ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাফজয়ী আট নারী ফুটবলারকে ময়মনসিংহে রাজকীয় সংবর্ধনা

নিজ এলাকায় উৎসবে বরণ নারী ফুটবলারদের

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ০০:১০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

নিজ এলাকায় উৎসবে বরণ নারী ফুটবলারদের

ময়মনসিংহে খোলা গাড়িতে ফুলের মালায় শোভিত নারী ফুটবলাররা

সাফজয়ী আট নারী ফুটবলারকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে ময়মনসিংহে। জেলা প্রশাসন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহের পুরনো ব্রহ্মপুত্র পাড়ের জয়নুল আবেদীন উদ্যানের বৈশাখী মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামের এই নারী ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত নারী ফুটবলাররা। সংবর্ধিত নারী ফুটবলারদের আগামীতে আরও বড় কোন আসরে দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

বৈশাখী মঞ্চের সংবর্ধনার সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি নগদ দুই লাখ টাকা, জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে এক লাখ ও প্রান্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আরও এক লাখ টাকা উপহার প্রদান করা হয়। এর আগে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ চার লাখ টাকা পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। এর বাইরে ক্রেস্টসহ নানা উপহার সামগ্রী সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
সংবর্ধনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী সাফজয়ী ময়মনসিংহের আট নারী ফুটবলারকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই বিজয় ময়মনসিংহবাসীর জন্য গৌরবের। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না’। নারী ফুটবলাদের এই বিজয় তারই প্রতিফলন। প্রতিমন্ত্রী তার বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সেদিন স্কুল পর্যায়ে বঙ্গমাতা কাপ চালুর ফসল নারী ফুটবলারদের এই শিরোপা জয়।

ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার শফিকুর রেজা বিশ্বাস বলেন, দলের আট নারী ফুটবলারই ময়মনসিংহের। এর চেয়ে বড় বিজয় ও গৌরব আর কী হতে পারে। ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামের নারী ফুটবলারদের শিরোপা জয়, নারী জাগরণের ফসল-জানালেন কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের কোচ মালা রানী দে।
সাফজয়ী ময়মনসিংহের আট নারী ফুটবলার বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ আসার পথে ভালুকা ও ত্রিশাল উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পথে পথে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষসহ স্থানীয় প্রশাসনের এমন ভালবাসায় আবেগাপ্লুত ও মুগ্ধ নারী ফুটবলাররা।

গোপালপুরে ভালবাসায় সিক্ত কৃষ্ণা রানী
ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ হাজারো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হলেন কৃষ্ণা রানী সরকার। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জয় করে গোপালপুর উপজেলার উত্তর পাথালিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে ঘরে ফিরছেন। তাই আনন্দের জোয়ারে যেন ভাসছে পুরো গ্রাম। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তর পাথালিয়া গ্রামে সাজসাজ রব পড়ে যায়।

কৃষ্ণাকে বরণ করে নেয়ার জন্য তাদের বাড়িতে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। গ্রামের শত শত মানুষ অপেক্ষা করে কৃষ্ণাকে এক নজর দেখার জন্য। কখন আসবে তাদের মেয়ে। প্রতীক্ষার পালা যেন তাদের শেষ হচ্ছিল না। কৃষ্ণাকে বরণ করার জন্য তৈরি ছিল গোপালপুর সূতী ভিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।  
গত ১৯ সেপ্টেম্বর নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ৩-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশকে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এনে দেন মেয়েরা। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে বাংলাদেশ ভাসে আনন্দের জোয়ারে। সেখানে কৃষ্ণা রানী সরকারের জোড়া গোলে স্বাগতিক নেপালকে পরাজিত করে। তাই সারাদেশের সঙ্গে টাঙ্গাইলের গোপালপুরেও আনন্দের বন্যা বইয়ে যায়।
ছোট ভাই পলাশ চন্দ্র সরকারকে সঙ্গে নিয়ে বেলা আড়াইটার দিকে একটি প্রাইভেটকারে চেপে গোপালপুর সূতী ভিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আসেন কৃষ্ণা। তখন স্কুলের শত শত শক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন।
কৃষ্ণা রানী সরকার বলেন, পৃথিবীর আলো দেখার পর কখনোই সুখের মুখ দেখিনি। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি, সেদিন থেকেই বাবাকে কষ্ট করতে দেখেছি। মা অনেক কষ্ট করেছে। এই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ফুটবল খেলতে হয়েছে। সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আজ এখানে আসতে পেরেছি। আমার এই সাফল্য কোচ ও শিক্ষকদের সহযোগিতার জন্য হয়েছে। আমি তাদের ও গোপালপুরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আরও ভাল খেলে দেশকে কিছু উপহার দিতে পারি সেজন্য সকলের দোয়া চাই।  
কৃষ্ণার মা নমিতা রানী সরকার বলেন, ফুটবল খেলার জন্য যারা মেয়েকে খারাপ বলত। আজ তারাই এসেছে সংবর্ধনা দিতে। এতে আমি খুব খুশি ও আনন্দিত। আমি দেশবাসীর কাছে কৃষ্ণার জন্য আশীর্বাদ কামনা করি। কৃষ্ণার বাবা বাসুদেব চন্দ্র সরকার বলেন, মেয়ের সাফল্যে খুব খুশি হয়েছি। এলাকার মানুষ ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। কৃষ্ণা যেন দেশের জন্য আরও গৌরব বয়ে আনতে পারে সেই আশীর্বাদ চাই।


