ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মিরপুরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ২৫৪ রান, খালেদ আহমেদ ও মেহেদি হাসানের ৩টি করে উইকেট

খালেদ ও মেহেদির দুর্দান্ত বোলিং

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০১:১৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

খালেদ ও মেহেদির দুর্দান্ত বোলিং

তিন উইকেট শিকারি সৈয়দ খালেদ আহমেদকে (মাঝে) শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সতীর্থরা

উইকেটটাকে বেশ ভালোভাবেই পড়তে পেরেছে নিউজিল্যান্ড দল। বৃষ্টিস্নাত পরিবেশ আর ম্যাচে কয়েক দফায় বৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জেতার পর ব্যাটিং নিয়েছে তারা। সেই সিদ্ধান্তটাকে যথার্থ করেছে তারা লড়াকু সংগ্রহ গড়ে। 
শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উইকেটরক্ষক ব্যাটার টম ব্লান্ডেলের অর্ধশতকে শেষ পর্যন্ত ৪৯.২ ওভারে ২৫৪ রান করেছে নিউজিল্যান্ড। এখন পর্যন্ত এই ভেন্যুতে এটাই নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। বাংলাদেশের বোলিং শুরুর দিকে প্রথম ম্যাচের মতোই মুস্তাফিজুর রহমানের ঝলকে দারুণ হয়েছে। অভিষিক্ত সৈয়দ খালেদ আহমেদও ভালোভাবে শুরু করেন। কিন্তু তারা কেউ সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। সেই কারণেই মিরপুরে প্রথমবার আড়াইশ’ পেরিয়েছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের মাটিতে এটি ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় সর্বোচ্চ। অভিষেকেই খালেদ ৩ উইকেট নিতে গিয়ে অনেক রান খরচা করেছেন। তবে অফস্পিন অলরাউন্ডার শেখ মেহেদি হাসান ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ১০ ওভারে মাত্র ৪৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। 
টস জিতেই এদিন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক লকি ফার্গুসন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। আগের ম্যাচে বাংলাদেশ টস জিতলেও কিউইদের ব্যাটিংয়ে পাঠায়। সেদিন তারা সুবিধা করতে না পারলেও এদিন অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে নামে। আর বাংলাদেশ ২ পরিবর্তন আনে। ওয়ানডেতে দেশের ১৪৬তম খেলোয়াড় হিসেবে নুরুল হাসান সোহানের পরিবর্তে অভিষেক ক্যাপ পান খালেদ। আর ইনজুরিতে পড়া তানজিম হাসান সাকিবের বদলে সুযোগ করে নেন হাসান মাহমুদ। শুরুটা দারুণ করেছেন মুস্তাফিজ। প্রথম ম্যাচের মতো এদিনও কিউই টপঅর্ডারকে ভুগিয়েছেন এ বাঁহাতি পেসার।

জোড়া ধাক্কা তিনিই দিয়েছেন। তৃতীয় ওভারে উইল ইয়াংকে (০) কট বিহাইন্ড করা মুস্তাফিজ সপ্তম ওভারে ফিরিয়েছেন ফিন অ্যালেনকে (১৫ বলে ১২)। দুই ওপেনারই ফিরে গেছেন দলীয় ২৬ রানে। এরপর অষ্টম ওভারে আরেকটি আঘাত হানেন খালেদ। চ্যাড বাউয়েসকে (১৯ বলে ১৪) স্কয়ার লেগে ক্যাচে পরিণত করেছেন তিনি। বাউন্ডারি হজম করে ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তী ১৫টি বল ডট করেছেন খালেদ। ফলে ৩৬ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে বেশ বিপদেই পড়েন তারা। সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়েছেন অভিজ্ঞ হেনরি নিকোলস ও ব্লান্ডেল। তারা চতুর্থ উইকেটে ৯৫ রানের জুটি গড়ে কিউইদের ভালো একটি সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়েছেন। 
নিকোলস আগের ম্যাচে ৪৪ রান করেছিলেন দলের বিপর্যয়ে দাঁড়িয়ে। এদিনও ফিফটি পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। ২৭তম ওভারে ফিরতি স্পেলে বোলিং করতে এসেই আবার ব্রেক থ্রু দেন খালেদ। তিনি ৬১ বলে ৬ চারে ৪৯ রান করা নিকোলসকে কট বিহাইন্ড করেছেন। এরপর রাচিন রবীন্দ্র ও কিছুক্ষণ সঙ্গ দিতে পেরেছেন ব্লান্ডেলকে। তবে তিনিও শেখ মেহেদির অফস্পিনে এলবিডব্লিউ হন ১৪ বলে মাত্র ১০ রান করে। অবশ্য এর আগেই ব্লান্ডেল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি পেয়ে যান। তিনিও অবশ্য বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। হাসান মাহমুদের পেসে বোল্ড হয়ে যান ৬৬ বলে ৬ চার, ১ ছক্কায় ৬৮ রান করে। এটি তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস।

১৬৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদেই পড়ে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু কোল ম্যাকনকি ও সোধি বেশ সতর্ক হয়ে ব্যাট চালিয়েছেন। তারা ২১ রান যোগ করেন। ম্যাকনকি ৩৩ বলে ২০ রান করে নাসুম আহমেদের বাঁহাতি স্পিনে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরত গেলে দ্রুতই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু কাইল জেমিসনের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে ৩২ রানের জুটি গড়েন সোধি। ২৮ বলে ৩ চারে ২০ রান করে জেমিসন শেখ মেহেদির বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে যান। কিন্তু এরপর দ্রুত সাফল্যই পায়নি বাংলাদেশের বোলাররা। শুরুর দিকে দুর্দান্ত বোলিং করা খালেদ-মুস্তাফিজ বেশ রান খরচ করেছেন। এতেই ফার্গুসনের সঙ্গে নবম উইকেটে আরও ২১ রান যোগ করে দেন সোধি। তিনি দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। 
যদিও ৪৬তম ওভারের চতুর্থ বলে সোধিকে মানকাডিং করে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছিলেন হাসান। বলটি না করেই তিনি নন-স্ট্রাইকিংয়ের উইকেট ভেঙে দিয়ে রিভিউ নিয়ে আউট পান। কিন্তু অধিনায়ক লিটন আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে আবার সোধিকে ফিরিয়ে আনেন। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম মানকাডিংটা থাকেনি। ১৭ রানে আউট হয়ে আবার ফিরে এসে সোধি ৩৯ বলে ৩৫ রান করেন ৩ ছক্কায়। তবু ৪ বল আগেই ২৫৪ রানে থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস, সোধিকে কট বিহাইন্ড করেন খালেদ। ৯.২ ওভারে তিনি ১ মেডেন দিলেও ৬০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন। 
তবে শেখ মেহেদি ১০ ওভারে মাত্র ৪৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। ২০১০ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ড ২৩২ রান করে এই মাঠে। সেটিই এতদিন মিরপুরে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল। এবার নিজেদের সেরা সংগ্রহ পেয়েছে কিউইরা। এর আগে ৬ বার এই ভেন্যুতে আড়াইশ’ রানের টার্গেট পেরিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৫১ আর ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ২৯০ রানের টার্গেট পেরোলেও বাকি ৪ বার পারেনি।

×