ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

​​​​​​​বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ

মিরপুরে পেস নাকি স্পিন সহায়ক উইকেট?

​​​​​​​মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ২৫ মে ২০২৩

মিরপুরে পেস নাকি স্পিন সহায়ক উইকেট?

.

আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের আগে দীর্ঘ সময় পেয়েছে বাংলাদেশ দল নিজেদের পরিকল্পনা সাজানোর। এখনো প্রায় সপ্তাহ বাকি একমাত্র টেস্ট মাঠে গড়াতে। সিরিজের এই একমাত্র টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। আর চিরাচরিত নিয়মে এখানে সবসময় স্পিন আক্রমণ ভয়ানক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। অতীতে স্বাগতিক হিসেবে টাইগাররাও স্পিন ছোবলে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তিদের ঘায়েল করেছে। তবে প্রতিপক্ষ যখন এশিয়ার কোনো দেশ, তখন ভিন্ন কিছুই ভাবতে হয়।

বিশ্বমানের স্পিন সমৃদ্ধ দল আফগানিস্তান। তাদের স্পিন বিভাগের নেতৃত্বে আছেন রশিদ খান, সঙ্গে মুজিব উর রহমান, জহির খান, আমির হামজা নুর আহমেদ থাকবেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আফগান স্পিনের কাছেই নতি স্বীকার করে একমাত্র টেস্ট চট্টগ্রামের উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এবার তাই মিরপুরেও স্পিন সহায়ক উইকেট হয়ে উঠতে পারে বুমেরাং। কারণে পুরোপুরি পেস সহায়ক উইকেট বানাতে না পারলেও অন্তত স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করতে পারলে বাংলাদেশের দুর্দান্ত পেস আক্রমণ সাফল্য বয়ে আনতে পারে। তবে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই বলেননি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বা টিম ম্যানেজমেন্ট।

গত বছর মার্চে স্বাগতিক বাংলাদেশকে মিরপুরের উইকেটে হতাশায় পুড়িয়েছে শ্রীলঙ্কার আনকোরা একটি পেস আক্রমণ। কাসুন রাজিথা আর আসিথা ফার্নান্দো ঝড় তোলেন মিরপুরে। গত বছরে এখানে হওয়া টেস্টে পেসাররা নৈপুণ্যে বেশ এগিয়েছেন। যদিও মিরপুর বরাবরই স্পিনারদের সহায়তা দিয়েছে, কিন্তু ৬৮ উইকেট পেয়েছেন পেসাররা, ১১৫টি স্পিনাররা। এর মধ্যে বাংলাদেশ অধিকাংশ ম্যাচে সাকুল্যে জন পেসার খেলিয়েছে (একজন খেলানোর ঘটনাও আছে) এবং ২৫ উইকেট নিয়েছেন স্বাগতিক পেসাররা। তবে সফরকারী দলের পেসাররা ৪৩টি এবং স্পিনাররা ৫১টি উইকেট নিয়েছেন। অর্থাৎ মিরপুরে পেস-স্পিন সাফল্যের অনুপাত গত বছরে প্রায় কাছাকাছি। এবার বাংলাদেশ দলেরও সময় এসেছে পেসারদের ওপর ভরসা রাখার। সেক্ষেত্রে উইকেটে পেস সহায়তা থাকাও জরুরি। আফগানিস্তান দলের দুই পেসার ফজল হক ফারুকি, ইয়ামিন আহমদজাই মূল ভরসা। পেস বোলিংয়ের শক্তিমত্তায় বর্তমান সময়ের সাফল্য বিবেচনায় নিশ্চিতভাবেই এগিয়ে বাংলাদেশ। তবে স্পিন আক্রমণে অনেক বেশি সমৃদ্ধ আফগানরা। তাহলে কি মিরপুরের উইকেটে ভিন্নতা দেখা যাবে এবার? জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন অবশ্য স্পষ্ট করে কিছুই বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘মিরপুরের উইকেট কেমন হতে পারে না পারে, সেটা নিয়ে আমাদের খুব ভালো ধারণা আছে। সেভাবেই আমাদের মনের মতো করে উইকেট তৈরি করা হচ্ছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে যথেষ্ট পরিষ্কার। উইকেটটা কেমন হবে, সেটা তো বলতে পারব না।

আমাদের যে পরিকল্পনা, সেটা আমাদের মধ্যেই থাক।বাংলাদেশ দলের স্পিন আক্রমণে আছেন দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান তাইজুল ইসলাম। এছাড়া অফস্পিনার হিসেবে মেহেদি হাসান মিরাজ থাকবেন। এই তিনজনই মূলত বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের অন্যতম ভরসা। তবে ইনজুরি আক্রান্ত সাকিব আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের অন্যতম শক্তিই কমে যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার রশিদ-মুজিবের সঙ্গে বর্তমানে নূর বিস্ময় জাগিয়ে চলেছেন। এছাড়া সর্বশেষ কয়েকটি টেস্টে আফগান দলের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার জহির বাঁহাতি স্পিনার হামজা। তারাই হয়তো বাংলাদেশের বিপক্ষে থাকবেন।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের চরম পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হবে। আর তাই এখন দলের পেসারদের ওপর নির্ভর করার মোক্ষম সুযোগ। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ অনেকটাই এগিয়ে আছে স্পিন শক্তির চেয়ে। পেস বিভাগে যথেষ্ট ব্যাকআপও আছে। ক্রমেই স্পিন নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসছে বাংলাদেশ দল। টেস্টে নিয়মিতদের মধ্যে আছেন দুই ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ খালেদ আহমেদ। ছাড়া অনিয়মিতভাবে শরিফুল ইসলাম। ইনজুরির কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়া তাসকিন আহমেদ অবশ্য আফগানদের বিপক্ষেই ফিরতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের ধার বেড়ে যাবে। দুই ডানহাতি তাসকিন-এবাদত ছাড়াও বাঁহাতি হিসেবে শরিফুল খেললে বৈচিত্র্যও থাকবে। এছাড়া ব্যাকআপ হিসেবে বর্তমানে দারুণ ফর্মে থাকা ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদও আছেন। যদিও এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেননি এই তরুণ, কিন্তু এবার সেই সুযোগটা পেতে পারেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কি ঘটবে তা হয়তো ম্যাচ শুরুর কয়েকদিন আগেই বোঝা যাবে। ১৪ জুন মাঠে গড়াবে একমাত্র টেস্ট।

×