শাহজাদপুরে আঁখিকে সংবর্ধনা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ ॥ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ দলের ডিফেন্ডার ফুটবলার আঁখি খাতুনের বাবা বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব  গোল্ডকাপের কারণেই বলেই আঁখির সৃষ্টি।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজাদপুর উপজেলা শহীদ স্মৃতি সম্মেলন কক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থার যৌথ আয়োজনে কৃতীদের দেয়া সংবর্ধনা সভায় এ কথা বলেন কৃতী ফুটবলার আঁখি খাতুনের বাবা মোঃ আকতার হোসেন। তিনি আরও বলেন, আজকে যে আঁখিকে দেশ-বিদেশে চিনছে, সেই আঁখি খুব সহজে তৈরি হয়নি।

সামাজিকভাবে ও নানা প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিয়ে তাকে সামনে এগোতে হয়েছে। আঁখিকে প্রতিনিয়ত বহু মানুষের উপহাস ও কটাক্ষ সহ্য করতে হয়েছে। আকতার হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ চালু করেছিলেন বলেই আজকের আঁখি খাতুনের সৃষ্টি হয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ মারুফ হাসান সুনামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্থানীয় এমপি প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতা আঁখির বাবাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই পুরুষশাসিত সমাজের সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যে আঁখি খাতুনের সৃষ্টি হয়েছে, সেই আজকে বিশ্ববাসীর কাছে নন্দিত হচ্ছে।

আঁখি খাতুন শাহজাদপুর ছাপিয়ে এখন পৃথিবীর সন্তান হয়ে উঠেছে। আঁখি এখন নারীদের কাছে এক অনুপ্রেরণা। আঁখি খাতুনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়ি করার জন্য জায়গা দিয়েছেন। সকল আইনী জটিলতা দূর করে সেই জায়গা আঁখি খাতুনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই বসবাস করার জন্য তাকে বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। এ সময় তিনি আঁখি খাতুনের জন্য নগদ এক লাখ টাকা উপহার ঘোষণা করেন।

রংপুরে ফিরে খুশি স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্না
নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ সাফ চ্যাম্পিয়নের পর নিজ জেলা রংপুরে ফিরে খুশির সংবাদ দিয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় সিরাত জাহান স্বপ্না। বিদেশী ক্লাবে খেলার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে এই তারকা খেলোয়াড় উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, রংপুরের মানুষ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে দেখে আমি খুবই আনন্দিত। এই সম্মান আমাকে সামনে ভাল করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। স্বপ্না বলেন, বিদেশী ক্লাবে খেলার জন্য মৌখিকভাবে সাতজনকে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে আমার নামও রয়েছে। আমিও বিদেশী ক্লাবে খেলব ইনশাআল্লাহ।
ফুটবলকন্যা সিরাত জাহান স্বপ্নাও ফিরলেন ঠিক যেন রানীর বেশে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা থেকে বিমানযোগে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান স্বপ্না, সোহাগী কিসকো ও স্বপ্না রানী রায়। সেখানে তাদেরকে রংপুর বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তা ব্যক্তিরা ফুল দিয়ে বরণ করে।
স্বপ্না বলেন, যখন আমি প্রথম ফুটবল খেলা শুরু করেছিলাম, তখন এলাকার অনেকে বাধা সৃষ্টি করেছিল। আমাদের সমাজের পুরুষরা চায় মেয়েরা পিছিয়ে থাক। এখন সাফল্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করছে। পরিবর্তন শুরু হয়েছে। সামনে আমাদের আরও ভাল করতে হবে। অপর সাফজয়ী খেলোয়াড় স্বপ্না রানী রায় জানান, শিরোপা ঘরে আনতে পেরে আমরা গর্ববোধ করছি। সামনে আরও ভাল কিছু করতে সবার সাপোর্ট চাই।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বরণের পর ছাদখোলা জিপ গাড়িতে সিরাত জাহান স্বপ্নাসহ তিন সাফজয়ী নারী ফুটবলারকে রংপুর নগরী প্রদক্ষিণ করানো হয়। এরপর রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে তাদের সংবর্ধনা দেয় রংপুর জেলা প্রশাসন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা।

×