ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রেক্ষাপট

সোহেল মাজহার

প্রকাশিত: ০১:৪২, ২৬ মার্চ ২০২৩

মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ

বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। তার আগে কি বাংলা কখনো স্বাধীন ছিল? উত্তর খোঁজার জন্য একটু পেছনের দিকে যেতে হবে। জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে, মূলত আধুনিক জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্রধারণা খুব বেশি পুরোনো নয়। মধ্যযুগ কিংবা সামন্তবাদের কালে সামরিক শক্তি ও দখলদারিত্বের জোরে রাজ্য কিংবা সাম্রাজ্য গঠিত হতো।

সেখানে ধর্ম, ভাষা, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক ঐক্য খুব বড় বিষয় ছিল না। ছিল না বলেই এক জাতি আরেক জাতিকে শত শত বৎসর শাসন করতে পেরেছে। তাই এ কথা সুস্পষ্ট আধুনিক রাষ্ট্র ধারণার কাল থেকে ৭১ সালেই বাংলাদেশ সর্বপ্রথম স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। আবার যদি জনপদ অর্থে বলি তাহলে একমাত্র কৈর্বত রাজা দিব্যোকই এই অঞ্চলের প্রথম ভূমিপত্র যিনি বরেন্দ্র অঞ্চলের স্বাধীন নৃপতি ছিলেন। তার আগে ও পরে পাল রাজবংশ, সেন রাজবংশ, মুসলিম সুলতানি আমল, মুঘল আমল ও নবাব আমলে কোনো শাসকগোষ্ঠী এই অঞ্চলের ভূমিপুত্র ছিলেন না।

তবে একটি কথা সত্য, তাহলো চর্চাপদের আমলে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর হাতে দোহা গান রচনার মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সূচনা হয়, আর তা পূর্ণতা পায় মুসলমান শাসকগোষ্ঠী সুলতানি আমলে। শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ শুধু নতুন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেননি, বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে ঐক্য সাধনে প্রয়াসী ছিলেন। ইতিহাসে তিনি শাহী বাঙ্গাল নামে খ্যাত ও স্বীকৃত। তার আগে সেন রাজবংশের শাসনামলে বাংলায় ছিল ব্রাক্ষ্মণ্য ও বর্ণপ্রথার যুগ। সংস্কৃতি ছিল রাজদরবারের ভাষা।

বাংলা ছিল পল্লীবাসী প্রান্ত ও অন্ত্যজ জনের ভাষা। পাল যুগেও বাংলা খুব সমাদর পায়নি।
রাজনৈতিকভাবে বাংলার জন্য মুগল সা¤্র্রাজ্য ও স¤্র্রাট আকবরের শাসন আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি স্বাধীনচেতা বারো ভূঁইয়াদের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেন। আবার ১৫৭৬ সালে রাজমহলের যুদ্ধে আফগান শাসক সুলতান দাউদ কররানিকে পরাজিত করে বাংলা অধিকার করেন। সেই সময় স¤্রাট আকবর ইতিহাস নির্ধারণী কাজ করেন। তিনি কেবল বিভিন্ন ভাষা- সংস্কৃতি - জাতিগোষ্ঠীর ভারতকে ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করেননি, বাঙলা ভাষাভাষী অঞ্চলকেও ঐক্যবদ্ধ করেছেন।

তার নির্দেশে রাজা টোডরমল রাঢ়, বরেন্দ্র ও বঙ্গের নতুন নাম করেন সুবা বাংলা। সুবা বাংলার বিস্তৃতি ছিল পশ্চিমে বিহার, উত্তরে পর্বত, দক্ষিণ ও পূর্বে সমুদ্র্র। কোচবিহার, ত্রিপুরা আলাদা স্বাধীন রাজ্য ছিল। মূলত রাজস্ব সংগ্রহের সুবিধার্থে সুবা বাংলা গঠন করে, সুবা বাংলাকে ১৯টি সরকার ও ৬৮২টি মহালে বিভক্ত করেন। কিন্তু সুবা বাংলা গঠন করে নিজেদের অজান্তেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেন।            
ভারত ও বাংলায় ১৫৭৬ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুঘল শাসন কার্যকর ছিল। এই সময়কালে ইতিহাস নির্ধারণী কয়েকটি ঘটনা ঘটে। ১৭১৭ সালে মির্জা হাদী মীর মুর্শিদ কুলি খাঁ উপাধি ধারণ করে বাংলায় নবাবী আমল শুরু করেন। মূলত নির্দিষ্ট রাজস্বের বিনিময়ে মুঘল স¤্রাট ফারুক শিয়রের কাছ থেকে মুর্শিদ কুলি খাঁ নবাবী লাভ করেন। কার্যত তারা দিল্লির অনুগ্র্রহ প্রাপ্ত প্রায় স্বাধীন শাসক ছিলেন।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন প্রহসনমূলক যুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত যায়। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে নবাব মীর কাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম যৌথ বাহিনীকে পরাজিত করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় নিজেদের শাসনক্ষমতা সুসংহত করার পাশাপাশি মুঘল রাজশক্তির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। ক্রমান্বয়ে রাজস্ব আদায়, সামরিক শক্তি সুসংহত ও প্রশাসন পরিচালনার অধিকার লাভ করে। অপরদিকে বাংলার নবাব শাসকগোষ্ঠী ও মুঘল স¤্রাটগণ বৃত্তিধারী নামমাত্র শাসকে পরিণত হন।

এভাবে চলে একশত বছর। ১৮৫৮ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম সিপাহী বিদ্রোহ তথা ভারতীয় মহাবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও একশ্রেণির এ দেশীয়দের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতায় ভারতবাসীর পরাজয় হয়। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রত্যাহার করে নিয়ে ভারতের শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নেয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ জাতি ভারত ছেড়ে যায়।  ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারত নামে দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। 
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলা পশ্চিম ও পূর্ব বাংলা নামে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। বাংলা বিশেষত পূর্ব বাংলায় পাকিস্তান নতুনভাবে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ভাষা, সাহিত্য - সংস্কৃতিকে বিকৃত করার পাশাপাশি বাঙালিদের শাসনক্ষমতা ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। অবশ্য ইতিহাস সাক্ষী দেয়, সামন্ত যুগ কিংবা মধ্য যুগে কোনোকালেই শাসকগোষ্ঠী জেলে, তাতী, কামার, কুমোর, কৃষক থেকে শুরু করে প্রান্তজন ও সাধারণ প্রজার পক্ষে ছিল না।

বরং বলা চলে শাসকগোষ্ঠী প্রজাসাধারণকে শোষণ করেই নিজেদের সমৃদ্ধি ও স্বপ্ন সৌধ নির্মাণ করেছেন। মুঘল যুগে কৃষকদের কাছ থেকে ক্ষেত্র বিশেষ উৎপাদিত ফসলের ৮ ভাগের ১ ভাগ কিংবা ৬ ভাগের ১ ভাগ পর্যন্ত আদায় করত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে উপনিবেশ স্থাপনের পর স্থানীয় শিল্পী ও কারিগরদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পাঠিয়ে দেয়। ভারত হয় তাদের ব্যবসায়ের তীর্থ স্থান। বৈধ-অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ মূলধন ভারত থেকে ইংল্যান্ডে পাচার করে।

কৃষকদের কাছ থেকে এত পরিমাণে রাজস্ব আদায় করে যে, বাংলায় ঘটে ছিয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে বাংলায় কোটি মানুষের প্রাণ যায়। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৪৩ সালে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের দায় মিটাতে গিয়ে আবারও বাংলায় দুর্ভিক্ষ ঘটে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিংবা ব্রিটিশ শাসনে বাংলার অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙে পড়ে। অবশ্য ব্রিটিশ শাসনকে সহযোগিতার বিনিময়ে বাংলায় একশ্রেণির মধ্যসত্বভোগী ব্যবসায়ী শ্রেণির উদ্ভব হয়। যাদের কাজ ছিল জনগণকে শোষণ করে বিত্তের পাহাড় তৈরি করা।

