ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন একমাত্র টেস্টে ইনজুরির কারণে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান খেলার  সম্ভাবনা ক্ষীণ। মিরাজ সেই অভাব পূরণ করবেন এমনটাই আশা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট

মিরাজকে নিয়ে আশাবাদী সবাই!

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:০৬, ২৮ মে ২০২৩

মিরাজকে নিয়ে আশাবাদী সবাই!

মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই নিজেকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার দাবি করে এসেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কারণ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কত্ব যখন করেছেন তখন মিডলঅর্ডারে নেমে দুর্দান্ত ব্যাট করেছেন এবং বল হাতেও ম্যাজিক দেখিয়েছেন ধারাবাহিকভাবে। কিন্তু সেভাবে নিজেকে ব্যাট হাতে মেলে ধরতে পারেননি জাতীয় দলের হয়ে। বরং অফস্পিনার হিসেবে বিশ^ব্যাপী পরিচিতি পেয়ে যান অভিষেকেই ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তিদের নাকানি-চুবানি খাইয়ে। তবে সেই মিরাজ গত দুই বছরে নিজেকে ব্যাটে-বলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই সময়ের মধ্যে ওয়ানডে ও টেস্টে লোয়ার অর্ডারে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। তাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন একমাত্র টেস্টে ইনজুরি আক্রান্ত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। 
মিরাজ তার অভাব পূরণ করবেন এমনটাই আশা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মনে করেন, সাকিবের বিকল্প তৈরি হয়নি এবং কাউকে দিয়েই তার অভাব পূরণ হবে না।
সাকিব ব্যাটে-বলে বিশে^র অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার তিন ফরম্যাটেই। সেই বিবেচনায় মিরাজ এখনো পর্যন্ত বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের পারফর্ম্যান্সের কাছাকাছি যেতে পারেননি। তবে অনেকেই মিরাজের ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকে তার মধ্যে সাকিবের ছায়া খুঁজে পেয়েছেন। সেই ছায়া অদৃশ্য হতে থাকে, কারণ পুরোদস্তুর অফস্পিনার হিসেবেই খেলতে শুরু করেন মিরাজ এবং সাফল্যও পেতে থাকেন বল হাতে। কিন্তু সেই অনুসারে ব্যাট থেকে তেমন কিছুই দিতে পারেননি। টিম কম্বিনেশনের কারণে সাধারণত অনেক পরে ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়েছেন বলে অনেকে ভেবেছেন লোয়ার অর্ডারে নেমে ব্যাট হাতে তেমন কিছুই করার নেই।

এ কারণে ওয়ানডে ও টি২০ ফরম্যাটে তাকে ওপরের দিকেও ব্যাটিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। তবে সেই লোয়ার অর্ডার পজিশনেই নিজেকে গত দুই বছরে মেলে ধরতে পেরেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম ৪ বছরে ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে মাত্র ৩ হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া মিরাজ গত দুই বছরে ২ সেঞ্চুরি ও ৩ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। পুরো ক্যারিয়ারে ৮ নম্বর পজিশন (লোয়ার অর্ডারে) ব্যাট করে ৩ ফরম্যাটে ২ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন মিরাজ। এর মধ্যে গত দুই বছরেই তিনি এই পজিশনে ব্যাট করে ৩ ফরম্যাটের ৩১ ম্যাচের ৩২ ইনিংসে ২টি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটি হাঁকিয়ে ২৮.৪২ গড়ে করেছেন ৭৩৯ রান।

ব্যাট হাতে ক্রমেই নিজের কার্যকারিতা পূরণ করার সুবাদে একধাপ এগিয়ে গত দুই সিরিজে মিরাজকে দেখা গেছে ৭ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করতে। এই পজিশনে পুরো ক্যারিয়ারে আহামরি কিছু করতে পারেননি তিনি। ৩ ফরম্যাট মিলিয়ে সাতে নেমেছেন মিরাজ ২৫ ইনিংসে, ১ ফিফটিতে রান করতে পেরেছেন সাকুল্যে মাত্র ৩২৮। গড় ১৪.২৬! এই পজিশনে একমাত্র ফিফটি পেয়েছেন গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে। তাদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও সাতে ব্যাট করে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্য দেখাতে সক্ষম হয়েছেন।

বরাবরই বাংলাদেশ দল এই পজিশনে একজন জেনুইন ব্যাটার খেলিয়েছে। ফরম্যাট ভেদে এই পজিশনে ব্যাট করেছেন ইয়াসির আলী রাব্বি, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও নুরুল হাসান সোহান। তারা কেউ সর্বশেষ দুই সিরিজে না থাকায় মিরাজ পজিশনটা নিয়ে আস্থাশীল হয়ে উঠতে পেরেছেন। আর তাই এখন ‘ব্যাটার’ হিসেবেও অফস্পিনার মিরাজের ওপর ভরসা করছেন সবাই। কারণ আটে নেমে দুর্দান্ত সব ইনিংস খেলে, দারুণ ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইকরেটের কল্যাণে ব্যাটিং অর্ডারে ‘প্রমোশন’ পেয়ে গেছেন মিরাজ। ৭ নম্বরে তাই আহামরি কিছু না করলেও সেসবই অতীত হওয়াতে এখন এই পজিশনে অন্যতম আস্থা হিসেবে ভাবা হচ্ছে তাকে। সাকিব যদিও আরও ওপরের দিকে ব্যাটিং করেন।

কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে কিছুটা পরে নামলেও অভাবটা এখন পূরণ করতে পারবেন মিরাজ এই বিশ^াসটা সবার মধ্যে তৈরি করতে পেরেছেন তিনি। তার বিষয়ে বিসিবি সভাপতি পাপন বলেছেন,‘মিরাজ যদি তার বোলিং এবং ব্যাটিংটাকে আরও একটু পাকাপোক্ত করতে পারে তাহলে সাকিব হতে পারবে না, কাছাকাছি যেতে পারবে হয়তো।’ ক্যারিয়ারের প্রথম ৪ বছরে সেটিই হয়েছে, তবে গত দুই বছরে মিরাজ দেখিয়েছেন তিনি অনেক কিছুই করতে পারবেন। 
সাকিবের শুন্যতা অবশ্যই থাকবে। কারণ তিনি দলে থাকলেও মিরাজ খেলতেন। এখন তিনি থাকবেন না। তবে আগে মিরাজের ব্যাটিংয়ের ওপর ভরসা করা যায়নি, এখন আস্থা তৈরি হয়েছে- পার্থক্য এখানেই। সেজন্যই আফগানদের বিপক্ষে সাকিবের ঘাটতি অনেকটা পূরণ করবেন মিরাজ সেই ভাবনাটা এসেছে। অবশ্য মিরাজ নিজেই বলেছেন, ‘সাকিব ভাই থাকলে তো অবশ্যই ভালো হতো। কিন্তু যেহেতু তিনি ইনজুরিতে আছেন, তাই অতিরিক্ত 
একটা বোলার নিয়েই খেলতে হবে। উনি থাকলে তখন ব্যাটার বা বোলার নিয়ে এই ভাবনাটা থাকে না। আমার কাছে মনে হয় যে টিম ম্যানেজমেন্ট যেটা সেরা হয়, তেমন সিদ্ধান্তই নেবেন।

×