
টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস
বিশ্ব ক্রীড়ার ইতিহাসে কিংবদন্তি এ্যাথলেটদের অন্যতম একজন সেরেনা উইলিয়ামস। কোন ধরনের বিতর্ক ছাড়াই মেয়েদের টেনিসে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। একক ও দ্বৈত মিলিয়ে তার নামের পাশে ৩৯টি গ্র্যান্ডস্লাম। মোট শিরোপা জয়ের সংখ্যা ৯৬। অলিম্পিকেও রয়েছে তার চার স্বর্ণপদক।
সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৩১৯ সপ্তাহ বিশ্ব টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটা দখল করে রেখেছিলেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে তার সময়ে একের পর এক কীর্তি গড়ে টেনিস ইতিহাসকেই যেন নতুন করে সাজানোর পাশাপাশি সমৃদ্ধ করেছেন সেরেনা উইলিয়ামস।
তবে বয়সের ভারে সেই ধার এখন আর নেই তার। বয়স ৪১ ছুুঁইছুঁই। সর্বশেষ গ্র্যান্ডস্লাম জিতেছিলেন ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। এরপর কেটে গেছে প্রায় ছয় বছর। কিন্তু এই সময়টাতে টেনিস কোর্টে আসল সেরেনাকে আর খুঁজে পায়নি তার ভক্ত-অনুরাগীরা। যে কারণে টেনিসবোদ্ধাদের অনেকেই শেষ দেখে ফেলেছিলেন সেরেনা উইলিয়ামসের। অবশেষে আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি নিজেই জানিয়ে দিলেন তার অবসরের পরিকল্পনা।
ফ্যাশন সাময়িকী ভোগের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় টেনিস থেকে অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হবে ইউএস ওপেন। সেই টুর্নামেন্টের শেষেই অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারেন উইলিয়ামস পরিবারের ছোট মেয়ে। ভোগের নতুন সংখ্যায় তিনি লিখেছেন, ‘আমার জন্য টেনিস থেকে অবসর নেয়া সবচেয়ে কঠিন বিষয়। আমি চাই না টেনিস ক্যারিয়ার শেষ হোক। তবে একইসঙ্গে আমার জন্য সামনে যা অপেক্ষা করছে তার জন্যও আমি প্রস্তুত।’
সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের সময়ই ৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন সেরেনা উইলিয়ামস। সে বছরের সেপ্টেম্বরেই প্রথম কন্যা সন্তানের মা হন এ্যালেক্সিস ওহানিয়ান এবং সেরেনা উইলিয়ামস দম্পতি। টেনিস ক্যারিয়ারকে দারুণভাবে উপভোগ করা আমেরিকান টেনিসের এই কৃঞ্চকলি এখন মা হিসেবেও নিজের দায়িত্বে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে চান। তবে সিদ্ধান্তটা তার জন্য বেশ কঠিন। সেটাও নিজের ইন্সটাগ্রাম পোস্টে জানিয়েছেন তিনি।
সেখানে লিখেছেন, ‘জীবনে এমন একটি সময় আসে যখন ভিন্ন কিছুর চিন্তা করতেই হয়। আর ঐ সময়টা সবসময়ই কঠিন। বিশেষ করে নিজের প্রিয় কিছু বিষয়কে যখন বিদায় জানাতে হয়। টেনিসের প্রতিটি মুহূর্ত আমি দারুণভাবে উপভোগ করেছি। কিন্তু এখন ক্ষণগণনা শুরু। আমি এখন মা হিসেবে নিজের দায়িত্বটার দিকে বেশি গুরুত্ব দিব। পরিবারকে সময় দিব।’
টেনিস থেকে কী অর্জন করেননি সেরেনা উইলিয়ামস? যে কারণেই প্রিয় খেলাটা থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে অবসর হিসেবে না দেখে বরং জীবনেরই বাঁকবদল হিসেবে দেখছেন তিনি। সেরেনার ভাষ্যমতে, ‘অবসর শব্দটা কখনোই আমার পছন্দ ছিল না। এটাকে আমার ঠিক আধুনিক শব্দ মনে হয় না। আমি বরং এটাকে ক্রান্তিকাল হিসেবেই ভাবি। তবে আমি এই শব্দটাও খুব ভেবেচিন্তে ব্যবহার করতে চাই।
কারণ এই শব্দটা বিশেষ কিছু জনগোষ্ঠীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে। আমি যা করতে যাচ্ছি সেটাকে বরং বিবর্তন শব্দ দিয়েই ভালভাবে বোঝানো যায়। আমি এখানে এটাই বলতে চাই। আমি টেনিস থেকে বেরিয়ে অন্য কিছুতে বিবর্তিত হচ্ছি। এমন কিছু যেগুলো আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবারের উইম্বলডনে আমি পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম না। এখনো জানিনা নিউইয়কের জন্যও আমি প্রস্তুত কিনা। কিন্তু সেখানে অবশ্যই ভাল কিছু করার চেষ্টা করব।’ ছেলেদের মধ্যে টেনিসের ওপেন যুগে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডস্লাম জয় রাফায়েল নাদালের। পুরুষ এককে ২২টি গ্র্যান্ডস্লাম জিতেছেন স্প্যানিশ টেনিস তারকা। যেখানে জোকোভিচের ২১ আর কিংবদন্তি রজার ফেদেরারের ২০। অথচ সেরেনার নামের পাশে গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের সংখ্যা ২৩টি! সর্বকালের অন্যতম সেরা এই টেনিস তারকা ১৯৯৫ সালে পেশাদার টেনিসে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপরের গল্পটা ঠিক রূপকথার মতোই।
১৯৯৯ সালে ইউএস ওপেন জয়ের মাধ্যমেই ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম উঁচিয়ে ধরেছিলেন তিনি। যখন তার বয়স মাত্র ১৭! পরবর্তীতে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ৭টি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ৩টি ফ্রেঞ্চ ওপেন, ৭টি উইম্বলডন এবং ৬টি ইউএস ওপেন জয় করেন সেরেনা উইলিয়ামস। যদিও মার্গারেট কোটের গড়া সর্বকালের সর্বোচ্চ ২৪ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের ইতিহাস স্পর্শ করা হয়নি তার। তবে চেষ্টার কমতি ছিল না সেরেনার। এই কীর্তির বেশ কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েকবারই তীরে এসে তরী ডুবে যায় তার। ইনজুরির কারণে দীর্ঘদিন কোর্টের বাইরে ছিটকে পড়েছিলেন তিনি। গত জুনে ইস্টবোর্নে ডাবলস খেলার মাধ্যমে আবারও কোর্টে ফিরেন। তারপর উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়। সর্বশেষ সোমবার ১৮ মাস পর প্রথম হার্ড কোর্টের ম্যাচে খেলেন সেরেনা। টরেন্টো মাস্টার্সে স্পেনের নুরিয়া পারিজাস দিয়াজকে হারিয়ে। ২০২১ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনের ১৪ মাস পর এটাই তার প্রথম এককের ম্যাচ জয়। আগামী সপ্তাহে সিনসিনাতি মাস্টার্সের পর ইউএস ওপেনেও খেলবেন সেরেনা উইলিয়ামস।