ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে বিদায় করে ফাইনালে নেপাল

কমলাপুরে নেপালি মেয়েদের উৎসব

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০১:০৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কমলাপুরে নেপালি মেয়েদের উৎসব

কমলাপুর স্টেডিয়ামে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয়া নেপালি নারী ফুটবলারদের উল্লাস

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম। ভুটানি রেফারি ইয়াংখেই শেরিং খেলা শেষে বাাঁশি বাজাতেই নেপাল দলের সব ফুটবলার ও কোচিং স্টাফ মাঠে শুরু করে দিলেন বিজয়-উল্লাস। পুরো মাঠ দৌড়ে তারা গ্যালারির সামেন গিয়ে দর্শকদের অভিবাদনও নিলেন। তাদের আবেগময় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলকে হারালে তো উচ্ছ্বাসটা এমন হওয়ারই কথা। হ্যাঁ, মঙ্গলবার হিমালয়কন্যার দেশ নেপাল ৩-১ গোলে হারিয়েছে টুর্নামেন্টের ফেভারিট ও বর্তমান শিরোপাধারী ভারতকে।

বিজয়ী দল খেলার প্রথমার্ধে ০-১ গোলে পিছিয়ে ছিল। এই জয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নাম লিখিয়েছে নেপাল। ৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ হারে ৬ পয়েন্ট তাদের। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে ১ জয়, ১ ড্র, ১ হারে ৪ পয়েন্ট ভারতের। নেপাল এই আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশের কাছে ১-৩ গোলে হেরে গেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানকে ৪-০ গোলে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। আর ভারত নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ১২-০ গোলে বিধ্বস্ত করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে হোঁচট খায়।
নেপালের জন্য এই জয়টা অনেক কৃতিত্বপূর্ণ, কেননা তারা ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও জয় কুড়িয়ে নিয়েছে। এই আসরে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল তারা। আর ভারতের কপাল মন্দ, এই ম্যাচে যেখানে তারা কমপক্ষে ড্র করলেই ফাইনালে উঠতে পারত, সেখানে তারা এগিয়ে গিয়েও অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যায়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আসরে ফাইনাল খেলেছিল নেপাল। সেই ফাইনালে তারা ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশের কাছে।

আর ভারত ২০২১ ও ২০২২ আসরে ফাইনাল খেলেছিল। ম্যাচ শেষে ভারত দলের কোচ মায়মল রকি বলেন, ‘এই ম্যাচের হারটা আমাদের জন্য ছিল অনেক শকিংয়ের। ম্যাচে আমরা ছোট ছোট অনেক ভুল করেছি। সেগুলোরই খেসারত দিয়েছি হেরে। আমাদের গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডারের ভুলে দুটি গোল হজম করেছি। অবশ্য একটা খেলায় এমনটা হতেই পারে।’ নেপালের কোচ ইয়াম প্রসাদ গুরুং বলেন, ‘আমরা এই ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছি ঠিকই। কিন্তু দলের সার্বিক খেলায় আমি সন্তুষ্ট নই।

আমার দলের খেলোয়াড়রা তাদের শতভাগ দিয়ে খেলতে পারেনি। সামর্থ্যরে ৬০ ভাগ দিয়ে খেলেছে। টার্ফের অবস্থা ভালো নয়। তারপরও আমরা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। ফাইনালে যদি বাংলাদেশকে পাই, তাহলে বলব, ওদের সঙ্গে আমরা বিভিন্ন বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় একাধিকবার মুখোমুখি হয়েছি। কাজেই তাদের সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা আছে।’
গুরুং আরও বলেন, ‘আমরা এই টুর্নামেন্টে শুরুটা করেছিলাম হার দিয়ে। তারপর টানা দুই ম্যাচে জিতেছি। তার মানে আমরা প্রতিনিয়ত উন্নতি করেছি। আশাকরি ফাইনালেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারব।’ 
অপূর্ণা নারজারি ম্যাচের ২১ মিনিটে গোল করে ভারতকে এগিয়ে দেন (১-০)। এই গোল করেই তারা যেন অনেকটা ‘হাল্কা মুডে’ খেলতে থাকে। হয়তো তারা নেপালকে সিরিয়াসলি নেয়নি। এই সুযোগটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে নেপাল। প্রথমার্ধে সমতায় ফিরতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর তিন মিনিটের (৪৮ মিনিটে) মধ্যেই গোল করে সমতায় ফেরে তারা অঞ্জলি চাঁদের চমৎকার গোলে (১-১)। কিন্তু তাতে ভারত দলকে তেমন দিশেহারা বা বিচলিত মনে হয়নি।

কেননা তাদের তো ড্র করলেই চলে। এভাবেই গড়িয়ে যায় আরও কয়েক মিনিট। যখনই মনে হচ্ছিল খেলাটি শেষ পর্যন্ত ড্র হতে যাচ্ছে, তখনই গোল করে লিড নেয় নেপাল। ম্যাচের তখন ৬৯ মিনিট। পেনাল্টি পায় নেপাল। আর তা থেকে গোল করতে কোন ভুল করেননি অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড প্রীতি রায় (২-১)। এই গোলের পর আরও বেশি উজ্জীবিত হয়ে খেলতে থাকে নেপাল। একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে ভারতকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে তারা।

কোথায় গোল শোধ করবে ভারত, তা না, উল্টো ম্যাচের ৮৯ মিনিটে গোল খেয়ে হার নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। প্রীতি রায়ের অসাধারণ এক অ্যাসিস্টে গোল করেন ফরোয়ার্ড আমিশা কারকি (৩-১)। আর এই জয়েই ফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়ে যায় হিমালয়ের দেশ নেপালের।

×