
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে খ্যাত জাপান আজ এক ভয়াবহ জনসংখ্যা সংকটের মুখোমুখি। দীর্ঘদিন ধরে চলমান জন্মহারের নিম্নগতি এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর দ্রুত বৃদ্ধির কারণে দেশটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একে শুধু একটি সংকট হিসেবে নয়, বরং একটি জাতির অস্তিত্বের ভবিষ্যৎ হুমকি হিসেবেই দেখছেন।
জাপানের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটির জন্মহার ছিল প্রতি ১০০০ জনে মাত্র ৬.৩ জন, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন। একই সময়, ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখন কর্মক্ষমতার বাইরে।
এই পরিস্থিতি শুধু জনগণের বয়স কাঠামোকে প্রভাবিত করছে না, বরং শ্রমবাজার, স্বাস্থ্যসেবা, পেনশন ব্যবস্থা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোকেও হুমকির মুখে ফেলছে। উৎপাদন কমে যাচ্ছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিক সংকটে ভুগছে, আর রাষ্ট্রকে ব্যয় করতে হচ্ছে আগের তুলনায় বহু গুণ বেশি অর্থ বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও পেনশন সুবিধায়।
সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেও প্রত্যাশিত সুফল পাচ্ছে না। জন্ম নিলে নগদ প্রণোদনা, শিশুর যত্নে সরকারিভাবে সহায়তা এবং কর্মরত অভিভাবকদের জন্য ছুটি ও কর রেয়াতের মতো সুবিধা দিয়েও জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি ফেরানো যাচ্ছে না। সামাজিক মানসিকতা, কর্মব্যস্ততা এবং বিয়েবিচারহীন একক জীবনের প্রবণতা এই সংকটকে আরও গভীর করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, জাপানের এই পরিস্থিতি বিশ্বের অন্যান্য উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা। যেসব রাষ্ট্রেও জন্মহার নিম্নগামী, তাদের জন্য জাপানের অভিজ্ঞতা হতে পারে একটি বাস্তব শিক্ষা গণতান্ত্রিক কাঠামোয় যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পুনরুৎপাদন নিশ্চিত না হয়, তবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও একটি জাতির অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে।
বর্তমানে জাপানে হাজার হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক গ্রামে নতুন শিশু না থাকায় স্থানীয় জনপদেরই অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। শহরগুলোয় রোবট দিয়ে বৃদ্ধদের দেখভালের চেষ্টা চলছে, কিন্তু তাতে সমস্যার শেকড় থেকে সমাধান হচ্ছে না।
জাপানের এই পরিস্থিতি একটি জাতীয় অস্তিত্বের প্রশ্নে পরিণত হয়েছে এমন এক জাতি, যেখানে শিশুদের হাসির শব্দ ক্রমশ স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পরিবর্তে পরিণত হচ্ছে একটি ইতিহাসের অধ্যায়ে।
তথ্যসূত্র: ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস
আফরোজা