মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সবসময়ই বাংলাদেশ দল থাকে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। বাংলাদেশ দলকে এবার বেশ চাপে ফেলেছে জিম্বাবুইয়ে। টি২০ সিরিজে তারা জিতেছে, প্রথম ওয়ানডেও জিতেছে। যদিও ওয়ানডেতে অনেক বেশি মানানসই বাংলাদেশী ব্যাটাররা দারুণ পারফর্মেন্স দেখিয়ে চলেছেন।
রবিবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংসে স্বস্তিতে ফিরেছেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৪ ম্যাচ পর কোন ফিফটির দেখা পেয়েছেন তিনি। এছাড়া বাঁহাতি ওপেনার, অধিনায়ক তামিম ইকবাল টানা দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকিয়েছেন। আগের ম্যাচে ৮ হাজার রান পেরোনো তামিম এবার পেছনে ফেলেছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিংকে। দু’জনের দারুণ ইনিংসের পরও ব্যাটিং সহায়ক পিচে ৯ উইকেটে ২৯০ রান করেছে বাংলাদেশ। কারণ এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেন ধ্রুব উইকেটে থিতু হওয়ার পর ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি। আর সবমিলিয়ে ব্যাটাররা প্রায় অর্ধেক বলই দিয়েছেন ডট। এবার জিম্বাবুইয়ে সফরে একবারও টস জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তিন অধিনায়ক হেরেছেন ৫ ম্যাচের টস। টি২০ সিরিজে নুরুল হাসান সোহান ২টি, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১টি এবং ওয়ানডে সিরিজে তামিম ২টি টস হেরেছেন। প্রথম ওয়ানডেতে টস হেরে আগে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে সফল হয়েছে জিম্বাবুইয়ে, রবিবারও তাই করেছে। ৩টি পরিবর্তন নিয়ে নামতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। লিটন কুমার দাস, মুস্তাফিজুর রহমানকে ইনজুরির কারণে এবং কম্বিনেশনে বোলার বাড়াতে গিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে রাখা হয়নি একাদশে। আর সুযোগ পেয়েছেন বাঁহাতি টপঅর্ডার নাজমুল ইসলাম শান্ত, ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ ও বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। জিম্বাবুইয়েকেও ইনজুরিতে পড়া রায়ান বার্লসহ মোট ৫ জনকে পরিবর্তন করেছে। এদিন ব্যাটিংয়ে নেমে দ্রুতগতিতে শুরু করেন তামিম-বিজয়। পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে তারা বিনা উইকেটে দলের স্কোরবোর্ডে এনে দেন ৬২ রান। ৪৪ বলে ক্যারিয়ারের ৫৫তম ফিফটি হাঁকান তামিম। তবে পরের ওভারেই তাকে সাজঘরে ফেরান তানাকা চিভঙ্গা। ৪৫ বলে ১০ চার, ১ ছয়ে ৫০ রান করেন তিনি। এর ফলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ফ্লেমিংকে ছাড়িয়ে গেছেন। ২৬৯টি ওয়ানডে ইনিংসে ফ্লেমিং ৮০৩৭ রান করে ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন। আর এদিন ফিফটি হাঁকিয়ে তামিম ২২৮ ইনিংসে ৮০৫৫ রানে পৌঁছেছেন। ফলে ওয়ানডে ইতিহাসে বাঁহাতি ব্যাটারদের রান করার তালিকায় আরেক ধাপ এগিয়ে এখন ১০ নম্বরে তামিম। ৯ নম্বরে থাকা ভারতের যুবরাজ সিং বেশ এগিয়ে ২৭৮ ইনিংসে ৮৭০১ রান নিয়ে। আর এই বাঁহাতিদের তালিকায় সবার শীর্ষে থাকা শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারার ৩৮০ ইনিংসে রান ১৪ হাজার ২৩৪।
পাওয়ার প্লেতে ফিফটি এ নিয়ে চতুর্থবার হাঁকালেন তামিম। বাংলাদেশের আর কোন ব্যাটার তা করতে পারেননি। সেই তামিমের বিদায়ে ১১ ওভারে করা ৭১ রানের ওপেনিং জুটি ভেঙ্গে যায়। কিছুটা ধীরস্থির থাকলেও বিজয় ভালই খেলছিলেন। কিন্তু তামিম আউট হওয়ার পরের ওভারেই তিনি রানআউট হয়ে যান ২৫ বলে ৩ চারে ২০ করে। এরপর শান্ত ও মুশফিক তৃতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন ৬৪ বল থেকে। ৩১ বলে মাত্র ১ চারে ২৫ রান করা মুশফিক ওয়েসলি মাধেভেরের স্পিনে সাজঘরে ফিরেছেন। আর এক ম্যাচ পর খেলতে নামা শান্ত ছিলেন একেবারেই ধীরগতির। তিনি ৫৫ বলে ৫ চারে ৩৮ রান করে বিদায় নেন। ২৯.৩ ওভারে ১৪৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপেই পড়ে বাংলাদেশ। তারপর অবশ্য আফিফ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৮২ বলে ৮১ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়লে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে ওঠে। কিন্তু আফিফ বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলে ৪১ বলে ৪ চারে ৪১ রানে বিদায় নেওয়ার পর অনেক ধীর মাহমুদুল্লাকে তেমন সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। মেহেদি হাসান মিরাজ ১২ বলে ২ চারে ১৫, তাসকিন আহমেদ ২ বলে ১, তাইজুল ইসলাম ৪ বলে ১ চারে ৬ ও শরিফুল ইসলাম ২ বলে ১ রানে বিদায় নেন। অনেক ধীরগতিতে শুরু করা মাহমুদুল্লাহ পরের দিকে কিছুটা দ্রুত ব্যাট চালিয়েছেন। ৬৯ বলে ক্যারিয়ারের ২৬তম ফিফটি পান তিনি। এটি ওয়ানডেতে ১৩ ম্যাচ ও ১১ ইনিংস পর তার কোন অর্ধশতক। গত বছর মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে ৫৩ রান করেছিলেন। টেস্ট থেকে অবসর নেয়াতে বাকি দুই ফরমেট মিলিয়ে ২৪ ম্যাচের ২২ ইনিংস পর আবার কোন আন্তর্জাতিক অর্ধশতক পেয়েছেন তিনি।
গত অক্টোবরে টি২০ বিশ্বকাপের প্রাথমিক রাউন্ডে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ওমানের মাটিতে ২৮ বলে ৫০ রানের ইনিংসটি ছিল তার সর্বশেষ আন্তর্জাতিক অর্ধশতক। মাঝে ব্যাটিং ব্যর্থতায় দারুণ সমালোচনায় পড়েন মাহমুদুল্লাহ। তাই এই স্বস্তির ফিফটি পেয়ে চড়াও হন তিনি জিম্বাবুইয়ে বোলারদের ওপর। যদিও সিকান্দারের অফস্পিনে নাকাল হয়েছেন বাংলাদেশী ব্যাটাররা। ১০ ওভারে তিনি মাত্র ৫৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন। আরেক অনিয়মিত অফস্পিনার মাধেভেরে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ৯ ওভারে মাত্র ৪০ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। তাদের দারুণ বোলিংয়ের কারণে শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৮৪ রান তুলতে ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাই ৯ উইকেটে ২৯০ রানে থামে বাংলাদেশ। ব্যাটারদের অনেক বেশি ডট বলের কারণে আরও দুর্দান্ত কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছে দল। মাহমুদুল্লাহ ৮৪ বলে ৩ চার, ৩ ছক্কায় ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন।