ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে বিশেষ হিট ম্যানেজমেন্ট

দাবদাহ থেকে ক্রিকেটারদের রক্ষার কৌশল

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৬, ৮ জুন ২০২৩

দাবদাহ থেকে ক্রিকেটারদের রক্ষার কৌশল

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ সামনে রেখে তীব্র গরমে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলনে ক্রিকেটাররা

শীতকাল শেষ হতেই তীব্র দাবদাহের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি। মাঝে কিছুদিন সেই দাবদাহের রেশ কমলেও দুই সপ্তাহ ধরে চলছে তীব্র গরম। আর এই উত্তাপের মধ্যেই বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট ম্যাচ চলবে। তবে সেই পরিস্থিতিতে ক্রিকেটারদের বড় ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) হিট ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যেই অনুশীলনে সেই ব্যবস্থা নিয়ে ক্রিকেটারদের একটুতেই হাঁপিয়ে ওঠা এবং ক্লান্তি ও গরমে বিপর্যস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করছে। বিরতি এবং কিছুক্ষণ পরপর উভয় দলের ড্রিংকসের ব্যবস্থা রাখার জন্য ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ারদের সঙ্গে আলোচনা করার কথাও জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ চৌধুরী। বুধবার তিনি গণমাধ্যমে ক্রিকেটাদের জন্য বিসিবির নেওয়া হিট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। 
মধ্য জুনে টেস্ট ম্যাচ। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু করে ম্যাচ চলবে প্রায় সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার মধ্যে লাঞ্চ ও চা বিরতি ছাড়াও ঘণ্টায় ঘণ্টায় থাকে পানি পানের বিরতি। তবে এখন তাপমাত্রা অত্যধিক। সেই সঙ্গে অনেক বেশি আর্দ্রতা। তাই বাইরের পরিবেশে কিছুক্ষণ থাকতেই ঘেমে-নেয়ে একাকার হতে হচ্ছে। আসছে ক্লান্তি ও অবসাদ। সেই সঙ্গে ডিহাইড্রেশনে হাঁপিয়ে উঠছে মানুষ। ক্রিকেটারদের তীব্র রোদের মধ্যেই অনুশীলন করতে হচ্ছে এবং টেস্ট ম্যাচও খেলতে হবে এমন আবহাওয়ার মধ্যে। ডা. দেবাশীষ বলেছেন, ‘ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে আমরা ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করার জন্য প্রি-হাইড্রেশন করতে বলি।

অর্থাৎ খেলার আগের দিন থেকেই ওদের নিজেদের হাইড্রেশন অবস্থাটা ধরে রাখতে হবে। তাপমাত্রার যে সরাসরি হিট, সেটা কমানোর জন্য আমরা সুযোগ পেলেই ঘন ঘন বিরতির ব্যবস্থা করি। ওই সময় ছায়া বা বড় ছাতার নিচে ওদের থাকতে বলি। ঘন ঘন পানি বিরতি দেওয়ার ফলে ওদের হাইড্রেশন ও ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ওদের সারা শরীরের অনাবৃত স্থানগুলো মুছে দেওয়া হয়। যখনই ওরা ভেতরে চলে আসে, তখনই আমরা শরীরের বিশেষ বিশেষ জায়গায় আমরা বরফ দিয়ে থাকি। বরফ দেওয়ার মাধ্যমে শরীরের কেন্দ্রীয় তাপমাত্রাকে আমরা কমানোর চেষ্টা করি। এছাড়া আইস বাথেরও ব্যবস্থা আছে।’
আর এভাবেই আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ক্রিকেটারদের দাবদাহের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষার পরিকল্পনা বিসিবির। টেস্ট চলাকালীন মধ্যাহ্ন বিরতি ও চা পানের বিরতি পান ক্রিকেটাররা। এছাড়া ১৫ ওভার শেষে পানীয় পানের বিরতি পান। এই বিরতিগুলো আলোচনার মাধ্যমে বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগও আছে। এজন্য ম্যাচ রেফারির সঙ্গে সিরিজ শুরুর আগেই কথা বলবেন দুই দলের কোচ, ম্যানেজাররা। ক্রিকেটারদের বিশেষ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সুযোগও আছে। সেই সুযোগটি নিতে পারে দুই দল। দেবাশীষ বলেছেন, ‘তবে এ ধরনের হিটের কারণে যে পরিমাণে কোর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, সেটি কয়েক দিন পর্যন্ত থেকে যায়। চামড়ার তাপমাত্রা কমে গেলেও, ভেতরে আরও অনেক দিন থাকতে পারে।

এজন্য খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। শর্টার ভার্সনের খেলার সুবিধা হচ্ছে পরের দিন আমরা বিশ্রাম পাচ্ছি। হিট ম্যানেজমেন্ট আমরা করতে পারছি। কিন্তু লংগার ভার্সনে আমাদের ৫ দিন টানা মাঠে থাকতে হচ্ছে। তখন ম্যানেজমেন্ট একটু কঠিন হয়ে যায়। সবমিলিয়ে আমাদের ফিজিও, ট্রেইনার যারা আছে তারা এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ।
আমাদের ক্রিকেটাররাও নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখছে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায়ই আমরা চেষ্টা করছি তাপ সংশ্লিষ্ট ইনজুরিগুলো কাটিয়ে নেওয়ার জন্য। অবশ্যই হাইড্রেশন ও নিউট্রিশন বড় ভূমিকা রাখে, হিট স্ট্রেস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। তো মূলত যে খাবারগুলোর মধ্যে জলীয় অংশ বেশি আছে, সেগুলো আমরা বেশি ব্যবহার করতে বলি। এই সময়ে স্বাভাবিক খাদ্য তালিকার বাইরে প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি যোগ করা হয়। এর বাইরে পানির ব্যাপারটা আমরা বারবার বলে থাকি যে, তৃষ্ণা পেলে পানি খাওয়া যাবে না।

তৃষ্ণা পাওয়ার আগেই পানি খেতে হবে। অর্থাৎ এক ঘণ্টা পরপর পানি খেতে হবে। এটা তৃষ্ণার ওপর নির্ভর করবে না। যখনই আমাদের তৃষ্ণা পেয়ে যাবে, আমাদের ধরে নিতে হবে আমরা প্রায় দুই লিটারের মতো ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেছি। তাই এজন্য এ ধরনের কিছু টিপস ক্রিকেটাররাও জানে। ওদের বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের ট্রেইনাররাও আছে। সার্বক্ষণিকভাবে ওরা ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস বা বরফ দিয়ে চেষ্টা করছেন হিট স্ট্রেসটা ম্যানেজ করার।’

×