ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শেষ আটের লড়াইয়ে মুখোমুখি হল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:২৭, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

শেষ আটের লড়াইয়ে মুখোমুখি হল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র

মিডিয়ার মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বারহাটলার

একদিকে তিনবারের রানার্সআপধারী হল্যান্ড, অন্যদিকে একবারের তৃতীয় স্থান অর্জনকারী যুক্তরাষ্ট্র। আজ শনিবার এই দুই দলের ম্যাচ দিয়েই শুরু হচ্ছে চলমান কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের নকআউট পর্বের খেলা। ব্রাজিলিয়ান রেফারি উইলটন সাম্পাইওর বাঁশি বাজলে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় খেলাটি মাঠে গড়াবে। ভেন্যু আল রাইয়ানের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম।

নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচ বিধায় যে দল জিতবে, স্বাভাবিকভাবেই সে দলই সবার আগে পৌঁছে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে। অষ্টম ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী ইউরোপের দেশ হল্যান্ড ‘টোটাল ফুটবল’-এর প্রবর্তক। সত্তরের দশকে এই ঘরানার ফুটবল খেলে তারা ফুটবলবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ফুটবলপ্রেমীদের মনে মুগ্ধতা জাগায়। কিন্তু ‘দ্য ফ্লাইং ডাচ্ম্যান’ খ্যাত হল্যান্ডের অদৃষ্টই মন্দ। এত সুন্দর-শৈল্পিক ফুটবল খেলেও তারা কখনো বিশ্বকাপের শিরোপাটা নিজেদের করে নিতে পারেনি। কখনো শিরোপা না জেতা দলের সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল খেলার রেকর্ড এটি। ১৯৭৪ আসরে পশ্চিম জার্মানির কাছে ২-১, ১৯৭৮ আসরে আর্জেন্টিনার কাছে ৩-১ এবং ২০১০ আসরে স্পেনের কাছে ১-০ গোলে হেরে গিয়ে কাঁদতে হয়েছিল তাদের। এবারও তারা কাঁদতে চায়। তবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে চরম সুখের কান্না! সেই লক্ষ্যে এবারের আসরে বেশ ভালো ফুটবল খেলে চলেছে তারা। এ-গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সেনেগালকে ২-০ গোলে হারিয়ে শুভসূচনা করে। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য ইকুয়েডরের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে হোঁচট খায়। তৃতীয় ম্যাচে আবারও ফেরে জয়ের ধারায়, হারায় স্বাগতিক কাতারকে ২-০ গোলে। ৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ ড্রতে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিশ্চিত করে শেষ ১৬ তে খেলা।
পক্ষান্তরে ‘দ্য স্টার অ্যান্ড স্ট্রাইপস্’ খ্যাত যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই তৃতীয় স্থান অর্জন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এটা অবশ্য সম্ভব হয়েছিল ওই আসরে মাত্র ১৩ দেশ এবং ইউরোপের মাত্র ৪টি দেশ (বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া এবং যুগোস্লাভিয়া) অংশ নেওয়ায়। সেবার গ্রুপপর্বের পর সরাসরি সেমিফাইনাল হয়েছিল। সেখানে আর্জেন্টিনার কাছে ১-৬ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে রূপকথার অভিযান থেমেছিল মার্কিনিদের। কনকাকাফ অঞ্চলের অন্যতম সেরা এই দলটি এরপর আর শেষ চার দূরে থাক, কোয়ার্টার ফাইনালের (২০০২) বেশি যেতেই পারেনি! দীর্ঘ ২০ বছর পর এবার তাদের সামনে আবারও শেষ আটে খেলার হাতছানি। ১৬ নম্বর ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী