ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

একাদশে ফিরেই ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন মেহেদী

প্রকাশিত: ০৮:০২, ১৭ জুলাই ২০২৫

একাদশে ফিরেই ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন মেহেদী

ছবি: সংগৃহীত

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচসেরা হয়েছেন মেহেদী হাসান, যা প্রথম দুই ম্যাচে একাদশ থেকে তার বাদ পড়ার জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে। টি-টোয়েন্টিতে আঁটসাঁট বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিং–সামর্থ্যের কারণে মেহেদী হাসান সব সময়ই নির্বাচকদের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে থাকেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে মেহেদী হাসান মিরাজকে জায়গা দিতে তিনি একাদশ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। আগের সিরিজের সহ-অধিনায়ক মেহেদী কেন সুযোগ পাননি, সেই প্রশ্ন তখন বিভিন্ন মহল থেকে উঠছিল।

সেই প্রশ্নের যথার্থতা প্রমাণের দায়িত্বটা ছিল মেহেদী হাসানের কাঁধেই, এবং তিনি তা করলেন সম্ভাব্য সেরা উপায়ে। ক্যারিয়ার আর টি–টোয়েন্টি সংস্করণে দেশের সেরা বোলিংয়ের চেয়ে একজন বোলার আর বাড়তি কীই–বা করতে পারেন! শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারানোর পর ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে মেহেদীর হাতে। এরপর নিজের 'উত্তর' দেওয়ার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, "ওয়ানডের সময় দেখেছি, এখানে বল স্পিন করে। আমি চেষ্টা করেছি ভালো লাইন–লেন্থে করার। নতুন বল কিছুটা ঘুরেছে, আমি কেবল চেয়েছি ভালো জায়গায় রাখতে।"

টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামার পর প্রথম ওভারে শরীফুল ইসলাম উইকেট পেয়েছিলেন বটে, কিন্তু শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা ছিলেন মারমুখী। তাদের লাগাম টেনে ধরতে পরের ওভারটা যেমন করা দরকার, মেহেদী করেছেন তেমনই। ৭ রান দেওয়া ওই ওভারেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন কুশল পেরেরা। গতির সঙ্গে হালকা টার্নে মেহেদীর ভয়ংকর রূপের শুরু সেখান থেকেই। পাওয়ারপ্লের ভেতরই মেহেদীর ডাক পড়ে আবার। এবারও তিনি হতাশ করেননি। তার ঝুলিয়ে দেওয়া বলে চান্ডিমাল ক্যাচ দেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো জাকের আলীর হাতে। মাঝে কয়েক ওভারের বিরতি দিয়ে বোলিংয়ে আসা মেহেদী উইকেট নেওয়ায় বিরতি দেননি। অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়ে আবারও মেহেদীর ম্যাজিক—অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে ফেলে ভেতরে ঢোকানো বলে ভেঙে যায় আসালাঙ্কার রক্ষণ, এলোমেলো হয় স্টাম্প। শুরুর এই ৩ ওভারই মেহেদীর ফেরাকে রাঙানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।

কিন্তু মেহেদী আরও ভয়ংকর হন নিজের স্পেলের শেষ ওভারে। যখন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার একটু একটু আশা দেখতে শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা, তখন এমন এক ওভার করেছেন, তাতে শ্রীলঙ্কার ইনিংস ধাক্কা খায় আরও একবার। উইকেট হারানোর এই মিছিলেও শ্রীলঙ্কার জন্য এক প্রান্তে ভরসা ছিলেন পাতুম নিশাঙ্কা। তৃতীয় বলে সেই নিশাঙ্কার ক্যাচ নিজেই নেন মেহেদী। পুরো ওভারে দেননি ১ রানও, শেষ ওভারটি ছিল উইকেট মেডেন! ৪ ওভারের স্পেলে ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেওয়া মেহেদীর এটাই ক্যারিয়ার–সেরা বোলিং। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়েই নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন মেহেদী। এই সংস্করণকে 'আপন' করেই এগিয়েছেন ক্যারিয়ার। শুরু কিংবা শেষ—বোলিংয়ে এসেছেন অধিনায়কের যখন প্রয়োজন, সঙ্গে ব্যাটিংটা তো পারেনই। মাঠে চনমনে ভাবে সব সময় থাকে একটা টি-টোয়েন্টি মেজাজও। তবু মেহেদীকে বসিয়ে মিরাজ কেন খেললেন? একটা উত্তর হতে পারে, ওয়ানডে অধিনায়ককে টি-টোয়েন্টিতে বসিয়ে রাখতে না চাওয়া। যে কারণে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাসকে ওয়ানডেতে সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন নির্বাচকেরা। প্রথম দুই ম্যাচে মিরাজের যা পারফরম্যান্স, এ ছাড়া ভালো ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগও তেমন নেই। মেহেদীকে না খেলানো নিয়ে প্রশ্নটা তাই উঠছিলই। সেটি যে অকারণে নয়, তা লাইন-লেংথের সঙ্গে গতিতে 'অফ স্পিনার মাস্টারক্লাস' বোলিংয়ে কাল প্রমাণ করে দিয়েছেন মেহেদী। এমনিতে বোলার হিসেবে মেহেদী যে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে মিরাজের চেয়ে ভালো, তা একরকম স্বীকৃতই হয়ে গেছে তার সাত বছরের ক্যারিয়ারে। গতকালের পারফরম্যান্সে মেহেদী হয়তো বার্তা দিয়ে রাখলেন ভবিষ্যতের জন্যও।

সাব্বির

×