ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যে সুসংবাদ দিলো জাপান! 

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২৪ মে ২০২৫

বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যে সুসংবাদ দিলো জাপান! 

ছবিঃ সংগৃহীত

জাপান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে ২০২৫ সাল থেকে শিক্ষার্থী ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি, স্কলারশিপের সংখ্যা বাড়ানো এবং ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালিত ডিগ্রি প্রোগ্রামের পরিসর সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে।

এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ২০৩৩ সালের মধ্যে ৪ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করা। ইতিমধ্যে জাপান এই পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে—২০১০ সালে যেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২,২৮,০০০, সেখানে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,১২,০০০।

ভিসা প্রক্রিয়ায় সহজীকরণ
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়ায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেকটাই কমানো হবে। যদিও পাসপোর্ট, যোগ্যতার সনদ, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং শিক্ষাগত সনদের মতো প্রাথমিক নথি জমা দেওয়ার নিয়ম অপরিবর্তিত থাকবে, তথাপি পুরো প্রক্রিয়াটি হবে আরও দ্রুত ও সহজ।

জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, “এটি শুধু একটি রিক্রুটমেন্ট উদ্যোগ নয়, বরং একটি বৈশ্বিক একাডেমিক কমিউনিটি গঠনের অংশ।”

স্কলারশিপ ও ইংরেজি ডিগ্রি প্রোগ্রামের প্রসার
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ বাড়াতে সরকার নতুন নতুন স্কলারশিপ চালু করছে এবং ইংরেজি মাধ্যমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, যাতে ভাষাগত সীমাবদ্ধতা আর বাধা না হয়।

‘গ্লোবাল ৩০’ ও ‘টপ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি প্রকল্প’-এর মতো প্রকল্পগুলো এরই মধ্যে জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিকীকরণে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই প্রকল্পগুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের আনা ছাড়াও আন্তর্জাতিক শিক্ষকদের নিয়োগে উৎসাহ জুগিয়েছে।

পড়াশোনার পরে চাকরির সুযোগ
পড়াশোনার পরে জাপানে থাকার পথও সহজ করা হচ্ছে। স্নাতক ডিগ্রিধারীরা এখন ‘ডেজিগনেটেড একটিভিটিস ভিসা’-এর মাধ্যমে এক বছর পর্যন্ত জাপানে থাকতে পারবেন চাকরি খোঁজার জন্য। চাকরি পেয়ে গেলে, তারা সহজেই ‘ইঞ্জিনিয়ার’, ‘স্পেশালিস্ট ইন হিউম্যানিটিস’, বা ‘ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস’-এর মতো ক্যাটাগরির অধীনে সাধারণ ওয়ার্ক ভিসায় রূপান্তরিত হতে পারবেন।

সরকার বিশেষভাবে আগ্রহী তথ্যপ্রযুক্তি, রোবটিক্স, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাখাতে জনবলের ঘাটতি পূরণে।

সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও অর্থনৈতিক সহায়তা
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হোমস্টে প্রোগ্রাম, স্টুডেন্ট ক্লাব ও উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জাপানি সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সময় আংশিককালীন চাকরির সুযোগও পাচ্ছেন, যা অর্থনৈতিক সহায়তা এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের পথ খুলে দিচ্ছে।

বিশ্বে অন্য জায়গায় কঠোরতা, জাপানে উন্মুক্ততা
যখন বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর কঠোরতা আরোপ করা হচ্ছে, তখন জাপান তার দরজা আরও বেশি করে খুলে দিচ্ছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রবেশে কঠোরতা এসেছে, এমন সময়ে জাপানের এই উন্মুক্ত নীতি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কার্যকর বিকল্প হয়ে উঠছে।

২০২৫ সাল থেকে কার্যকর এই পরিবর্তনগুলো জাপানকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। শিক্ষার গুণগত মান, তুলনামূলক কম খরচ, সংস্কৃতির গভীরতা এবং চাকরির সুযোগ—সব মিলিয়ে জাপান বৈশ্বিক উচ্চশিক্ষার নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে যাচ্ছে।

নোভা

×