ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

ট্রাম্পের হুমকি কি পুতিনকে ইউক্রেন শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করতে পারবে?

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১৭ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্পের হুমকি কি পুতিনকে ইউক্রেন শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করতে পারবে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আগামী ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে কোনও শান্তিচুক্তি না হলে রাশিয়ার ওপর “অত্যন্ত কঠোর শুল্ক” আরোপ করা হবে।

তিনি ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সরবরাহের একটি নতুন চুক্তিও ঘোষণা করেছেন।

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি অফিসে প্রবেশের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন।

তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে অন্তত ছয়বার ফোনালাপ এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পরও কোনও যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি।

মে মাসে পুতিন শান্তি আলোচনার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ইস্তাম্বুলে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানান। এর পরিবর্তে উভয় দেশই প্রতিনিধিদল পাঠায়, যার ফলে কেবল বন্দি বিনিময় চুক্তি হয়।

সোমবার হোয়াইট হাউজে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে সাক্ষাতে ট্রাম্প বলেন, তিনি পুতিনের ওপর “হতাশ” এবং ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র পাবে।

ট্রাম্প বলেন, “আমরা অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করব, এবং তা ন্যাটোর কাছে পাঠানো হবে।” তিনি আরও বলেন, এর খরচ ন্যাটো বহন করবে। এর মধ্যে ইউক্রেনের বহু প্রতীক্ষিত প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা মিসাইলও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

ট্রাম্প জানান, “একটি দেশে ১৭টি প্যাট্রিয়ট পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে... আমরা এমন একটি চুক্তি করব, যাতে এই ১৭টি কিংবা তার বড় একটি অংশ যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো যায়।” 

ট্রাম্প বলেন, যদি পুতিন সোমবার থেকে ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে সম্মত না হন, তাহলে রাশিয়ার ওপর “খুবই কঠোর” শুল্ক আরোপ করা হবে, পাশাপাশি অন্যান্য দেশের ওপরও পার্শ্বশুল্ক (secondary tariffs) বসানো হবে।

তিনি বলেন, “আমরা পার্শ্বশুল্ক দিচ্ছি। যদি ৫০ দিনের মধ্যে চুক্তি না হয়, তাহলে ব্যাপারটা একেবারে সহজ— ওদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক বসবে।”

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ২১,৬৯২টি ব্যক্তি, গণমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যার মধ্যে সামরিক, জ্বালানি, বিমান, জাহাজ ও টেলিকম খাত অন্তর্ভুক্ত।

যদিও রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে সীমিত ।

ট্রাম্পের সর্বশেষ হুমকিতে পুতি ন নিজে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। এর কিছু তো প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সরাসরি লক্ষ্য করে বলা হয়েছে। আমরা অবশ্যই ওয়াশিংটনে কী বলা হয়েছে তা বিশ্লেষণের জন্য সময় নেব।”

পেসকভ আরও বলেন, “ওয়াশিংটন ও অন্যান্য ন্যাটো দেশের সিদ্ধান্তগুলো ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যুদ্ধ বন্ধের বার্তা হিসেবে নয়, বরং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হয়।”

সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের উপ-চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “ট্রাম্পের এই নাটকীয় আলটিমেটাম রাশিয়ার গায়ে লাগবে না।”

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ মঙ্গলবার রুশ বার্তা সংস্থা তাস-কে বলেন, “আমরা প্রথমেই জানিয়ে দিচ্ছি— কোনও ধরণের দাবি, বিশেষ করে আলটিমেটাম, আমাদের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়ার শেয়ারবাজারে প্রভাব পড়েনি। মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যমতে, সোমবার রাশিয়ার বাজার ২.৭ শতাংশ বেড়েছে।

রুশ রুবল দিনের শুরুতে ডলারের বিপরীতে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লেও পরে তা ঘুরে দাঁড়ায়। দিন শেষে রুবল ছিল ডলারের বিপরীতে মাত্র ০.২ শতাংশ দুর্বল, ৭৮.১০ হার ধরে, যদিও শুরুতে তা ৭৮.৭৫-এ নেমে গিয়েছিল।

রুবল চীনা ইউয়ানের বিপরীতে ০.৯ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পায়, যেখানে শুক্রবার তা ১ শতাংশের বেশি দুর্বল হয়েছিল।

ট্রাম্পের হুমকি কি পুতিনের নীতিতে পরিবর্তন আনবে?

পুতিন বারবার তার যুদ্ধ-লক্ষ্য পূরণের সংকল্প জানালেও, তিনি সেগুলো নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেননি। সাধারণভাবে তার লক্ষ্য ইউক্রেনে ভূখণ্ড দখল এবং ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানে বাধা দেওয়া— যা এখনও অপরিবর্তিত।

“রাশিয়ার কৌশল যদি ব্যাখ্যা করতে হয়, তাহলে সেটা হলো— ‘শান্ত থাকো, চালিয়ে যাও’,” বলেন মিরন। তিনি জানান, রাশিয়ার বেশিরভাগ কর্মকর্তাই ট্রাম্পের মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া দেখাননি।

“তারা এই প্ররোচনামূলক তথ্য যুদ্ধের ফাঁদে পা দিচ্ছে না,” বলেন তিনি।

 

 

সানজানা

×