ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পর্তুগালের হাসি নাকি মরক্কোর নতুন ইতিহাস?

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ২২:১৯, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

পর্তুগালের হাসি নাকি মরক্কোর নতুন ইতিহাস?

অনুশীলনে পর্তুগালের দুই সিনিয়র ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো ও পেপে

কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের সেরা চমক মরক্কো। আসরের শুরু থেকেই একের পর এক চমক উপহার দিয়েই স্বপ্নের বিশ্বকাপের শেষ আটে জায়গা করে নেয় তারা। সেমিফাইনালে উঠার পথে আজ আবারও মাঠে নামছে আফ্রিকার দেশটি। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হট ফেভারিট পর্তুগাল। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে একে অপরের মুখোমুখি হবে এই দুই দল। শেষ আটের লড়াই শেষে কে হাসবে শেষের হাসি? দুর্দান্ত ছন্দে থাকা পর্তুগাল না কি আরও একবার অঘটনের জন্ম দিয়ে নতুন রূপকথার জন্ম দিবে মরক্কো? ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার। 

এবারের বিশ্বকাপটা যেন ঠিক স্বপ্নের মতোই কাটছে মরক্কোর। প্রথমবারের মতো বিশ্ব সেরার মঞ্চে কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলছে আফ্রিকার দলটি। যার শুরুটা করেছিল রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ে। পরে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরের দল বেলজিয়ামকে তো ২-০ গোলে উড়িয়ে দেয় তারা। কঠিনতম ‘এফ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে কানাডার বিপক্ষেও ২-১ গোলে জিতে নক আউট পর্বের টিকিট কাটে। আর শেষ ষোলোতে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে পেনাল্টি শুটআউটে হারিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ে আফ্রিকান জায়ান্টরা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় ওয়ালিদ রিগ্রাগুইয়ের দল। আফ্রিকার ইতিহাসে চতুর্থ দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার নজির এখন মরক্কোর। ১২ বছরের মধ্যে প্রথম। সর্বশেষ ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল ঘানা। ৩৬ বছর আগে আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর টিকিট কেটে ইতিহাস গড়েছিল মরক্কো। সেই মরক্কোর সামনেই এবার আরও এক কীর্তির হাতছানি। আফ্রিকা এবং আরবের প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ এখন তাদের সামনে।
সেই পথে বড় বাধা আজ পর্তুগাল। ফেভারিটের তকমা গায়ে মেখেই যারা কাতার বিশ্বকাপের মিশন শুরু করে। প্রথম ম্যাচে ঘানার পর দ্বিতীয় ম্যাচে উরুগুয়েকে হারিয়েই যারা এবারের বিশ্বকাপের তৃতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু গ্রুপের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে যায় পর্তুগাল। ফলে রোনাল্ডো-ফার্নান্দেজদের পারফর্মেন্স নিয়ে কিছুটা নেতিবাচক আলোচনা হতে দেখা যায়। কিন্তু শেষ ষোলোতেই দেখা যায় ভিন্ন পর্তুগালকে। শক্তিশালী সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে রীতিমতো গোল উৎসব করে তারা। শেষ পর্যন্ত সান্তোসের দল ম্যাচটা জিতে ৬-১ গোলের বড় ব্যবধানে। এই ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোও পেয়ে যান ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতার স্বাদ। সিআর সেভেনকে বেঞ্চে রেখেই যে প্রথম একাদশ সাজান পর্তুগাল কোচ! আবার তার বদলি হিসেবে যাকে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সুযোগ করে দেন সেই রামোসই করেন বাজিমাত। দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক উপহার দিয়ে দলকে উপহার দেন বড় জয়ের স্বাদ।

