ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

১২৭ বছর দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৮ জুন ২০১৬

১২৭ বছর দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়

নেত্রকোনা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়। নেত্রকোনার সবচেয়ে প্রাচীন বিদ্যাপীঠ। জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘেঁষে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি এক শ’ ২৭ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। অতীতের ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানটি আজও ধরে রেখেছে তার ঐতিহ্য ও সুনাম। ১৮৮৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহত্তর ময়মনসিংহের অন্যতম মহকুমা শহর নেত্রকোনায় প্রথম মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহের তৎকালীন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক রমেশ চন্দ্র দত্ত এ বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। তাঁর উপাধি অনুসারেই প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় ‘দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়’। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সাফল্যের নানা স্বাক্ষর রেখে আসছে দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার মাত্র ৬ বছরের মাথায় ১৮৯৫ সালে এ বিদ্যালয়ের ছাত্র আনন্দ চন্দ্র মজুমদার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এন্ট্রাস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় তৃতীয় এবং এর পাঁচ বছর পর ১৯০০ সালে রাজেন্দ্র কুমার দত্ত নবম স্থান অধিকার করেন। তাদের কৃতিত্বের কারণে তখনকার সময়েই প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বিশ শতকের ত্রিশের দশকে নেত্রকোনায় নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়। ওই সময়ে নেত্রকোনা মহকুমা শহরে তিনটি উচ্চ বিদ্যালয় থাকলেও মেয়েদের কোন উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান রেক্টর জ্ঞানেশ রঞ্জন রায় ১৯৩৩ সালে মাত্র আট নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে সপ্তম শ্রেণীর পৃথক শাখা চালু করেন। ১৯৩৭ সালে ওই আটজনই প্রবেশিকা পাস করে। অখ- বাংলাদেশে শান্তিনিকেতনের বাইরে প্রথম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন পালন করেও আরেক ইতিহাসের জন্ম দেয় দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৩০ সালে রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ শৈলজারঞ্জন মজুমদার। খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামেও দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য। এক সময় দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ই ছিল নেত্রকোনায় ছাত্র আন্দোলন এবং সংস্কৃতি চর্চার প্রাণ কেন্দ্র। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান শিক্ষক শাহজাহান কবীর সাজু জানান, শত বছরেরও বেশি প্রাচীন বিদ্যাপীঠে (প্রাথমিক শাখাসহ) বর্তমানে দুই হাজার চার শ’ ৯৮ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। অবকাঠামোগতভাবে বিদ্যালয়টি এখন অনেক উন্নত। রয়েছে বিশাল দ্বিতল ভবন। বড় ক্যাম্পাস। সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। বিশাল খেলার মাঠ। শুধু প্রাচীন বলেই নয়, সব দিক থেকেই দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় একটু আলাদা, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যম-িত। -সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে

আরো পড়ুন  

×