ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

আর কত মাথানত, আর কত অভিজ্ঞতা অর্জন?

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ৬ আগস্ট ২০২৪

আর কত মাথানত, আর কত অভিজ্ঞতা অর্জন?

বরাবরের মতো এবারও বিশ্বের বৃহত্তম গেমস অলিম্পিকে শুধু অভিজ্ঞতা অর্জন আর আনন্দ ভ্রমণে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের মিশন। অথচ বাংলাদেশ বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর একটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক জিততে পারেনি! পদক দূরে থাক; সেটার সম্ভাবনাও সৃষ্টি করতে পারেননি লাল-সবুজের অ্যাথলেটরা। 
অথচ প্রায় প্রতিটি গেমসেই কত না দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়। এবারের প্যারিস অলিম্পিকেও অনেক দেশ পদক জিতে ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম সোনার অক্ষরে লিপিবদ্ধ করছে। কিন্তু লাল-সবুজের এই দেশ আবারও অভিজ্ঞতা অর্জন আর প্রমদ ভ্রমণে মিশন শেষ করেছে। গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মার্চপাস্টে দেখা গেছে অবাক কা-।

সেখানে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা বহন করেন আরচার সাগর ইসলাম। কিন্তু অবাক করা বিষয়, সাগরের হাতে ছিল ছোট পতাকা। আর বড় পতাকা ছিল বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিবের হাতে! এ থেকেই প্রমাণ হয় কর্র্তারা খেলার মানের দিকে মনোযোগী না হয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। এসবের কারণে কোটি কোটি এই দেশের আপামর জনসাধারণের মনের বাসনা পূরণ করতে পারছেন না বাংলাদেশের অ্যাথলেটর। এবারের আসরে বাংলাদেশের ছয় প্রতিযোগী ন্যূনতম সম্ভাবনার ছাপ রাখতে পারেননি।

আরচার রোমান সানা ২০২০ অলিম্পিকের সময় বলেছিলেন, ২০২৮ অলিম্পিকে তিনি দেশকে পদক এনে দিতে চান। কিন্তু ইতোমধ্যে সম্ভাবনাময় এ আরচার অনেকটাই আড়ালে চলে গেছেন। সবমিলিয়ে অলিম্পিকে এবারসহ বাংলাদেশের এগারোবার অংশগ্রহণে বরাবরেই মতোই সঙ্গী হয়েছে ব্যর্থতা। যে কারণে আপামর জনসাধারণ আর ক্রীড়াপ্রেমীদের জিজ্ঞাসাÑ আর কত অভিজ্ঞতা অর্জন; আর কত মাথা নত? 
এবার প্যারিস অলিম্পিকে পুরুষদের শুটিংয়ের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের বাছাইপর্বেই বাদ পড়েছেন বাংলাদেশের রবিউল ইসলাম। তিনি ৪৯ জন প্রতিযোগির মধ্যে হয়েছেন ৪৩তম। অথচ এই ইভেন্টে ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে অলিম্পিকে গেছেন রবিউল। স্বপ্নপূরণের জন্য তাকে বাছাইপর্ব শেষে থাকতে হতো  সেরা আটে। কিন্তু সেরা আট দূরের কথা, ৪৯ জন শুটারের মধ্যে ৪৩তম। বাছাইপর্বে রবিউল স্কোর করেছেন মাত্র ৬২৪.২।

যা তার ব্যক্তিগত সেরা  স্কোরেরও (৬২৮) ধারে কাছে নেই। রবিউল প্রথম সিরিজে ১০৫.৫ করার পর বাকি পাঁচ সিরিজে তার  স্কোর ১০৩.২, ১০৩.৫, ১০৩.৪, ১০৪.৭ ও ১০৩.৯। এই ইভেন্টে বাছাইয়ে সর্বোচ্চ ৬৩১.৭ স্কোর করেন চীন ও আর্জেন্টিনার দুই শুটার। ভারতের অর্জুন বাবুতা ৬৩০.১ স্কোর করে সপ্তম হয়ে পান ফাইনালের টিকিট। ৬২৯.৮ স্কোর করে অষ্টম হয়ে ফাইনালে উঠেছেন  ক্রোয়েশিয়ার শুটার পিটার গর্সা। 
গত দুটি অলিম্পিকে ছেলেদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন আবদুল্লাহ  হেল বাকি। ২০২১ টোকিওতে ৪৭ জনের মধ্যে ৪১তম হয়েছিলেন বাকি। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে ৫০ জনে ২৫তম। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে শুটিংয়ে ছেলেরা কেউ সুযোগ পাননি। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের বাছাইয়ে খেলেছেন শারমিন আক্তার (রতœা)। ৫৬ জনের মধ্যে ২৭তম হয়েছিলেন তিনি।

