একাধিক প্রতিভাবান খেলোয়াড় নিয়ে গড়া এআরবিসি দল মাতাচ্ছেন এবারের নারী ফুটবল লিগ
বাংলাদেশে নারী ফুটবল লিগের চলছে ষষ্ঠ আসর। আগের পাঁচ আসরে এত বেশি ‘মুড়িমুড়কি’র মতো গোল হয়েছে এবং এত বেশি একপেশে হয়েছিল যে, কোনোভাবেই ওই লিগগুলোকে মানসম্পন্ন বলা যায় না। এবারের লিগের শুরুতেও অবস্থাটা এমনই ছিল।
কিন্তু যতই সময় গড়িয়েছে, ততই পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। অঘটন ঘটেছে একাধিক ম্যাচে। অল্প কয়েকটি ম্যাচে গোলবন্যা বয়ে গেলেও একাধিক ম্যাচে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। দেখা গেছে, বেশকিছু জুনিয়র ও নতুন ফুটবলারের ঝলক।
বসুন্ধরা কিংস ছিল গত তিন লিগের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন। এবার তারা অংশ নিচ্ছে না। কিন্তু দলটির ১৫ ফুটবলার (যারা সবাই জাতীয় দলের) নাসরিন স্পোর্টিং ক্লাবে যোগ দেওয়ায় নাসরিনই এখন লিগের টপ ফেভারিট দল। কিন্তু তারা ইতোমধ্যেই ড্র করেছে একটি ম্যাচে।
আর তাদের রুখে দিয়েছে (২-২) আতাউর রহমান ভূঁইয়া কলেজ (এআরবিসি) স্পোর্টিং ক্লাব, যারা গত দুই লিগে রানার্সআপ হলেও বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে বিন্দুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। এআরবিসিতে আছেন মাত্র তিন ফুটবলার, যারা সিনিয়র জাতীয় দলে খেলেছেন (তহুরা খাতুন, আফঈদা খন্দকার ও স্বপ্না রানী)।
বাকিরা সবাই বয়সভিত্তিক দলের। তাদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছেন মোসাম্মৎ সাগরিকা, যিনি ১০ গোল করে সতীর্থ তহুরার সঙ্গে এ পর্যন্ত যুগ্মভাবে শীর্ষে আছেন। এ ছাড়া দুর্দান্ত খেলছেন সৌরভী আকন্দ প্রীতি, যিনি এ পর্যন্ত করেছেন ৬ গোল। ভালো খেলছেন শাহেদা আক্তার রিপা, হালিমা আক্তার, মুনকি আক্তার। এ পর্যন্ত লিগে যে ৮টি হ্যাটট্রিক হয়েছে, তার ৩টি-ই করেছেন সাগরিকা। সাগরিকা-সৌরভী জুটিকে আগামী দিনে জাতীয় দলের প্রধান স্ট্রাইকিং হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
এবারের লিগে নতুন দল হিসেবে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ আর্মি স্পোর্টস ক্লাব। দলটির কোচ হচ্ছেন গোলাম রব্বানী ছোটন, যিনি জাতীয় দলের সাবেক কোচ। ছোটনের কোচিংয়ে এবারের লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই আর্মি চমক দেখায় এআরবিসিকে হারিয়ে।
এই দলে রয়েছেন একঝাঁক প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়, যাদের জাতীয় দলে খেলার যোগ্যতা রয়েছে। ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সুলতানা এখন পর্যন্ত ৯ গোল করেছেন। অধিনায়ক মেহেনূর আক্তার মিম, গোলরক্ষক ফারজানা আক্তার, উন্নতি খাতুন, ইতি আক্তার, তনিমা বিশ্বাস, থু¤্রাচিং মারমা, মাহফুজা আক্তার, নওশন জাহান প্রতি ম্যাচেই ভালো খেলছেন।
তবে আর্মির মতো দলও কিন্তু এবারের লিগে হোঁচট খেয়েছে। নিজেদের সর্বশেষ (পঞ্চম) ম্যাচে তারা সদ্যপুষ্করিণী যশোর স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায়। সদ্যপুষ্করিণী দলটি এখন পয়েন্ট টেবিলের মাঝামাঝি অবস্থানে (৯ দলের মধ্যে পঞ্চম) স্থানে আছে। এই দলের রুমা আক্তার, বৃষ্টি আক্তার, কাকলী সরেন ও মিলা আক্তার নজর কেড়েছেন।
এবারের লিগে আরেকটি দল অনেক ভালো খেলছে। তারা সিরাজ স্মৃতি সংসদ। গত ১০ জানুয়ারি তারা নাসরিন স্পোর্টস একাডেমির কাছে হারলেও জয়ী দলকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ২-১ গোলে হারাটাই বলে দেয় সব। দলের ফরোয়ার্ড আলপি আক্তার ইতোমধ্যেই করেছেন ৭ গোল (একটি হ্যাটট্রিকসহ)। থুইনুই মারমা করেছেন ৬ গোল।
এ ছাড়া আলো ছড়াচ্ছেন তাসপিয়া আক্তার তিশা ও নুসরাত জাহান মিতু। এবার লিগ শুরুর আগে ফুটবলমোদীদের দাবি ছিল- লিগে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলোর মহিলা লিগে খেলা বাধ্যতামূলক করার, প্রতিটি দলে জাতীয় দলের ৫ জনের বেশি ফুটবলার না নিয়ে ‘পুলপ্রথা’ করার এবং সর্বোচ্চ ২ জন বিদেশীকে খেলানোর। কিন্তু সেই দাবিগুলো দাবিই থেকে গেছে। বাফুফে এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেনি।