ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রপ্তানিতে নতুন মাত্রা

বিশ্বকাপ ফুটবলের জার্সি

জলি রহমান

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ১ ডিসেম্বর ২০২২

বিশ্বকাপ ফুটবলের জার্সি

জার্সি

একটি পাড়া বা মহল্লায় একই রং ও ডিজাইনের পোশাক হয়ত দু-একজনের সঙ্গে মিলতে পারে। ব্যতিক্রম ঘটে শুধু বিশ্বকাপ মৌসুমে। দলবেঁধে একই কালারের ড্রেস পরে ঘুরে সৌহার্দ্য প্রকাশ করার মাঝে দেখা যায় অন্যরকম আনন্দ। বিশেষ করে তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীরা প্রিয় দলের পোশাক পরতে পছন্দ করে। ৩২টি দেশ নিয়ে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হলেও দেশের প্রায় সকল খেলাপ্রেমীরাই দুুটি দলের সমর্থক। ক্রিকেটভক্ত মানুষগুলো ফুটবল উন্মাদনায় মেতে ওঠে এই সময়ে। যার প্রকাশ ঘটে পোশাকে। সেজন্য তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকরাও বিশ্বকাপ মৌসুমে ব্যস্ত সময় কাটায় জার্সি তৈরিতে।

শুধু যে দেশেই এই জার্সি পরা হয় তা নয়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরছে বাংলাদেশের তৈরি জার্সি। কোটি কোটি টাকার জার্সি রপ্তানি হচ্ছে দেশ থেকে। দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্পোর্টস ক্লাবের জন্য জার্সি তৈরি করছে বাংলাদেশী পোশাক কারখানাগুলো। শুধু ফুটবলপ্রেমীদের জন্যই নয়, ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ফিফা) খেলোয়াড়দের জন্যও জার্সি তৈরি করছে দেশীয় পোশাক শিল্প।
বাংলাদেশ থেকে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বা ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকার জার্সি রপ্তানি হয়েছিল। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ৭০ কোটি ডলারের। তুলনামূলক ২০১৮ সালে ৩০ কোটি ডলারের পণ্য বেশি পাঠিয়েছিল। এবারের রপ্তানি আয় আগের তুলনায় আরও ভালো হবে এমনটাই আশা করা যায়। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে আর্জেন্টিনায় ২৯ লাখ ১৮ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ২৯ কোটি টাকার সমান।

এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬০ শতাংশ বেশি। তার মানে আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশী পোশাক বিক্রি বেড়েছে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দেশের মধ্যেও জার্সির বাণিজ্য হয় রমরমা। বাজার থেকে জানা যায়, এবার বিক্রি হওয়া জার্সির প্রায় ৯০ শতাংশ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের। এ ছাড়া জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়ার জার্সির গ্রাহকও কম-বেশি আছে। তবে ফুটবল বিশ্বকাপের এই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন নামি-দামি ফুটবল ক্লাবের জার্সি বিক্রি কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

অনেকেই আবার প্রিয় দলের পাশাপাশি দেশের পতাকাও কিনে নিচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিক্রি ভালো হলেও লাভ কম। কারণ, একদিকে গ্যাসসংকটে দেশে উৎপাদন খরচ বেশি, অন্যদিকে পণ্য আমদানির ঋণপত্রও (এলসি) খোলা যাচ্ছে না। ফলে তাঁরা বর্তমানে জার্সির চাহিদা মেটাচ্ছেন দেশে উৎপাদিত পণ্যে। ফুটবলের বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের দল না থাকলেও দেশের দর্শকদের খেলার প্রতি বরাবরই থাকে তীব্র আগ্রহ। কাতার বিশ্বকাপেও সেটির ব্যতিক্রম হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রিয় দলের জার্সির রঙের পোশাক পরা ছবি চোখে পরার মতো।

জানা যায় অনলাইন মার্কেটেও এর বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। এর মধ্যে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা দামের জার্সির চাহিদা বেশি। প্রতি সপ্তাহে অনলাইনে ৫০০ টিরও বেশি জার্সি বিক্রির ক্রয়াদেশ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন একজন অনলাইন বিক্রেতা।
নভেম্বরের ২০ তারিখ থেকে নিয়মিত রাস্তার অলিতে-গলিতে দেখা যায় ভ্যানেই বিক্রি হচ্ছে জার্সি। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় এই বেচাকেনা, চলে রাত অবধি। রাজধানীর মগবাজারের রাস্তায় অনেক ভ্যানই দেখা যায়। তবে একটি ভ্যানের চারপাশে প্রায় সাত-আটজন লোক দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের অধিকাংশের গায়েই জার্সি আছে। তবুও কিনছে হয়ত কোনো প্রিয় মানুষের জন্য। ভ্যানের ছেলেটি শুধু লোকাল জার্সি বিক্রি করছে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জার্সিই বেশি দেখা যায় সেখানে। শর্টস্লিভগুলো ২৫০ এবং ফুল স্লিভগুলো ৩০০ টাকা।

কিশোর বয়সী ভ্যানের বিক্রেতা বলল, অফিসিয়াল জার্সি ১২শ’ টাকা, আমি সেগুলো বিক্রি করি না। এখান থেকে যারা কিনছে তারা এত দাম দিয়ে কিনতে চায় না। এরকম বেচাকেনা হয়ত চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জার্সিবাণিজ্য তৈরি পোশাক শিল্পে দিয়েছে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। ২০২৬ সালে তা কার্যকর হবে, এরপর আরও তিন বছর পর অর্থাৎ ২০২৯ সাল থেকে এলডিসিভুক্ত দেশের বাণিজ্য সুবিধা আর থাকবে না।  উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।


এ জন্য আমাদের রপ্তানি খাতকে সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত প্রায় ৮২ ভাগ অবদান রাখছে মোট রপ্তানি আয়ে। আশা করা যায়, ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক রপ্তানি থেকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও জার্সি ও স্পোর্টসওয়্যার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

×