
ছবি: জনকণ্ঠ
দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে শেরপুরে চাঁদা দাবির অভিযোগে এক ভুক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলনের পর বহিষ্কার হয়েছেন জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হোসেন আলী (৩৫)। ১৩ জুলাই রবিবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চাঁদাবাজির সুস্পষ্ট অভিযোগে শেরপুর জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও শেরপুর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হোসেন আলীকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন। বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দের কোন ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নিবে না। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তাদের সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া মাত্রই কোনরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগে ১২ জুলাই শনিবার রাতে শেরপুর পৌর শহরের মাধবপুর এলাকার শরীফ আব্দুল্লাহর ছেলে মুদি দোকানদার সালমান আব্দুল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনে যুবদল নেতা মো. হোসেন আলীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে হোসেন আলীকে নানাভাবে চাঁদা দিতে হয়েছে তাকে। একপর্যায়ে চাঁদা দিতে না পারায় মাসখানেক ধরে তার দোকানটি বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ চাঁদা না পেয়ে শনিবার দুপুরে হোসেন আলী সালমান ও তার স্ত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ওই ঘটনায় শেরপুর সদর থানায় সালমান হোসেন আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেছেন। তিনি আরও বলেন, ৫ তারিখের আগে হোসেন আলী সিএনজি অটোরিকশা চালাতো। তবে এখন সিএনজি চালানো বাদ দিয়ে যুবদলের পরিচয়ে চাঁদা দাবিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত তিনি। পাল্টে গেছে তার বেশভুষাও। সালমান তার নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে যুবদল নেতা মো. হোসেন আলী দাবি করেন, সালমান একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাকে নিষেধ করার কারণে আমার উপরেই হামলা করে উল্টো মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। আমার বিরুদ্ধে মারধর বা চাঁদাদাবির প্রমাণ দিতে পারলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব।
এদিকে এ অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশনায় জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আতাহারুল ইসলাম আতা ও সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক পারভেজ আহমেদ সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী সালমানসহ তার পরিবারের সাথে কথা বলেন এবং অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর হোসেন আলীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আতারুল ইসলাম আতা বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়। হোসেন আলীর কর্মকাণ্ডে আমরা বারবার বিব্রত হয়েছি। বহুবার সতর্ক করেও কোনো ফল হয়নি। এ ধরনের পদক্ষেপ দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় অত্যন্ত জরুরি।
সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক পারভেজ আহমেদ বলেন, দলীয় পদ ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থে চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত কারও স্থান যুবদলে হতে পারে না। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আমরা সাহস পেয়েছি, এটি যুবদলের অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি প্রক্রিয়ার বড় পদক্ষেপ। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ নেতাকর্মীরা যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছিল, আজ সেই অন্যায়ের জবাব মিলেছে।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ পলাশ বলেন, অপরাধ করে কেউ দলের ছত্রছায়ায় থাকতে পারে না। দলীয় পরিচয়ে অপব্যবহার করে কেউ অপরাধ করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না, এটাই আমাদের বার্তা। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাজনীতিতে শৃঙ্খলা, নীতি ও আদর্শকে প্রাধান্য দেওয়া জরুরি। যুবদলের এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বার্তা বহন করে এবং দলীয় ঐক্য পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।
সাব্বির