ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এশিয়ার দলগুলোর কাছে চমক প্রত্যাশা করি

 কায়সার হামিদ

প্রকাশিত: ১২:৩২, ২৫ নভেম্বর ২০২২

এশিয়ার দলগুলোর কাছে চমক প্রত্যাশা করি

কায়সার হামিদ

ধীরে ধীরে জমে উঠছে কাতার বিশ্বকাপের খেলা। শুক্রবার প্রথম ম্যাচ হবে বি-গ্রæপের ওয়েলস বনাম ইরানের মধ্যে। এই গ্রæপে এর আগে যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েলস ম্যাচে প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের খেলা দেখে মনে হয়েছিল তারা কয়েক গোলের ব্যবধানে জিতবে। কিন্তু প্রথমার্ধের মতো তারা দ্বিতীয়ার্ধে সাবলীলভাবে খেলতে পারেনি। ওয়েলস এক গোল শোধ দিয়ে ফেলে। বল পজিশনেও যুক্তরাষ্ট্র প্রথমার্ধে এগিয়েছিল (প্রায় ৭০ শতাংশ)। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সেটা আর ধরে রাখতে পারেনি তারা। 

এদিকে ইরানও তাদের প্রথম খেলায় হতাশ করেছে। ইংল্যান্ডের কাছে হাফ ডজন গোল খেয়েছে। অথচ এশিয়ান দল হিসেবে তাদের কাছে আমার একটা প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু স্বাগতিক কাতারের মতো তারাও হতাশ করে। এখন আজকের ম্যাচে ইরান যদি ওয়েলসের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তবে দুর্বল দল হওয়ায় তারা হয়তো কম ব্যবধানে হারের জন্য সেভাবেই খেলবে। দেখা যাক, কি হয়। 

পরের ম্যাচ কাতার বনাম সেনেগালের। যদিও উভয় দলই নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরেছে। কাতার হেরেছে ইকুয়েডরের কাছে আর সেনেগাল হেরেছে নেদারল্যান্ডসের কাছে। এ-গ্রæপের আজকের ম্যাচে সেনেগালই এগিয়ে থাকবে জেতার ক্ষেত্রে। কারণ কাতারের চেয়ে তারা অনেক ‘হাই লেভেল’-এর দল। যদিও বিশ্বকাপে তো বটেই, এর আগে দুদল কখনই কোন পর্যায়ে পরস্পরের মোকাবিলা করেনি। 

১৮ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী আফ্রিকার দেশ সেনেগাল যেখানে এর আগে বিশ্বকাপের মূলপর্বে দুবার খেলে একবার শেষ আটে খেলেছে, সেখানে ৫০ র‌্যাঙ্কিংধারী কাতার কখনই বিশ্বকাপে খেলেনি। তারাই একমাত্র ও প্রথম দল, যারা স্বাগতিক হওয়ার সুবাদে এই প্রথম মূলপর্বে খেলছে। সেনেগালের ইতিহাসের সেরা ফুটবলার-তারকা সাদিও মানে ইনজুরির জন্য বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন। এটা সেনেগালের জন্য বড় একটা আঘাত। তিনি খেলতে পারলে সেনেগাল দল হিসেবে আরও অনেক শক্তিশালী হতো এবং প্রথম ম্যাচে তারা হয়তো হারতে নাও পারত। প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে সেনেগাল হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছে সাদিও মানের অভাবটা। ওই ম্যাচে তারা তেমন খারাপ খেলেনি। গোল করার একাধিক সুযোগও পেয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো ফিনিশার ছিল না। 

কাতার তাদের প্রথম ম্যাচে আসলে নাভার্স ছিল, তাই স্বাভাবিক খেলতে পারেনি। তবে স্বাগতিক দল হিসেবে নার্ভাসনেস কাটিয়ে তারা বেটার ফুটবল খেলবে আজকের ম্যাচে, সেই প্রত্যাশাই থাকবে। 

তৃতীয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ হচ্ছে নেদারল্যান্ডস-ইকুয়েডর (এ-গ্রæপ)। দুদলই তাদের প্রথম ম্যাচে জিতে ভালো সূচনা করেছে। নেদারল্যান্ডস অনেক ভালো দল। তাদের র‌্যাঙ্কিং আট। সেই নব্বইয়ের দশকে রুড গুলিট, মার্কো ভ্যান বাস্তেন, ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড, ডেনিস বার্গক্যাম্প, তারপর রবিন ভ্যান পার্সির মতো দুর্দান্ত খেলোয়াড়দের খেলা দেখেছি। তারাই একমাত্র দল, যারা তিনবার ফাইনালে উঠেও জিততে পারেনি! বড়ই অভাগা! তবে তারা অনেক অভিজ্ঞ দল। 

ইকুয়েডর-সেনেগাল দুদলই সমমানের। এদের মধ্যে একটি দল দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে ইকুয়েডরের সম্ভাবনা বেশি মনে হচ্ছে। তাদের আছে অধিনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়ার মতো দুর্দান্ত স্ট্রাইকার। 

চতুর্থ ম্যাচের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড বনাম যুক্তরাষ্ট্র (বি-গ্রæপ)। তারা এ পর্যন্ত ১১ বার মুখোমুখি হয়েছে। ইংল্যান্ড জিতেছে ৮ বারই। দুবার হেরেছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড কিন্তু এখনো যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে পারেনি! ১৯৫০ আসরে তারা হারে ১-০ গোলে, ২০১০ আসরে ১-১ গোলে ড্র করে। তবে এগুলো পরিসংখ্যান মাত্র। বাস্তবতা হচ্ছে ১৬ র‌্যাঙ্কিংধারী যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ৫ র‌্যাঙ্কিংধারী ইংল্যান্ড অনেক শক্তিশালী। তবে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ দুর্বল ছিল। সে তুলনায় তাদের আজকের প্রতিপক্ষ একটু শক্তিশালী। ইংল্যান্ডের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, তাদের রিজার্ভ বেঞ্চও অনেক শক্তিশালী। তারা সেমিফাইনালে যাওয়ার মতো দল। এই গ্রæপ থেকে ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রই নকআউট পর্বে যাবে বলে আমার ধারণা। আজকের ম্যাচটিতে অনেক ফাইট হবে। 

এবারের বিশ্বকাপে ভিএআর সিস্টেম প্রয়োগের ফলে গোলের সংখ্যা অনেক কমে যাবে এবং ম্যাচের গতি মন্থর হয়ে যাবে বলে যারা বলছেন, তাদের সঙ্গে একমত নই। ভিএআর সিস্টেমের কারণে খেলা অনেক নিখুঁত হবে এবং বিতর্ক হবে না। আর খেলার গতি কম হওয়ার প্রসঙ্গে বলব, ৯০ মিনিটের ম্যাচে তো খুব বেশিবার ভিএআর সিস্টেম প্রয়োগ করা হয় না। ভিডিও দেখার ১৫/২০ সেকেন্ডের মধ্যেই তো রেজাল্ট জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। কাজেই খেলার গতি মন্থর তো সেভাবে হচ্ছে না। এটা ভালো প্রযুক্তি। আমি এর পক্ষে। 
 

এসআর

×