তার আগেই ১৭৯৪ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দ্যোবস্ত প্রথা ও সূর্যাস্ত আইন প্রবর্তন করে বাংলার কৃষক সমাজকে নিঃস্ব ও রিক্ত করে ফেলে। আবার ১৮৩৫ সালে রাজভাষা ফারসি পরিবর্তন করে ইংরেজি ভাষা প্রবর্তন করে। উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ভারতে নিজেদের অনুগত শিক্ষিত শ্রেণি সৃষ্টি করা। শাসকশ্রেণির সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল। যারা জন্ম ও বর্ণে ভারতীয় হলেও চিন্তা-ভাবনা, সংস্কৃতিতে ছিল ব্রিটিশ। একইসঙ্গে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী মসজিদ ও মাদরাসার ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি ও প্রচুর পরিমাণ লাখেরাজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে।

রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি প্রবর্তন ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মাধ্যমে সম্প্রদায়গতভাবে মুসলিম উচ্চবিত্ত শ্রেণি ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি এক দশকের মধ্যে নিম্নবিত্ত শ্রেণিতে রূপান্তর হয়। অবশ্য ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে একাংশ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ১৯ সালে কংগ্রেস সম্মেলনে প্রথম যে ভারতীয় সুস্পষ্টভাবে ভারতের স্বাধীনতা দাবি করেছেন তিনি হলেন মওলানা হাসরত সোহানী এবং বাঙালিদের মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম সর্বপ্রথম ভারতের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। এই অপরাধে তাদের দুজনকেই ব্রিটিশ সরকার কারাগারে প্রেরণ করেছিল। 
পাকিস্তান দাবি আদায়ের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা নিজেদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল। মাত্র ১ বছরের মধ্যেই বাঙালি প্রগতিশীল গোষ্ঠী ও অগ্রবর্তী শ্রেণি সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারে পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে বাঙালির মুক্তি সম্ভব নয়। ৪৮ সালেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। অবশ্য পাকিস্তানের জন্মের আগেই ৪৬ সালে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে নিজেদের মতামত দেন।

তাৎক্ষণিকভাবে জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ও আবুল মনসুর আহমেদ প্রমুখ বাংলা ভাষার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। ৪৮ সালে খাজা নাজিমুদ্দিন - ফজলুর রহমান গং পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর প্রস্তাব করেছেন। বাঙালি বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবী, ছাত্র ও রাজনীতি সচেতনমহল উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার পক্ষে দাবি তুলেছেন। ৪৮ সালে পাকিস্তানের গণপরিষদে সর্বপ্রথম বাংলার পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করেন গণপরিষদ সদস্য শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি আদায় করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিষয়ের আবুল কাসেমের নেতৃত্বে গঠিত হয় তমদ্দুন মজলিস। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সংবর্ধনা সভায় urdu and urdu shall be state language of Pakistan.  ঘটনার আকস্মিকতায় কেউ কিছু বুঝে না উঠতে না পারায় তেমন কোনো প্রতিবাদ হয়নি। কিন্তু সর্বত্র চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় আগের দিনের বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করে বলেন  Urdu and urdu shal be state language of Pakistan. ছাত্ররা তাৎক্ষণিকভাবে নো নো ধ্বনি উচ্চারণ করে প্রতিবাদ জানায়।

নানা ঘটনায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ব্যাপকভাবে দানা বাঁধে। গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। বিভিন্ন পর্যায়ে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আবদুল মতিন, কামরুদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, অলি আহাদ, তাজউদ্দিন আহমদ, গাজীউল হক প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে গ্রেপ্তার হন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটে ৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অপরাধে পুলিশ ছাত্রদের মিছিলে নির্বিচার গুলিবর্ষণ করে।

