ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড অঙ্ক কষছে দু’দলই

অপেক্ষা এবার ঢাকা টেস্টের

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

অপেক্ষা এবার ঢাকা টেস্টের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম টেস্ট শেষ। দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সমান তালে লড়াই করে গেছে। শেষটা আর বাংলাদেশের ভাগ্যে জুটেনি। তাই ২২ রানে হার হয়েছে। এবার ঢাকা টেস্টে নামার পালা। শুক্রবার শুরু হবে এই টেস্ট। যেটি আবার সিরিজ ফয়সালার টেস্ট। চট্টগ্রাম থেকে এরই মধ্যে ঢাকায় এসে পড়েছেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। আজ অনুশীলনেও নামবেন ক্রিকেটাররা। এরপর মাঝখানে আরেকদিন অনুশীলন করেই দ্বিতীয় টেস্টে নেমে যেতে হবে। এ টেস্টের জন্য ইংল্যান্ড দল অপরিবর্তিত থাকলেও বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন এসেছে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নেয়া হয়েছে। যাকে প্রথম টেস্টেই দলে রাখার কথা জানা গিয়েছিল। এরপর পেসার শফিউল ইসলামের পরিবর্তে নেয়া হয়েছে আরেক পেসার শুভাশীষ রায়কে। প্রথম টেস্টে জিতে ১-০ ব্যবধানে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুইদিন পর শুরু হতে যাওয়া টেস্টে হারলে আবারও হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ। এরআগে টেস্টে চারবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলে প্রতিবারই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। এবার হারলে সাড়ে ছয় বছর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নেমেও সেই একই নিয়তি হবে। তবে এবারের হারটিতে থাকবে আনন্দ। চট্টগ্রাম টেস্টেই সে আনন্দ মিলে গেছে। আরেকটু উইকেটে যদি টিকে থাকতে পারতেন সাব্বির রহমান রুম্মন ও তাইজুল ইসলাম। তাহলে হয়ত টেস্ট জয় নিয়েই ইতিহাস গড়তে পারত বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রায় ১৬ বছর হয়ে গেল। এই দীর্ঘ সময়ে যে কাজটি করতে পারেনি বাংলাদেশ, সেটিই করার পথে এগিয়ে গিয়েছিল। আর ৩৩ রান করতে পারলেই ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো টেস্টে কুপোকাত করে দিত বাংলাদেশ। সেটি করতে পারলে ইতিহাসই গড়ে ফেলত। ২১৫ রানের বেশি টার্গেটে বাংলাদেশ যে কখনই জিততে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ পারল না। ইতিহাস বদলাতে পারল না। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সেরা জয়টিও শেষ পর্যন্ত মিলল না। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৯৩ রান করেছিল ইংল্যান্ড। বাংলাদেশও প্রথম ইনিংসে তা অতিক্রম করার মতো অবস্থায় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৪৮ রানে গুটিয়ে যায়। পিছিয়ে পড়ে প্রথম ইনিংসেই ৪৫ রানে। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে খেলে বিপাকে পড়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রান যোগ করতে পারে। বাংলাদেশের সামনে জিততে ২৮৬ রানের টার্গেট দাঁড় করায়। সেই টার্গেটে খেলতে নেমে মুশফিক ও সাব্বির মিলে দলকে জেতানোর স্বপ্নও দেখান। কিন্তু চতুর্থদিনের শেষভাবে এসে মুশফিক আউট হয়ে যান। সেখানেই বিপত্তি ঘটে। এরপরও সাব্বির ও তাইজুল মিলে চতুর্থদিন টিকে থাকেন। পঞ্চমদিনে জয়ের আশাও দেখান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৬৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। হারই হয় নিয়তি। তবে এ হারে গর্ব থাকে। ইংল্যান্ডকে যে এরআগে কখনই চাপে রাখা যায়নি। এবারতো পুরো টেস্ট জুড়েই ইংল্যান্ডকে বিপাকে ফেলে রেখেছে বাংলাদেশ। প্রায় ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমেই এমন পারফর্মেন্স দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে করে সবাই দলের ক্রিকেটারদের প্রশংসাই করছেন। বিশেষ করে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যে সাব্বির দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন, শেষ পর্যন্ত জয়ের আশা দেখিয়ে গেছেন, অপরাজিত ৬৪ রান করেছেন; তার প্রশংসাই সবার কণ্ঠে মিলছে। প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেতো সাব্বিরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বলেছেন, ‘আমি অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ টেস্ট ম্যাচ দেখেছি। তার মধ্যে এটিকেও অন্যতম সেরা ম্যাচ হিসেবে রাখব। এই উইকেটে খেলা অনেক কঠিন। কিন্তু আমার ছেলেরা দুর্দান্ত খেলেছে। বিশেষ করে সাব্বির অনেক চাপের মধ্যেও দুর্দান্ত খেলেছে।’ শুধু সাব্বিরই নন, অন্যদের প্রশংসাও করেছেন হাতুরাসিংহে, ‘মুশফিক, ইমরুল ও তামিম খুব ভাল ইনিংস খেলেছে।’ তবে সবার মনেই প্রশ্ন জেগেছে। ম্যাচটি বাংলাদেশেরই জেতার কথা। কিন্তু হার হলো কোথায়? সবারই বোঝা হয়ে গেছে। চতুর্থদিনে যে বাংলাদেশের হাতে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট ছিল, সেই উইকেটগুলো মাত্র ২৭ রানেই পতন ঘটল; সেখানেই পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ। তবে এ টেস্ট থেকে অনেক শিক্ষা মিলেছে। যা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারবেন ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমই সেই ভুলগুলো সম্পর্কে জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘আগেও বলেছিলাম, আমরা যেন পাঁচদিন ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলতে পারি। আমার মনে হয়, আমরা পুরো টেস্টে ৯২ থেকে ৯৫ শতাংশ ভাল ক্রিকেট খেলেছি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘জিতলেই যে আমরা টেস্টে আহামরি দল হয়ে যেতাম, তা নয়। আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, সেটা অর্জন করতে পেরেছি। চারটি দিন ওদের সঙ্গে প্রায় সমানে সমান ছিলাম। আমাদের আরও বেশি দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলতে হবে। টেস্ট এমন একটি খেলা, যত খেলবেন ততই উন্নতি করার সুযোগ থাকে। খারাপ খেলার শঙ্কা কমে আসে। তত বেশি আপনি বুঝবেন ক্রিকেটে আপনাকে এভাবে রান করতে হবে, কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে ব্যাটিং-বোলিং করতে হবে। আমি যে ৪৯টি টেস্ট খেলেছি, প্রতিটি ম্যাচই নতুন মনে হয়েছে। তাহলে যার অভিষেক হয়েছে, তাকে কিভাবে বলব তোমরা এভাবে খেল! ম্যাচটা আমাদের শেখার অনেক সুযোগ দিয়েছে। এ ধরনের উইকেটে আমরা বুঝতে পারব কোন সময়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, প্রতিপক্ষকে কত রানের ভেতর রাখতে পারলে ভাল হবে, চতুর্থ ইনিংসে কতটা রান তাড়া করা সম্ভব।’
×