.
গত বছর জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। ২২ বছর বয়সী এই তরুণ ডানহাতি ওপেনার অফ ফর্মের কারণেই তিনি দল থেকে ছিটকে পড়েন। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন একমাত্র টেস্টের আগে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে করেছেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি। তিনি ২৬৮ বলে ১৪ চারে করেন অপরাজিত ১১৪ রান। আর এতেই বাংলাদেশ ‘এ’ দল চরম চাপের ম্যাচে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ড্র করতে সক্ষম হয়েছে। ৪৬১ রানের বিশাল টার্গেট তাড়ায় নেমে বাংলাদেশ ‘এ’ দল করে ৪ উইকেটে ৩০৬ রান। মাহমুদুলের এই দুর্দান্ত শতকের সঙ্গে দারুণ ভূমিকা রাখে ইয়াসির আলী রাব্বির ৬৭ রানের ইনিংস। এতেই সিরিজের তৃতীয় ও শেষ আনঅফিসিয়াল টেস্টের (৪ দিনের ম্যাচ) শেষদিন ড্র করতে পেরেছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
বাংলাদেশ দল আগামী ১৪ জুন একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে মিরপুরে। আর এই টেস্টে খেলতে পারবেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক ও বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সে কারণে বিকল্প হিসেবে গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা একমাত্র টেস্টের স্কোয়াডে নিশ্চিতভাবেই পরিবর্তন আনতে হবে। সাকিবের জায়গায় দলে একই সঙ্গে একজন ব্যাটার ও একজন বোলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেই অভাব পূরণের জন্য এবার বিকল্প হিসেবে স্কোয়াডে ঠাঁই পাবেন একজন ব্যাটার। আইরিশদের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টের স্কোয়াডে ছিলেন সাদমান ইসলাম অনিক।
তিনি ক্যারিবীয় ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুটি ভালো ইনিংস খেলেছেন। আর ইনজুরির কারণে অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকানো জাকির হাসান ছিটকে যান। কিন্তু তিনি ফেরার প্রক্রিয়ায় সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। এবার তামিম ইকবাল, শান্ত, লিটন কুমার দাসদের সঙ্গে টপঅর্ডারের জন্য জয়, সাদমান ও জাকিরের মধ্যে থেকেই এক বা দু’জনকে নিয়ে আফগানদের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াড গড়া হবে। সেই স্কোয়াডে ঠাঁই পাওয়ার পরীক্ষা ক্যারিবিয় ‘এ’ দলের বিপক্ষে আনঅফিসিয়ার টেস্টে দিয়েছেন তারা। অবশ্য টেস্ট দলের অভিজ্ঞ সদস্য মুমিনুল হক সৌরভ দুই ইনিংসেই হয়েছেন ব্যর্থ। তিনি উভয় ইনিংসে ৫ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন। সাদমান শেষ ম্যাচটিতে খেলেননি। তাই জাকির-জয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন নির্বাচকরা।
জাকির উইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ৬ ইনিংসে করেছেন ৩০, ০, ১৮, ১৩, ২৯ ও ৪৩। তবে ভারতের বিপক্ষে গত ডিসেম্বরে টেস্ট অভিষেকে শতক পাওয়ার কারণে তিনি নির্বাচকদের কাছে ইতিবাচক হিসেবেই বিবেচনায় আছেন। আর সাদমান সেই টেস্টে খেলতে না পারলেও উইন্ডিজদের বিপক্ষে এবার ২ ম্যাচে ২টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। অপেক্ষা ছিল জয়কে দেখার। তিনি গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে দুর্দান্ত অর্ধশতক হাঁকান এবং পরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডারবানে হাঁকান শতক। তিনিই নিজের ব্যাটিং ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি। তাই ছিটকে পড়েছেন টেস্ট দল থেকে। এবার উইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে গত ৩ ইনিংসে তেমন ভালো করতে পারেননি। অবশ্য আগের ম্যাচে চারে ব্যাট করেছেন তিনি। এই ম্যাচে ওপেনিংয়ে ফেরেন। কিন্তু প্রথম ইনিংসে মাত্র ৯ রানে আউট হয়ে যান। ৪৬১ রানের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ‘এ’ দল বিনা উইকেটে ৪৭ রান তোলে। জয় অপরাজিত ছিলেন ২৮ রানে। চতুর্থ দিন আরও ৪১৪ রানের প্রয়োজন। অসম্ভব এই টার্গেট ছোঁয়ার চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল ম্যাচ বাঁচানোর। সেই চ্যালেঞ্জে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে গেছেন জয়। দীর্ঘদিন পর লঙ্গার ভার্সনে নিজেকে মেলে ধরেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে করেছেন চতুর্থ সেঞ্চুরি। ওপেনিংয়ে জাকিরের সঙ্গে ৯৩ রানের জুটি গড়েন তিনি।
জাকির ৯৫ বলে ৬ চারে ৪৩ রানে সাজঘরে ফিরে যাওয়ার পর মুমিনুলও ৫ রানে আউট হন। এরপর সাইফ হাসানের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৫৩ রানের জুটি গড়েন তিনি। ৪৯ বলে ৫ চার, ১ ছয়ে ৩৮ রানে আউট হন সাইফ। এরপর ১১৭ রানের দুর্দান্ত এক জুটিতে ম্যাচে হারের শঙ্কা এড়িয়েছেন জয়-ইয়াসির। দীর্ঘ সময় রান খরার মধ্যে থাকা ইয়াসিরও টেস্ট দল থেকে ছিটকে পড়েছেন।
তিনি ৮৫ বলে ৬ চার, ৪ ছক্কায় ৬৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলে ফেরার দাবি জানিয়ে রেখেছেন। এরপর জয় শতক হাঁকিয়েছেন এবং অপরাজিত থেকেছেন ১১৪ রানে। ৭ ঘণ্টা ক্রিজে থেকে এই ধৈর্যশীল ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে ড্র এনে দিয়েছেন জয়। আর সেই সঙ্গে আবার টেস্ট দলে ফেরার দাবিটাকে জোরালো করতে পেরেছেন। ৪ উইকেটে ৩০৬ রান তুলতেই সফরকারী দল ড্র মেনে নিয়েছেন। কেভিন সিনক্লেয়ার নেন ৩ উইকেট।