ঘটনাস্থলে শহীদ হন রফিক, শফিক, জব্বার, সালাম, বরকত প্রমুখ। এই ঘটনায় সমগ্র দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। মূলত ২১ ফেব্রুয়ারির বেদনাহত ঘটনার পথ বেয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্য ১৯৫৬ সালে অর্জন করে। সাংবিধানিক স্বীকৃতি।   
একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ মানে দ্রোহ-প্রতিবাদ ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। একুশ বাঙালি জাতির মধ্যে সুপ্ত স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা নতুন করে জাগিয়ে তোলে। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে মুক্তি তথা স্বাধীনতা অর্জন করেন। সূচনা হয় তারও আগে। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলনে শেরে বাংলা ফজলুল হক ভারতের পশ্চিম অঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত ও ভারতের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে মুসলিম অধ্যুষিত সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রস্তাব করেন।

কিন্তু মুসলিম লীগ ষড়যন্ত্র করে স্বাধীন বাংলাদেশের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দেয়। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস গ্রন্থের ২০নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ‘১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল দিল্লির এ্যাংলো এ্যারাবিক কলেজে অনুষ্ঠিত  মুসলিম লীগের কনভেনশনে ১৯৪০ সালে গৃহীত লাহোর প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এর পরিবর্তে বাংলা, উত্তর-পূর্ব আসাম, পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্দু, বেলুচিস্তান প্রভৃতি অঞ্চল নিয়ে একটি মাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গৃহীত হয়।’ উল্লেখ্য বেঙ্গল মুসলিম লীগের তৎকালীন সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তখন জিন্নাহর এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়ে ৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব নাকচে সায় দিয়েছিলেন।

আবার ১৯৪৭ সালের ২০ মে শরৎচন্দ্র বসুর বাসভবনে শরৎচন্দ্র বসু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, কিরণ শঙ্কর রায়, আবুল হাশিম, সত্যরঞ্জন বকশী, সুরেন্দ্র মোহন ঘোষ, ফজলুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, আবদুল মালেক এক যুক্ত বিবৃতিতে স্বাধীন যুক্তবাংলা গঠনের দাবি জানায়। কিন্তু গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, সরদার ভল্লব ভাই প্যাটেল, ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি প্রমুখ শীর্ষ কংগ্রেস নেতৃৃবৃন্দের বিরোধিতার কারণে স্বাধীন যুক্ত বাংলা গঠনের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। অর্থাৎ প্রথমবার মুসলিম লীগ ও চূড়ান্ত পর্যায়ে কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণে স্বাধীন যুক্ত বাংলা গঠনের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। 
৪৭ পরবর্তী সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে দুটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটে। একটি হলো ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের জন্ম, অপরটি হলো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। অনেকে বলে থাকেন লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ লুকায়িত ছিল। কার্যত যারা লাহোর প্রস্তাব ও ৪৭ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের কথা বলেছিলেন, পরে তারা আর সে পথে হাঁটেননি।

শেরে বাংলা ফজলুল হকের রাজনীতি ছিল স্ববিরোধিতায় পূর্ণ। অন্যদিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যতটা সোচ্চার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ততটাই নীরব ছিলেন। আর এক শীর্ষ নেতা পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনীতিতেও ছিল যথেষ্ট স্ববিরোধিতা। আর এ সকল কারণে আমরা দেখি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ৫৭ সালে কাগমারীর সম্মেলনে তার বিখ্যাত উক্তি আসসালামু আলাইকুম বললেও সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বেলায় ডোন্ট ডিস্টার্ব আইয়ুব নীতি গ্রহণ করেছিলেন।

