ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেড়েই চলেছে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার, বাংলাদেশে এত বেশি বজ্রপাত কেন হচ্ছে?

প্রকাশিত: ১৯:১২, ২১ মে ২০২৫

বেড়েই চলেছে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার, বাংলাদেশে এত বেশি বজ্রপাত কেন হচ্ছে?

ছবি: সংগৃহীত

ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি বাংলাদেশে এখন আরেকটি নতুন উদ্বেগের নাম হচ্ছে বজ্রপাত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। মাঠে কাজ করা কৃষক থেকে শুরু করে শহরের সাধারণ পথচারী—কেউই আজ এই দুর্যোগ থেকে নিরাপদ নন।

আবহাওয়াবিদদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ভৌগলিক অবস্থান বজ্রপাতের মূল কারণ। বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর থেকে আসা গরম ও আর্দ্র বাতাসের সঙ্গে হিমালয় থেকে নামা ঠান্ডা বাতাসের সংঘাতে বজ্রঘন মেঘ তৈরি হয়। এই ঘর্ষণ থেকেই সৃষ্টি হয় বজ্রপাত।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, উষ্ণতা যত বাড়ে, বজ্রপাতের ঝুঁকিও তত বেড়ে যায়। এমনকি তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লেও বজ্রপাতের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি বায়ু দূষণের প্রভাবও এই দুর্যোগকে আরও তীব্র করে তুলছে।

২০১৬ সালে বজ্রপাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেই বছরের রেকর্ড বলছে, বজ্রপাতে মৃত্যুর হার এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সরকার এটিকে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতোই গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়।

বিশ্বে প্রতি মিনিটে কয়েক লক্ষ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাতেও বজ্রপাত সাধারণ ঘটনা, তবে বাংলাদেশে মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে বেশি। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সচেতনতার অভাব।

বজ্রপাতের সময় নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ, খোলা জায়গা এড়ানো এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার বিষয়ে এখনও পর্যাপ্ত জনসচেতনতা গড়ে ওঠেনি। হাওড়াঞ্চল বা খোলা মাঠে কাজ করতে থাকা মানুষ বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

একইসাথে, দেশে বড় বড় গাছ কেটে ফেলার প্রবণতাও মাটিতে সরাসরি বজ্রপাতের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। কারণ গাছ বজ্রপাতের শক্তি শোষণ করে প্রাণহানির ঝুঁকি কমায়।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বজ্রাঘাতে আহত ব্যক্তির দেহে বিদ্যুৎ থাকে না, তাই তাকে স্পর্শ করতেও কোনো সমস্যা নেই। সময়মতো চিকিৎসা পেলে অনেককে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব।

আবহাওয়াবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বজ্রপাত শুরু হলে বা ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে। শুধুমাত্র সচেতনতা এবং সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমেই এই প্রাণঘাতী দুর্যোগ থেকে নিজেকে ও অন্যদের রক্ষা করা সম্ভব।

আসিফ

×