সেইসঙ্গে প্রথম হ্যাটট্রিকও দেখার সুযোগ পায় কাতার বিশ্বকাপ। ফলে বৈশ্বিক আসরে কখনো ফাইনাল খেলতে না পারা পর্তুগাল এখন দারুণ ছন্দে। ২০১৬ ইউরোর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পর্তুগাল। বিশ্ব মঞ্চে ১৯৬৬ সালে অভিষেক দলটি কখনোই বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়নি। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে তাদের সেরা সাফল্য সেমিফাইনাল। এবার তাদের প্রত্যাশা অতীত ইতিহাস বদলানোর। তাছাড়া এটাই পর্তুগালের সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর শেষ বিশ্বকাপ। ভক্ত-অনুরাগীদেও বিশ্বাস শেষ বিশ্বকাপটা যেন রাঙিয়েই দেন সিআর সেভেন। যদিওবা কাতারে খুব বাজে সময় কাটছে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই তারকা ফুটবলারের। এখন পর্যন্ত একটি মাত্র গোলের দেখা পেয়েছেন তিনি। তাও আবার পেনাল্টির সৌজন্যে। শেষ ষোলোতে বেঞ্চে বসে থাকার কারণেও রোনাল্ডো সন্তুষ্ট নন বলে গুঞ্জন। কোচের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে বলেও শুনা যায়। আজ মাঠে নামলে নতুন কীর্তির হাতছানি সিআর সেভেনের। একটি গোল করলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন বিশ্বকাপে পর্তুগালের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করা কিংবদন্তি ইউজেবিওকে। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ৯ গোল করেছিলেন তিনি।
মুখোমুখি লড়াইয়ে দুই দলের পারফমেন্সই সমানে সমান। এখন পর্যন্ত দুইবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে পর্তুগাল-মরক্কো। দুইবারই বিশ্বকাপে। ১৯৮৬ সালে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল তারা। সেবার গ্রুপ পর্বে মরক্কো ৩-১ গোলে পর্তুগিজদের হারিয়ে দেয় আফ্রিকার দলটি। সর্বশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপেও মুখোমুখি হয় এই দুই দল। এবার সেই হারের প্রতিশোধটা দারুণভাবেই নিয়ে নেয় পর্তুগাল। ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর একমাত্র গোলেই মরক্কোকে হারায় ফার্নান্দো সান্তোসের দল। ফলে আজ যারা জিতবে তারাই এগিয়ে যাবে মুখোমুখি লড়াইয়ে। পর্তুগাল অবশ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই খেলা শেষ করতে চাইবে। কেননা, মরক্কোর যে রয়েছে গোলরক্ষক বউনু ইয়াসিন। পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে যিনি আড়াল করে রাখেন গোলপোস্ট। তার অসাধারণ নৈপুণ্যের কারণেই কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর জালে এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষ একবারও বল পাঠাতে পারেনি। চার ম্যাচে তারা একমাত্র গোলটি হজম করেছে গ্রুপ পর্বে কানাডার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানের ম্যাচে; আত্মঘাতী সেই গোলটি করেন ডিফেন্ডার নায়েফ আগের্দ।   
কাতার বিশ্বকাপে সিংহের মতো হুংকার ছেড়েই খেলছে মরক্কো। এর নেপথ্যে নায়ক বলা যেতে পারে ওয়ালিদ রিগ্রাগুইকে। কেননা, কোনো দলকে নকআউট পর্বে তোলা প্রথম আরব কোচ এই ওয়ালিদ। গত সেপ্টেম্বরেই মরক্কোর দায়িত্ব নেন তিনি। তার কোচিংয়ে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচ খেলে অপরাজিত আফ্রিকার দলটি। বড় চমকটা হতে পারে আজ। পারবেন কী পর্তুগালকে হারিয়ে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিতে? নাকি তাদের জয়রথ থামিয়ে রোনাল্ডো-ফার্নান্দেস-রামোসদের নিয়ে স্বপ্নের পথে হাঁটবেন পর্তুগালের অভিজ্ঞ কোচ ফার্নান্দো সান্তোস? অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার।

 

 

 

সম্পর্কিত বিষয়:

×