শুধু তাই নয়, অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামের কাছে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ‘আমি ঐসব বাংলা -ফাংলা বুঝি না - বর্তমান দুনিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কই হলো আসল।... পৃথিবীর মজলুম মানুষ সবই এক, তারা যেখানেই বাস করুক। তাছাড়া বেশি বাংলা বাংলা করলে পাকিস্তান ভেঙে যাবে। এটা আল্লাহর দেশ। পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র, এই দেশকে তোমরা ভাঙতে চাও? তা আমি হতে দেব না’। আবার ৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বৃদ্ধির চেষ্টা করেছেন, অন্যকিছু নয়। 
৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ের বিরোধী দল সমূহ যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। যুক্তফ্রন্টের প্রধান শরিক দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা দাবি পেশ করে। ২১ দফা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ লাহোর প্রস্তাবের মিনিংফুল অর্থকে সংকীর্ণ করে ফেলেন। অর্থাৎ লাহোর প্রস্তাবের যে অর্থ ছিল স্বাধীনতা তাকে সায়ত্তশাসনের মিনিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেন।

২১ দফার ১৯তম দফা ছিল নিম্নরূপ ঃ ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ-সায়ত্তশাসনে ও সার্বভৌমিক করা হইবে এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত আর সমস্ত বিষয়ে (অবশিষ্টাত্মক ক্ষমতাসহ) পূর্ববঙ্গের সরকারের হাতে আনয়ন করা হইবে এবং দেশ রক্ষা বিভাগের স্থলবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তানে এবং পূর্ব পাকিস্তানকে আত্মরক্ষায় স্বয়ং সম্পূর্ণ করা হইবে। আনসার বাহিনীকে স্বতন্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা হইবে’। ২১ দফা রচনার মূল দায়িত্ব পালন করেছেন আবুল মনসুর আহমদ। 
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মূল সংগঠক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ৫৭ সালে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে ন্যাপ গঠন করেন। ৬৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবনের সময় আতাউর রহমান, আব্দুস সালাম খান ও আবুল মনসুর আহমদের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগ গঠনের বিরোধিতা করেন। শুধু তাই নয়, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীও আওয়ামী লীগ গঠনের বিরোধিতা করে এনডিএফের পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। 
৬৪ সালের পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমানেরই আওয়ামী লীগ। ৬৬ সালে তিনি তাঁর ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপন করেন। আপাতদৃষ্টিতে ছয় দফা দাবির মধ্যে সায়ত্তশাসনের কথা বলা থাকলেও ছয় দফার মধ্যেই বাঙালির মুক্তি তথা স্বাধীনতার বীজ লুকায়িত ছিল। বঙ্গবন্ধু মুজিব তাঁর আজীবনের লালিত স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের জন্য ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু করেন। কলকাতায় মুসলিম ছাত্রলীগের কর্মী থাকার সময় থেকে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ৭৩ ও ৭৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, ‘এই সময় (১৯৪৭) শহীদ সাহেব ও হাশিম সাহেব মুসলিম লীগের তরফ থেকে এবং শরৎ বসু ও কিরণশংকর রায় কংগ্রেসের তরফ থেকে এক আলোচনা সভা করেন।

তাদের আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত হয় যে, বাংলাদেশ ভাগ না করে অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করা যায় কি না? শহীদ সাহেব দিল্লিতে জিন্নাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং তার অনুমতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন বাংলাদেশের কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতারা একটা ফর্মুলা ঠিক করেন। বেঙ্গল মুসলিম লীগ এক ফর্মুলা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে। যতদূর আমার মনে আছে, বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে।...  যুক্ত বাংলার সমর্থক বলে শহীদ সাহেব ও আমাদের অনেক বদনাম দেবার চেষ্টা করেছেন অনেক নেতা।