যুক্তরাষ্ট্র এবার গ্রুপ পর্বে দারুণ খেলেছে। একটা ম্যাচেও হারেনি! ওয়েলসকে আটকে দেয় ১-১ গোলে, ইংল্যান্ডকেও (০-০) তাই। আর ইরানকে হারিয়ে দেয় ১-০ গোলে। ১ জয় ও ২ ড্রতে ৫ পয়েন্ট নিয়ে বি-গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবে উঠে আসে রাউন্ড অব সিক্সটিনে। ফিফা বিশ্বকাপে এই প্রথম মুখোমুখি হবে তারা। তবে ১৯৯৮-২০১৫ পর্যন্ত দুই দল পরস্পরের সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে ৫টি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে। যাতে জয়ের পাল্লা ভারি ডাচ্বাহিনীরই, তারা জিতেছে ৪টিতেই। আর মার্কিন বাহিনীর জয় ১টিতে। আর ওই ম্যাচটিই ছিল দু’দলের সর্বশেষ মোকাবিলা।    
আজ ডাচ্বাহিনীর মূল ভরসা হবেন ফরোয়ার্ড ২৩ বছর বয়সী কোডি গাকপো। হল্যান্ডের ইতিহাসে তিনি মাত্র চতুর্থ ফুটবলার, এক আসরের  গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই গোল করেছেন। তাছাড়া চলমান আসরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩টি করে যে পাঁচজন গোল করেছেন, তাদের একজনও তিনি। পিএসভি আইন্দহোভেন তারকা গাকপো টানা চারটি বিশ্বকাপ ম্যাচে গোল করা প্রথম ডাচ্ম্যান হওয়ার জন্য আজ যে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই বিশ্বকাপে হল্যান্ডের খেলার ধরন নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন দেশটির ফুটবলপ্রেমীরা। কমলা জার্সিধারীরা এখন পর্যন্ত মাত্র আটটি শট গোলপোস্ট লক্ষ্য করে নিয়ে নিয়েছে। হল্যান্ড ১৯৩৪ সাল থেকে তাদের খেলা প্রতিটি বিশ্বকাপেই শেষ ১৬ তে খেলার অসাধারণ ধারা বজায় রেখেছে এবং তারা গত ৩২ বছরে মাত্র দুবার এই পর্যায়ে বাদ পড়েছে (১৯৯০ এবং ২০০৬)। তারা বিশ্বকাপে তাদের শেষ পাঁচ আসরের মধ্যে চারটিতেই অন্তত শেষ আটে পৌঁছেছে। চেক রিপাবলিকের কাছে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ২০২০ আসরে বাদ পড়ার পর থেকে, হল্যান্ড ১৮ ম্যাচ হারেনি। এক্ষেত্রে অবশ্যই কৃতিত্ব কোট লুইসস ভ্যান গালের। কেননা ১৮ ম্যাচেই তিনি কোচ ছিলেন (১৩ জয়, ৫ ড্র)। টাইব্রেকার ছাড়া, ভ্যান গাল কোচ হিসেবে তার ১০টি বিশ্বকাপ ম্যাচেই অপরাজিত। শুধু ব্রাজিলের ফেলিপ স্কোলারি (১২) এবং মারিও জাগালো (১১)-ই তার চেয়ে এগিয়ে।
আজকের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের জয়ের নায়ক হতে পারেন ২৪ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ান পুলিসিচ। গ্রুপের শেষ ম্যাচে তার গোলেই ইরানকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শেষ ১৬-এর টিকিট পায়। ২০১০ এবং ২০১৪ আসরে শেষ ১৬ থেকে বাদ পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মাইনাস পয়েন্ট হচ্ছেÑ বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে না পারা! ২০০২ সাল থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। হল্যান্ডের জন্য শুভ সমাচার হলোÑ তাদের ডিফেন্ডার জেরেমি ফ্রিম্পং চোট কাটিয়ে আবারও অনুশীলনে ফিরেছেন। আজ তার খেলার সম্ভাবনা আছে। তবে ডিফেন্ডার ম্যাথিজ ডি লিগট এবং নাথান আকে ঝামেলায় আছেন। আজকের ম্যাচে তারা হলুদ কার্ড পেলে সম্ভাব্য কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ মিস করবেন!
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, ইরানের বিরুদ্ধে জয়ের নায়ক পুলিসিচ চোট পান, তাকে প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করা হয়।

 

 

সম্পর্কিত বিষয়:

×