ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাদা-কালো মোহামেডানের রঙিন উৎসব

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ২৪ মে ২০২৫

সাদা-কালো মোহামেডানের রঙিন উৎসব

আরাধ্য পেশাদার লিগের শিরোপা নিয়ে মোহামেডানের খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তাদের বাঁধভাঙা উল্লাস, শুক্রবার কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে

প্রায় দুই যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব শিরোপা নিশ্চিত করেছিল আগেই। ফলে লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে ছিল ঢিলেঢালা ভাব। রহমতগঞ্জের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের পর শুক্রবার ব্রাদার্সের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করে তারা। তবে ম্যাচ শেষে দর্শকদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে গলায় পদক ঝুলিয়ে হাতে ট্রফি নিয়ে চ্যাম্পিয়নদের উল্লাস ছিল চোখে পড়ার মতো। উড়েছে কনফেত্তিও। কুমিল্লায় নিজেদের হোম ভেন্যুতে উদ্যাপনের সকল প্রস্তুতিই  নিয়ে রেখেছিল সাদা-কালো শিবির।

নতুন টি শার্ট পরেছিলেন ফুটবলার ও কোচ। যেখানে লেখা ছিল ‘উই আর দ্য চ্যাম্পিয়ন’। ১৯৫৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেতা শিরোপার সালও লেখা ছিল টি শার্টে। সাদা কালো পতাকা হাতে ইমানুয়েল-দিয়াবাতেসহ অন্যরা ছুটে যান গ্যালারির সামনে। সেখানে সমর্থকরা স্মোক ফ্লেয়ার নিয়ে উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। ধর্মসাগর তীরে দেশের পেশাদার ফুটবল লিগে নতুন চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানকে নিয়ে সমর্থকরাও দিনটি স্মরণীয় করে রাখে। 
এরপর রাতে ঢাকায় ফিরে মাতিঝিলে মোহামেডান ক্লাব প্রাঙ্গণে আরেক দফা উদ্যাপনে মাতেন খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। যেখানে ছিলেন ক্লাবটির পরিচালক ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। উল্লেখ্য, এবার তিন ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিশ্চিত করে মোহামেডান। এদিকে দিনের অন্য ম্যাচে ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ২-১ গোলে ঢাকা ওয়ান্ডারার্সকে হারিয়ে তাদের অবনমন নিশ্চিত করেছে। ব্রাদার্সের বিপক্ষে এই ম্যাচে মোহামেডানের ৩ গোলের দুটি করেছেন অধিনায়ক সোলেমান দিয়াবাতে। আরেক গোল করেছেন মেহেদি হাসান মিঠু। ব্রাদার্সের হয়ে গোল করেছেন সেনেগালের দিয়ারা, নাইজিরিয়ান এমফন সানডে এবং স্থানীয় জুয়েল রানা।

এই ড্রয়ে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়াল ৩৯ এবং ব্রাদার্সের ২৭। মাঠে মোহামেডানের অধিনায়ক  সোলেমান দিয়াবাতের হাতে ট্রফি তুলে দেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান ও সদস্য জাকির হোসেন চৌধুরী। এদিকে ম্যাচের ৪৩ মিনিটে অবসরে যান ব্রাদার্সের গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম রানা। এই ম্যাচের মধ্য দিয়েই ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন তেকাঠির নিচে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় থাকা জাতীয় দলের সাবেক এই গোলকিপার। ম্যাচের বিরতিতে রানার হাতে বিদায়ী ক্রেস্ট তুলে দেন মোহামেডানের গোলকিপিং কোচ ছাইদ হাছান কানন, বাফুফের জাকির হোসেন চৌধুরী, ব্রাদার্স ইউনিয়নের ম্যানেজার আমের খান এবং ঢাকা আবাহনীর নজরুল ইসলাম। সর্বোপরি স্মরণীয় এক সাফল্যের সঙ্গী হয়েছেন সবাই।
২০০৭ সালে পেশাদার লিগ নামকরণের পর এই শিরোপার হাহাকার ছিল মোহামেডানের। অবশেষে সে অপেক্ষার পালা ফুরাল তাদের। শীর্ষ লিগ হিসেবে ২০০২ সালের পর প্রথম এই ট্রফির স্বাদ পেল সাদা-কালো জার্সিধারীরা। গত মৌসুমেও লিগ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল মোহামেডান; কিন্তু পূর্ণতা দিতে পারেনি। টেবিলে কিংসের পরে অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানে থেকে তারা শেষ করেছিল আসর। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ভালোবাসার আরেক নাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকের ভালোবাসার ক্লাব এটি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ঘরোয়া ফুটবলের প্রধান আসর পেশাদার লিগে সাফল্যের হাসি হাসতে পারছিল না বিখ্যাত সাদা-কালো জার্সিধারীরা।

অন্য আসরে কিছুটা সাফল্য এলেও লিগ যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়। সেই আক্ষেপটা এবারের ২০২৪-২৫ মৌসুমে ঘুচিয়েছে দর্শকনন্দিত মোহামেডান। অবশেষে ধরা দিয়েছে কাক্সিক্ষত ট্রফি। লিগে নিজেদের তিন ম্যাচ বাকি থাকতেই অন্যদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে মতিঝিলপাড়ার ক্লাবটি।  চাতক পক্ষীর মতো অপেক্ষা করে দীর্ঘদিনের সাধনা সফল হওয়ার পর মোহামেডানের তাঁবুতে চলছে বাঁধভাঙা আনন্দ-উৎসব। শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর দুটি ম্যাচ ভালো যায়নি, কিন্তু থামেনি সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। শুক্রবার সেই উৎসব যেন বাঁধ ভাঙে।  
মোহামেডানের এমন সাফল্যের প্রধান দুই কারিগর কোচ আলফাজ আহমেদ ও অধিনায়ক  সোলেমান দিয়াবাতে। মাঠের বাইরে থেকে মোহামেডানের ঘরের ছেলে আলফাজ দলকে গেঁথেছেন এক সুতোয়। আর মাঠে নিজে সামনে থেকে পারফর্ম করে নেতৃত্ব দিয়েছেন মালির তারকা দিয়াবাতে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই মোহামেডানকে একাই টেনে নিয়ে গেছেন তিনি।

×