যদিও এই সমস্ত নেতারা অনেকেই তখন বেঙ্গল মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে এই ফর্মুলা গ্রহণ করেছিলেন’। অর্থাৎ তিনি অনেকদিন আগে থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা থেকে ৬৬ এর ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, ৭০ এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন, ৭১ এর অসহযোগ আন্দোলন ও ৭ মার্চে ঐতিহাসিক ভাষণের পথ পরিক্রমায় ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ফলশ্রুতিতে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। 
নিয়মতান্ত্রিক স্বাধীনতা আন্দোলনের পাশাপাশি ষাটের দশক থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে গোপনে স্বাধীনতার তৎপরতা শুরু হয়। স্বাধীনতার সেই সকল গোপন তৎপরতার প্রায় সবগুলোর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে বঙ্গবন্ধু মুজিব যুক্ত ছিলেন। অনেকগুলো উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু মুজিব নিজেও গ্রহণ করেছিলেন। ৫৮ সালে জামালপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আসাদ খোকা নিজেদের বাসায় বসে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ‘পূর্ব বাংলা লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করেন।

তার পিতা তসিরউদ্দিন মোক্তারসহ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন আব্দুর রহমান সিদ্দিকী, আর এম সায়ীদ ও আলতাফ উদ্দিন তালুকদার প্রমুখ। বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পরামর্শ করার জন্য তারা অল্প কিছুদিনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঢাকায় দেখা করেন। সেখানে সেই সময় উপস্থিত ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাদের নিরুৎসাহিত করেন।

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এ বিষয়ে নিশ্চুপ ছিলেন। ৬১ সালেই লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোয়াজ্জেম হোসেন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. ডাক্তার খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য গোপন তৎপরতা শুরু করেন। ৬২ সালেই তারা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করেন। তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ৬ সেপ্টেম্বর ৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের কারণে তাদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

একই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা আগরতলা যান এবং গোপন বৈঠক করেন।  ষাটের দশকের ছাত্রলীগ নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মনি, কাজী আরেফ আহমেদ প্রমুখ বঙ্গবন্ধুর পরামর্শে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ গঠন করেন। তারা স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের জন্য গোপনে প্রচারপত্র ও লিফলেট বিলি করতেন। ১৯৬২ সালের ২৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় নিযুক্ত দিল্লির হাইকমিশনের পলিটিক্যাল লিঁয়াজো অফিসার এস ব্যানার্জীর সঙ্গে একটি গোপন বৈঠক করেন।

বৈঠকটি মধ্যস্থতা করেছিলেন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। এস ব্যানার্জীর সঙ্গে বৈঠককালে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব লন্ডনে বসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও প্রবাসী সরকার গঠনের পরিকল্পনা করেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে এই সংক্রান্ত একটি চিঠি ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেন। এস ব্যানার্জী যথাযথ কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে জওহরলাল নেহেরুর পৌঁছে দেন। জওহরলাল নেহেরু যথাসময়ে উত্তর জানাবেন বলে জানান। এদিকে শেখ মুজিবুর রহমান এক পর্যায়ে অধৈর্য হয়ে ওঠে ৬৩ সালের নভেম্বর মাসে আগরতলায় যান।

তিনি বিলোনীয়া দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে খোয়াই মহকুমা শহরে যান। তাকে অভ্যর্থনা জানায় খোয়াই মহকুমা শাসক এস চক্রবর্তী। আগরতলায় তিনি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহের বৈঠক করেন। শচীন বাবু মুখ্য সচিব মি. রমনকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লি যান এবং প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে দেখা করে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। ৬২ সালে চীন ও ভারত যুদ্ধ হওয়ায় বাস্তব কারণে জওহরলাল নেহেরু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে সম্মতি দেননি।

৬৯ সালের শেষ দিকে সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বাধীন গোপন রাজনৈতিক দল স্বাধীন জনতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের কর্মসূচি দেয়। যদিও তাদের ডাকে জনগণের মধ্যে তেমন সাড়া পড়েনি। মূল কথা হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অঙ্গাঅঙ্গিভাবে যুক্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথ ধরে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করে। 

লেখক : কবি, কথাসাহিত্যিক ও 
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক 

mail: [email protected]

×