্রই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এ কলেজে ভারতের ৭জন ও নেপালের ২০জনসহ প্রায় সাড়ে তিনশ’ শিক্ষার্থী রয়েছে।
×