ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

ট্রিপল সেঞ্চুরিতে মুল্ডারের বিশ্বরেকর্ড

ফয়সাল আহমেদ

প্রকাশিত: ০১:১৭, ৮ জুলাই ২০২৫

ট্রিপল সেঞ্চুরিতে মুল্ডারের বিশ্বরেকর্ড

বুলাওয়ে টেস্টে অপরাজিত ৩৬৭ রানের অবিস্মরণীয় এক ইনিংস খেলেছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক

টেস্ট নেতৃত্বের অভিষেকে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার উইয়ান মুল্ডার। সোমবার বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে এই কীর্তি গড়েন তিনি। তানাকা চিভাঙ্গার লো ফুল টস লেগ সাইডে খেলে এক রান নিয়ে মাইলফলক স্পর্শ করলেন ভিয়ান মুল্ডার। হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে তার উদ্যাপনটা হলো সাদামাটা। তবে কীর্তি গড়লেন অনেক বড়।

ওই একটি রানই টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসের পাতায় প্রথম হিসেবে নাম লেখালেন এই প্রোটিয়া অধিনায়ক। তবে ব্রায়ান লারার করা ৪০০ রান টপকানোর সুযোগ ছিল মুল্ডারের সামনে। কিন্তু তার আগেই ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন এই কাপ্তান। ৩৩৪ বল খরচায় অপরাজিত ৩৬৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ১০৯ দশমিক ৮৮ স্ট্রাইকরেটে চারটি ছক্কা ও ৪৯টি চারের মারে ইনিংসটি সাজিয়েছেন।
টেস্ট নেতৃত্বের অভিষেকে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড ম্যাচের প্রথম দিনই গড়েন মুল্ডার। ১৯৬৮ সালে ভারতের বিপক্ষে ২৩৯ রান করে আগের রেকর্ডটি গড়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের গ্রাহাম ডাউলিং। ২৬৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিং শুরু করে মুল্ডার ট্রিপল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ২৯৭ বলে। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরি এটি।

২০০৮ সালে চেন্নাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭৮ বলে ট্রিপল সেঞ্চুরি করা রেকর্ডটি ভারতের বিরেন্দর শেবাগের। এই দুজন ছাড়া তিনশ’র কম বলে ট্রিপল সেঞ্চুরি নেই আর কারও। ২০২৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মুলতান টেস্টে ৩১০ বলে তিনশ’ ছুঁয়ে এই তালিকায় তিন নম্বরে আছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুক।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম অধিনায়ক ও দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন মুল্ডার। ২০০৩ সালে এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রায়েম স্মিথের ২৭৭ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়কদের মধ্যে আগের সর্বোচ্চ ইনিংস। ২০১২ সালে দা ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাশিম আমলার অপরাজিত ৩১১ ছাড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডও এখন মুল্ডারের।

৩১১ থেকে ব্লে সিং মুজারাবানিকে চার মেরে নতুন চূড়ায় পা রাখেন ২৭ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। এই টেস্টে মুল্ডার অধিনায়কত্ব পান হঠাৎ করেই। মূল অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার চোটে জিম্বাবুয়ে সফরে প্রথমে নেতৃত্ব পেয়েছিলেন কেশভ মহারাজ। প্রথম টেস্টের পর তিনিও চোট নিয়ে ছিটকে পড়ায় দায়িত্ব পড়ে মুল্ডারের কাঁধে।
এর আগে স্বীকৃত ক্রিকেটে তার নেতৃত্বের একমাত্র অভিজ্ঞতা ছিল ২০২২ সালে ইংল্যান্ডে রয়্যাল লন্ডন ওয়ানডে কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে কেন্টের বিপক্ষে লেস্টারশায়ারের অধিনায়কত্ব করা। সেই তিনিই অসাধারণ ব্যাটিংয়ে রেকর্ডময় ইনিংসে রাঙালেন নিজেকে। সুযোগ থাকলেও যেন লারার রেকর্ড ভাঙার চেষ্টাই করলেন না মুল্ডার। অপরাজিত ৩৬৭ রানে লাঞ্চে গেলেন মুল্ডার। গোটা পৃথিবী তখন দ্বিতীয় সেশনে তার বিশ্ব রেকর্ড দেখার অপেক্ষায়। 
কিন্তু অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্যাটিংয়ে নামেনি! দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫ উইকেটে ৬২৬ রানে রেখে এবং নিজে ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন অধিনায়ক মুল্ডার!
মুল্ডার কিন্তু পারতেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস খেলে থামতে। মানে ম্যাথু হেইডেনের ৩৮০ রান পেরিয়ে লারাকে সামনে রেখে থামতে পারতেন। তিনি সেটাও করেননি। তাহলে কেন এ সিদ্ধান্ত? দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ডেভিড বেকিংহ্যাম ৮২, লুয়ান ড্রে প্রিটোরিয়াস ৭৮ ও ডিওয়াল্ড ব্রেভিস ৩০ রানের ইনিংস খেলেছেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে তানাকা চিভাঙ্গা ও কুন্দাই মাটিগিমু সর্বোচ্চ দুটি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়া ওয়েলিংটন মাসাকাদজা একটি উইকেট নেন।

প্যানেল হু

×