ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শুক্রবার শুরু কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াই

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০০:৪১, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

শুক্রবার শুরু কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াই

অনুশীলনে আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি

দেখতে দেখতে কাতার বিশ্বকাপে শেষের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। বিশ্বকাপের ৬৪ ম্যাচের মধ্যে ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ৫৬টি খেলা। ৩২ দলের মধ্যে বিদায় নিয়েছে ২৪ দল। টিকে আছে ৮টি দেশ। মজার বিষয়, টুর্নামেন্টের ম্যাচও বাকি আছে আর মাত্র ৮টি। এর মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে ৪, সেমিফাইনালে ২, তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ১টি এবং ফাইনাল মহারণ ১টি। আগামীকাল শুরু হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনাল অর্থাৎ শেষ আটের লড়াই।
সেমিফাইনালের টিকিট কাটার এই দ্বৈরথের শুরুতেই মাঠে নামছে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। কাতারের রাজধানী দোহার আল রাইয়ান এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে শুক্রবার রাত ৯টায় নেইমারদের বিরুদ্ধে খেলবে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা ক্রোয়েশিয়া।

এরপর রাত ১টায় আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবে টোটাল ফুটবলের জনক হল্যান্ড। শনিবার হবে বাকি দুই কোয়ার্টার ফাইনাল। যেখানে রাত ৯টায় চমক দেখানো আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন মরক্কোর চ্যালেঞ্জ নেবে দারুণ ফর্মে থাকা পর্তুগাল। এরপর রাত ১টায় শেষ আটের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও গত আসরের সেমিফাইনালে খেলা ইংল্যান্ড।
গ্রুপ পর্বে শক্তি-সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকা আন্ডারডগদের অভাবনীয় জয়ের হিড়িক দেখা গেলেও শেষ ষোলোতে এক ম্যাচ বাদে জিতেছে সব ফেভারিট দলই। এক মরক্কো ছাড়া সব দলই প্রত্যাশিত। তবে গ্রুপ পর্ব থেকে পারফরমেন্সের হিসেবে কষলে স্পেনকে বিদায় করে যোগ্য দল হিসেবেই শেষ আটে এসে ইতিহাস গড়েছে আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন মরক্কো।

বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইউরোপের প্রতিনিধিত্ব সবসময়ই বেশি থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। ইউরোপ থেকে আছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, গেলবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া, ইউরোর ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড, পর্তুগাল ও হল্যান্ড। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আছে রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ও কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। আফ্রিকার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আছে স্পেনের বিদায়ঘণ্টা বাজানো মরক্কো। এই মঞ্চে নেই এশিয়ার কোনো প্রতিনিধি। শেষ ষোলোতে এশিয়ার তিন দল জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া উঠে এলেও এখানেই থেমে গেছে তাদের পথচলা।
গ্রুপ পর্বের পর টুর্নামেন্টের যে ফরম্যাট তাতে ঠিকঠাক এগিয়ে গেলে সেমিফাইনালেই দেখা হবে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার। কোয়ার্টার ফাইনালে নেইমার ও লিওনেল মেসির দল জিতলেই কাক্সিক্ষত এ মহারণ দেখতে পাবে গোটা দুনিয়া। এর আগে ব্রাজিলের বাধা ক্রোয়েশিয়া ও আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ হল্যান্ড। তবে এই মুহূর্তে দলগুলো শেষ আটের লড়াই নিয়েই ভাবছে।

এই যেমন প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্রাজিলকে এড়াতে চেয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়া কোচ জøাটকো ডালিচ। কিন্তু তার সেই চাওয়া পূরণ হয়নি। বাঘের থাবাতেই পড়ে গেছে ডালিচের দল! তাই বলে ছেড়ে কথা বলবে না ক্রোয়েটরা। গতবার ফাইনালে খেলা দলটি প্রথমবারের মতো ব্রাজিলকে হারানোর স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে।
ক্রোয়েট কোচের চোখে ভয়ংকর এক দল ব্রাজিল। তবে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ভয় পাওয়ার কিছু দেখছেন না তিনি। শেষ ষোলোয় জাপানের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছে ক্রোয়েশিয়া।

একই দিন দক্ষিণ কোরিয়াকে স্রেফ গুঁড়িয়ে দেয় ব্রাজিল। ম্যাচের ৩৬ মিনিটের মধ্যে চার গোল করে ম্যাচ ৪-১ ব্যবধানে জিতে নেয় সেলেসাওরা। এখন শেষ আটের লড়াইয়ের আগে ক্রোয়েট কোচ বলেন, ব্রাজিল ফেভারিট। বিশ্বকাপে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সেরা দল ওরা। এখন পর্যন্ত যা দেখলাম, ওদের খেলোয়াড় নির্বাচন, ওদের মান ও সামর্থ্য, সত্যিই ভয়ংকর।

অনেক ভালো, মানসম্পন্ন ও দ্রুতগতির খেলোয়াড়দের নিয়ে দুর্দান্ত ফুটবল খেলা দলের বিরুদ্ধে আমাদের সামনে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। ২০১৮ বিশ্বকাপেও ডালিচের কোচিংয়ে খেলেছিল ক্রোয়েশিয়া। নকআউট পর্বের প্রথম তিন ধাপেই পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছিল তারা।
আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে আরেক ম্যাচে হল্যান্ডের যত চিন্তা মেসিকে ঘিরে। খুদে জাদুকরকে আটকাতে সেরা পরিকল্পনা নিয়ে নামতে হবে বলে জানিয়েছেন দলটির তারকা ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক ভার্জিল ভ্যান ডাইক। আন্তর্জাতিক ফুটবলে কখনো মেসির বিরুদ্ধে খেলা হয়নি ভার্জিলের। তবে ক্লাব পর্যায়ে সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে কয়েকবার।

আর্জেন্টাইন তারকার সামর্থ্য সম্পর্কে তাই ভালো করেই জানা আছে বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের সেরা এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের। যে কারণে মেসিকে আটকে রাখতে তাদের সেরা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে বলে মনে করেন তিনি। গ্যারেথ সাউথগেটের হাত ধরে দুটি বড় টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেললেও একটি জায়গায় বড় ঘাটতি রয়ে গেছে ইংল্যান্ডের। তা হলো দেশের বাইরে এখনো তেমন শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারাতে পারেনি ১৯৬৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে এই মলিনতা ঝেরে ফেলতে চান ইংলিশ কোচ। ৪৯ বছর বয়সী এই কোচ আশাবাদী, এবার ফরাসি বাধা
টপকাতে সক্ষম হবে তার দল। সাউথগেট বলেন, আমরা গত চার বা পাঁচ বছরে বেশ কিছু ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। এর সব যদিও খুব আহামরি কিছু নয়। এবার এটিই তাই বড় চ্যালেঞ্জ। এই মিশনে ইংলিশদের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হবে দুর্দান্ত
ফর্মে থাকা কিলিয়ান এমবাপেকে অকেজো করে রাখা। আর এটি সম্ভব বলে মনে করছেন ইংলিশ
মিডফিল্ডার জেমস ম্যাডিসন।

সম্পর্কিত বিষয়:

×