অলিম্পিক গেমসে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের  কোনো শুটার সরাসরি  খেলতে পারেননি। যে আটজন অংশ নিয়েছেন সবাই  গেছেন ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে।
পদকজয় নয়, বরং আশা ছিল নিজেদের সেরা টাইমিং করার আত্মতৃপ্তি নিয়ে প্যারিস অলিম্পিকের মিশন শেষ করবেন। কিন্তু হতাশ করেছেন দুজনেই। যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা হলেন বাংলাদেশের দুই অলিম্পিয়ান স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান ও সুইমার সোনিয়া আক্তার। দুজনই হিটে বাদ পড়েছেন। সবার প্রত্যাশা ছিল চলমান সামার অলিম্পিকে লন্ডন প্রবাসী অ্যাথলেট ইমরানুর অন্তত হিটের প্রিলিমিনারি রাউন্ড টপকিয়ে প্রথম রাউন্ডে উঠবেন।

কিন্তু ১০০ মিটার স্প্রিন্টের প্রিলিমিনারিতে ১০.৭৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজের হিটে আট জনের মধ্যে ষষ্ঠ হন বাংলাদেশের এই দ্রুততম মানব। এই হিট থেকে প্রথম রাউন্ডে কোয়ালিফাই করা পানামার অ্যাথলেটের টাইমিং ১০.৩৪ ও সিশেলসের অ্যাথলেটের টাইমিং ১০.৫১ সেকেন্ড। ইমরানুরের নিজের সেরা টাইমিং ছিল ১০.১১ সেকেন্ড। দৌড় শেষে তিনি অবশ্য অভিযোগ করেছেন তিনি ইনজুরি পড়েছিলেন অনেক আগেই।

কিন্তু এটা বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনকে জানানো সত্ত্বেও তারা তাকে জোর করে খেলতে বাধ্য করেছেন! এজন্যই তার টাইমিং খারাপ হয়েছে। তবে ইমরানুরের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব। 
মেয়েদের সাঁতারের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলের হিটে বাংলাদেশের সাঁতারু সোনিয়া খাতুন ৩০.৫২ সেকেন্ড সময় নিয়ে বিদায় নিয়েছেন। নিজের হিটে তিনি হন ষষ্ঠ (৮ জনের মধ্যে)। এই ইভেন্টে সোনিয়ার সেরা টাইমিং ৩০.১১ সেকেন্ড। বাংলাদেশের একমাত্র অ্যাথলেট হিসেবে সরাসরি প্যারিস অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পান সাগর ইসলাম। আরাচারিতে ভালো কিছু করবেন এমন প্রত্যাশাই ছিল তার কাছে।

কিন্তু প্রথম রাউন্ডে খেলতে নেমে হতাশ করেছেন তিনি। শুটার রবিউল ইসলাম ও সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফির মতো শুরুতেই বাদ পড়েছেন তিনি। ইতালির মাউরো নেসপলির (২০২০ অলিম্পিকে এই ইভেন্টের রৌপ্যপদকজয়ী) কাছে সরাসরি ৬-০ পয়েন্টে হেরেছেন তিনি। সাগরকে ৩০-২৭, ২৭-২৬, ২৮-২৫ ব্যবধানে হারিয়ে শেষ ৩২-এ উন্নীত হন নেসপলি। 
অলিম্পিকের ইতিহাসে এটি ৩৩তম আসর হলেও বাংলাদেশের জন্য একাদশতম। ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক দিয়ে স্বপ্নের ক্রীড়াযজ্ঞে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শুরু হয়। আগের আসরগুলোতে পদক দূরে থাক, পদক জয়ের সম্ভাবনাও সৃষ্টি করতে পারেনি বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেট। ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা এবারও বজায় থেকেছে। অথচ ইতিহাস গড়ে পদক জিতেছে স্বল্প জনসংখ্যার অনেক দেশ।

×