ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোচ তিতের কাছে ব্রাজিলের সেরা ফিনিশার ও ভরসা হয়ে উঠেছেন এই স্ট্রাইকার

ব্রাজিলের আক্রমণে মোক্ষম অস্ত্র রিচার্লিসন

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২২

ব্রাজিলের আক্রমণে মোক্ষম অস্ত্র রিচার্লিসন

ব্রাজিলের আক্রমণে অন্যতম চালিকাশক্তি রিচার্লিসন

সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে আজ মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ব্রাজিলের। জিতলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা নিশ্চিত হয়ে যাবে। ড্র কিংবা হারে অপেক্ষায় থাকতে হবে শেষ পর্যন্ত। তাই জয় ছাড়া এই ম্যাচে অন্য কোনো ফল চাপে ফেলবে সেলেসাওদের ‘হেক্সা’ বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে। এমন একটি ম্যাচে আজ ব্রাজিলের মহাতারকা নেইমার থাকবেন সাইড বেঞ্চে। ডান পায়ের গোঁড়ালির ইনজুরিতে তিনি খেলতে পারবেন না এই ম্যাচ। তবে সতীর্থদের উজ্জীবিত রাখতে মাঠেই উপস্থিত থাকবেন নেইমার। অবশ্য খুব বড় সমস্যায় পড়বে না সেলেসাওরা। কারণ, প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত জোড়া গোল করা রিচার্লিসন দ্য অ্যানড্রাডে এখন সব আলো কেড়ে নিয়েছেন নিজের ওপরে। বিশেষ করে তার চোখ ধাঁধানো বাইসাইকেল কিকে করা দ্বিতীয় গোলটি রীতিমতো বিস্ময়ের জন্ম যেমন দিয়েছে, তেমনি প্রতিপক্ষরাও এখন ২৫ বছর বয়সী এ তারকাকে রুখতে পরিপূর্ণ সতর্কতা জারি করবে। বিশ্বকাপ অভিষেকেই এমন জ্বলজ্বলে পারফর্মেন্স দেখিয়েই দলের আক্রমণে মূল চালিকাশক্তি ও ভরসা হয়ে উঠেছেন রিচার্লিসন।
ব্রাজিলের বিখ্যাত ৯ নম্বর জার্সি পরে এই বিশ্বকাপ খেলছেন রিচার্লিসন। তিনি যে মহাবিপদ সংকেত হয়ে উঠবেন সার্বরা তা ঘুর্ণাক্ষরেও টের পায়নি। কারণ, সবার দৃষ্টি এবং মনোযোগ কেন্দ্রীভূত ছিল নেইমারের ওপর। সেখান থেকে নিজেকে গোল করার বিধ্বংসী ক্ষমতাধারী হিসেবে প্রমাণ করে পুরো বিশ্বকেই বড় রকমের ঝাঁকি দিয়েছেন। ৬২ ও ৭৩ মিনিটে গোল করেন রিচার্লিসন। দ্বিতীয় গোলটি নিপুণ দক্ষতায় দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে এনে আকর্ষণীয় বাইসাইকেল কিকে সার্বিয়ার জালে জড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই মূলত বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। সেই একটি গোল করেন এখন ব্রাজিলের অন্যতম মেগাস্টার হয়ে উঠেছেন রিচার্লিসন। তা ছাড়া তার এমন পারফর্মেন্স ব্রাজিলের সাবেক তারকা রোনাল্ডোকেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সবাইকে। আক্রমণভাগে এতটাই তৎপর গোলদাতা ছিলেন তিনি যে, তার পরিচিতি হয়েছে ‘দ্য ফেনোমেনন’ হিসেবে। রোনাল্ডোও খেলেছেন ৯ নম্বর জার্সিতে। যদিও সবে শুরু রিচার্লিসনের। কিন্তু শুরুটা যার এমন দুর্দান্ত, তার ওপর তো ভরসা করবেই দল। তা ছাড়া সুইসদের বিপক্ষে আজ খেলতে পারবেন না নেইমার। প্লে- মেকার নেইমারকে ছাড়াই এখন গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে নামতে হবে ব্রাজিলকে।
অথচ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএল) আসরে টটেনহ্যাম হটস্পারে তিনি যেন ছায়া হয়ে গেছেন ইংলিশ তারকা হ্যারি কেনের কারণে। নিয়মিত একাদশে জায়গা পাওয়াই তার জন্য বিরল ব্যাপার হয়েছে আরেক তারকা দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিউং-মিনের কারণে। এরপরও এবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আসরে মার্শেইর বিপক্ষে অভিষেকেই জোড়া গোল করেন রিচার্লিসন। তাই বেশ ভালোভাবেই আলোচনায় ছিলেন এই তরুণ স্ট্রাইকার। অবশেষে বিশ্বকাপেও অভিষেকে বিধ্বংসী নৈপুণ্য দেখালেন। এ বছর ব্রাজিলের জার্সিতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রিচার্লিসন ৭ ম্যাচেই করেছেন ৯ গোল। সব মিলিয়ে ৩৯ ম্যাচে ১৯ গোল করেছেন ইতোমধ্যে সেলেসাওদের হয়ে। দলের আক্রমণভাগের অন্যতম অস্ত্র হতে আর কি লাগে, এখন তিনি তাই হয়েছেন। চলতি আসরে এখন সবচেয়ে আলোচিত তারকা হিসেবে স্পটলাইট তার ওপরে।

অথচ গত অক্টোবরে এভারটনের বিপক্ষে ইপিএল ম্যাচে নেমে হাঁটুর ইনজুরির শিকার হয়ে বিশ্বকাপে খেলা নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়। সেই বিপত্তি পেরিয়ে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত শুরুর পর রিচার্লিসন বলেছেন, ‘৪ সপ্তাহ আগেও আমি কাঁদছিলাম এই শঙ্কায় যে, আমি আদৌ এখানে (বিশ্বকাপ) আসতে পারব কি না। আমি সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছি নিজেকে ফিরে পাওয়ার জন্য। দিনে ৩ সেশন আমি পরিশ্রম করেছি। কারণ, আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম বিশ্বকাপে আসার জন্য।’ দুঃসাহসিক গোল করার পর নিজস্ব স্টাইলে বিশেষ এক ধরনের উদ্যাপন করার কারণেও আলোচিত হয়ে উঠেছেন রিচার্লিসন। কখনোই লাইমলাইটের বাইরে নিজেকে যেতে দেননি তিনি। এখন তার ওপর দায়িত্ব এসে পড়েছে ব্রাজিলকে ২০০২ সালের পর আরেকটি বিশ্বকাপ জেতানোর পথে আস্থার প্রতিদান দেওয়ার। অনেক দুঃখ-কষ্টের শৈশব কেটেছে রিচার্লিসনের। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ার পর বাল্যকালে স্যান্তোসে আইসক্রিম বিক্রি করেছেন, মাকে সাহায্য করেছেন গাড়ি ধোয়ার কাজে এবং কফি বিজ তুলেছেন। ফ্লুমিনেন্স ও ওয়াটফোর্ডের চোখে লাগার আগে কৈশোরে রিচার্লিসন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব আভাই ও ফিগুইরেন্সে শুরু করেন এবং পরে আমেরিকা মিনেইরোতে খেলেন। এখন তিনিই কোচ তিতের সেরা ‘ফিনিশার’ এবং তিতে তার ওপর পুরোপুরিই আস্থাও রাখতে শুরু করেছেন। এখন তিনি কি হয়ে উঠতে পারবেন ব্রাজিলের শিরোপা স্বপ্ন পূরণের মোক্ষম ও কার্যকর অস্ত্র?

 

×