ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

মিরাজের ধারাবাহিকতাই বড় স্বস্তি

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২২:২৯, ২ অক্টোবর ২০২৩; আপডেট: ১৯:১৪, ৩ অক্টোবর ২০২৩

মিরাজের ধারাবাহিকতাই বড় স্বস্তি

ভারতের গোয়াহাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন মেহেদী হাসান মিরাজ

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে অফস্পিন অলরাউন্ডার হিসেবে। সে কারণে প্রথম ৬ বছরে মেহেদি হাসান মিরাজ ব্যাট করার সুযোগ সেভাবে পাননি। অধিকাংশ সময় ব্যাটিং অর্ডারে টিম কম্বিনেশনের জন্য ৮ নম্বর পজিশনেই জায়গা হয়েছে। আর এসব পজিশনে ভালো ইনিংস খেলা দুরূহ। সবমিলিয়ে নিজেকে ব্যাটার হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগটা আসেনি মিরাজের। অথচ বারবারই তিনি নিজেকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবেই দাবি করেছেন। সেই দাবিটার প্রমাণ তিনি দিতে পেরেছেন গত বছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে আটে নেমে অপরাজিত ৮১ রানের ইনিংস খেলে।

বছরের শেষে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে একই পজিশনে নেমে হার না মানা সেঞ্চুরিতে সবার নজর কাড়েন। সম্প্রতি দলের টপঅর্ডারের চরম ব্যর্থতায় এশিয়া কাপে ওপেনার হিসেবে চ্যালেঞ্জে নেমেই সেঞ্চুরি হাঁকান। মিরাজ সেই ফর্ম ধরে রেখেছেন। এবার বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডাউনে নেমে অপরাজিত ৬৭ এবং সোমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে চারে নেমে করেছেন ৮৯ বলে ৭৪। তার এই ব্যাটিং ধারাবাহিকতা এখন বড় স্বস্তি বাংলাদেশ দলের। আসন্ন বিশ্বকাপে তাই মিরাজ ব্যাটিং অর্ডারের বড় আস্থা হয়ে উঠেছেন।

যখন দলের ব্যাটিং বিপর্যয় হয়, তখন এককভাবে ৭ কিংবা ৮ নম্বর পজিশনে ব্যাট হাতে বড় কিছু করার থাকে না। অন্যপ্রান্তে স্বীকৃত কোনো ব্যাটার না থাকলে সেটি নিশ্চিতভাবেই কঠিন। মিরাজ অধিকাংশ ম্যাচেই ৮ নম্বরে ব্যাট করেছেন। ততক্ষণে ব্যাটারদের সব লড়াই শেষ হয়েছে এবং তিনি সঙ্গী হিসেবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেয়েছেন টেল এন্ডারদের। সেজন্য ভালো ইনিংস খেলার সুযোগটাই পাননি মিরাজ। নিজেকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার দাবি করলেও অফস্পিনে যেভাবে নিজেকে মেলে ধরে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছেন, তাতে করে তার বোলিংয়েই ভরসা করেছে বাংলাদেশ। আর যখন ভালো অবস্থা থাকে দলের, সেই সময় বেশিক্ষণ ব্যাট করার সুযোগ থাকে কম। খুব কম বল মোকাবিলার সুযোগ থাকে ৮ নম্বর ব্যাটারের। তাই এক্ষেত্রেও সুযোগটা পাননি মিরাজ।

তবু ২০১৭ সালের এপ্রিলে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবার যখন ক্যারিয়ারে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন, সেদিন ৫১ রানের ইনিংস খেলেন। আর গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার মোক্ষম সুযোগ পান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর একপ্রান্তে স্বীকৃত ব্যাটার আফিফ হোসেন ধ্রুব ছিলেন এবং মিরাজ তখন ক্রিজে এসে ক্যারিয়ারসেরা ৮১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন সেদিন এবং দলকে জেতান। সেটি মাত্র দ্বিতীয় ফিফটি তার।
গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে আবার সুযোগ পান নিজেকে প্রমাণের। এদিনও মাত্র ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে থাকা দলের হাল ধরেন আটে নামা মিরাজ এবং সেঞ্চুরি হাঁকান। অপর প্রান্তে স্বীকৃত ব্যাটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ছিলেন। এ ম্যাচেও জয় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি হয়নি মিরাজের। যদিও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। এশিয়া কাপে দলের ওপেনারদের ব্যর্থতায় একেবারে ওপেনার হিসেবেই সুযোগ পান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে নেমেই করেন সেঞ্চুরি এবং এদিন খেলেন ক্যারিয়ারসেরা ১১২ রানের ইনিংস। এই ইনিংসগুলো খেলার পর মিরাজের ব্যাটিংয়ে ওপর ভরসা করছে বাংলাদেশ দল। আর সে কারণেই এখন বিশ্বকাপে তার ব্যাটিং নিয়েও ভালোভাবেই পরিকল্পনা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

টপঅর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে। তাকে বিশ্বকাপের জন্য সেভাবেই প্রস্তুত করা হচ্ছে। এমনকি আফগানিস্তানের রহস্যময় স্পিন মোকাবিলায় ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালকে না খেলিয়ে মিরাজ ও লিটন কুমার দাসকে নিয়েই পরিকল্পনা করা হয়। সেই ইস্যুতে তামিম বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকেই ছিটকে গেছেন। 
মিরাজ এখন প্রস্তুত হচ্ছেন। ইতোমধ্যেই টানা দুই প্রস্তুতি ম্যাচে হাঁকিয়েছেন অর্ধশতক। গুয়াহাটিতে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথমবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ নম্বরে নেমে করেন ৬৪ বলে ৬ চার, ২ ছক্কায় অপরাজিত ৬৭ রান। সোমবার দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবার চারে নেমেছেন। এবারও অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৮৯ বলে ১০ চারে ৭৪ রান করে যে কোনো পজিশনের জন্য দলের ব্যাটিংয়ে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন মিরাজ এবং নিশ্চিতভাবেই এটি বাংলাদেশ দলের জন্য বড় স্বস্তি।

×