
এশিয়া কাপের এই উল্লাস বিশ্বকাপে ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ ভারতের
১৯৮৩ সালে তৃতীয় বিশ্বকাপেই প্রথম শিরোপা জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন কপিল দেব। তাও ইংল্যান্ডের মাঠে। এরপর ট্রফি পুনরুদ্ধারে লেগে যায় ২৮ বছর! ২০১১ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্ব ঘটে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। কপিলের সেই দলটা এত ফেভারিট ছিল না, যতটা ছিল ধোনির দল। ১২ বছরের পথ পরিক্রমায় ফের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। এবার অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বলা হচ্ছে, আয়োজক ভারত এবার হট-ফেভারিট। সম্প্রতি পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে ফরম্যাটের এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে তারা। ইনজুরি কাটিয়ে দারুণভাবে ফিরে এসেছেন তারকা পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ ও উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লোকেশ রাহুল।
বাজে সময় পেছনে ফেলে অধিনায়ক রোহিতের ব্যাটে উতুঙ্গ হাওয়া। বড় তারকা বিরাট কোহলিকে নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। দুর্দান্ত উইলোবাজিতে একের পর এক রেকর্ড ভেঙে এগিয়ে চলা ওপেনার শুভমান গিল আছেন আলোচনায়। প্রতিটি পজিশনেই সেরাদের সেরা পারফর্মার নিয়ে সাজানো মোড়লদের স্কোয়াড।
রিকি পন্টিং থেকে যুবরাজ সিং, কেভিন পিটারসেন থেকে ওয়াসিম আকরাম, প্রায় প্রতিটি দেশের কিংবন্দি ক্রিকেটাররা একমত, সদ্যই তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে উঠে আসা দাপুটে ভারত এবার ঘরের মাটিতে শিরোপার অন্যতম দাবিদার। ১৯৮৩ সালে কপিল দেব শিরোপা জিতে চমক দেখালেও শচীন টেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, জাভাগাল শ্রীনাথ, অনিল কুম্বলেদের নিয়ে গড়া নব্বইয়ের দশকের ভারত দলটাকে মানা হতো আরও শক্তিশালী হিসেবে। কিন্তু শিরোপা পুনরুদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২৮ বছর! আবার ২০১১ সালে ধোনির নেতৃত্বে যে দলটা ইতিহাস গড়ে, সেটিও কিন্তু নব্বইয়ের দশকের চেয়ে শক্তিশালী ছিল না। শচীনের তখন পড়ন্ত বেলা। এরপরই শুরু হলো রোহিত-কোহলিদের যুগ।
একের পর এক এশিয়া কাপ, বছরের পর বছর দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতে, র্যাঙ্কিংয়ের ওপরের দিকে থেকে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে ২০১৫ এবং ইংল্যান্ডে ২০১৯ বিশ্বকাপে তারা অংশ নিয়েছিল ফেভারিট হিসেবে। মাঠেও কম দাপট ছিল না। কিন্তু শিরোপা জেতা হয়নি। ২০১৫Ñএর সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে ধোনির দল। সর্বশেষ ২০১৯-এর সেমিতে কোহলিদের হার নিউজিল্যান্ডের কাছে। অর্থাৎ ফেভারিট হলেই শিরোপা আসবে, এটা নিশ্চিত নয়। শক্তিমত্তার সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতা এবং ভাগ্য বড় ফ্যাক্টর!
যেটা ছিল ধোনির সঙ্গে। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ সহ-আয়োজক হলেও বেশিরভাগ খেলা ভারতেই হয়েছিল। চেনা কন্ডিশনে জ্বলে উঠেছিলেন গৌতম গাম্ভির, জহির খানরা। তার মধ্যে একজনের কথা আলাদা করে না বললেই নয়, তিনি যুবরাজ সিং। দুর্দান্ত অলরাউন্ডার নৈপুণ্যে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন সুপার যুবি। ম্যান টু ম্যান বিচার করলে, রোহিতের এই দলটাকে মনে হবে সেই দলের চেয়েও এগিয়ে! দলের অন্যতম শক্তির জায়গা ব্যাটিং ইউনিট। ওপেনিংয়ে রোহিত, শুভমান গিলদের মতো তারকা ব্যাটারদের পাশাপাশি টপ অর্ডারে বিরাট কোহলি ও কেএল রাহুলরা প্রতিপক্ষের বোলারদের জন্য দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ। আছেন শ্রেয়াস আইয়ার, সূর্যকুমার যাদব, ইশান কিষান। সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে এই তারকাদের সাম্প্রতিক ফর্ম ভারতকে আশা দেখাচ্ছে।
এছাড়াও বোলিংয়ে মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্ম শামি, জাসপ্রিত বুমরাহ, বেশ কার্যকরী। তাদের সামলাতেও বাড়তি পরিকল্পনা করতে হবে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। স্পিনে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কুলদীপ যাদবের সঙ্গে অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা। পেস বোলিং অলরাউন্ডার শার্দূল ঠাকুরের কথাও স্মরণ করতে হচ্ছে। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই গভীরতা অনেক। সুতরাং গ্যালারি ভর্তি দর্শক সমর্থন নিয়ে ঘরের মাঠে ভারতকে এবার হট-ফেভারিট বলাই যায়।
সর্বোপরি বিশ্বকাপে ভারতের রেকর্ডও সমীহ জাগানিয়া। আগরে ১২ আসরে দুই শিরোপার (১৯৮৩, ২০১১) পাশাপাশি চার বার সেমিফাইনাল (১৯৮৭, ১৯৯৬, ২০১৫, ২০১৯) ও একটি বিশ্বকাপে রানার্স আপ (২০০৩) হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় টিম-ইন্ডিয়াকে।