
ছবি: প্রতীকী
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমরা অনেকেই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টিকটক বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যক্তিগত ছবি কিংবা ভিডিও শেয়ার করি। কখনো পরিবারের কারো সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত, কখনো নিজের কোনো বিশেষ অর্জন, আবার কখনো মজার কোনো ঘটনা। তবে ব্যক্তিগত ভিডিও অনলাইনে শেয়ার করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সেটিং অবশ্যই ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত। একটু অসতর্কতা অনেক বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
প্রথমেই বুঝে নিতে হবে, ভিডিওটি কী ধরনের? আপনি কি কেবল বন্ধু বা পরিবারের মধ্যে এটি শেয়ার করতে চান, নাকি এটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে চান? অনেক সময় আমরা ভিডিও আপলোড করার সময় সেটিং চেক না করেই ‘পাবলিক’ করে ফেলি। এতে আপনার ব্যক্তিগত ভিডিও যে কেউ দেখতে, ডাউনলোড করতে কিংবা অন্য কোথাও ব্যবহার করতে পারে। তাই, প্রথম করণীয় হলো—আপনার ভিডিওর প্রাইভেসি সেটিং চেক করা।
যদি আপনি ভিডিওটি শুধু নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে দেখাতে চান, তাহলে সেটিং-এ গিয়ে ‘Friends’ বা ‘Only Me’ অথবা ‘Custom’ অপশন নির্বাচন করুন। এতে ভিডিওটি কাদের সঙ্গে শেয়ার হবে, সেটা আপনি নিজেই ঠিক করে নিতে পারবেন। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে এই প্রাইভেসি অপশনগুলো স্পষ্টভাবে দেওয়া থাকে। শুধু একটু মনোযোগ দিলেই সঠিকভাবে সেটিং নির্বাচন করা সম্ভব।
অনেকেই মনে করেন, শুধু প্রাইভেসি সেটিং দিলেই ভিডিও নিরাপদ। আসলে তা নয়। আপনার অ্যাকাউন্ট যদি সঠিকভাবে সুরক্ষিত না থাকে, তাহলে কেউ হয়তো হ্যাক করে ভিডিওগুলো বের করে নিতে পারে। তাই ব্যক্তিগত ভিডিও শেয়ারের আগে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখুন এবং সন্দেহজনক কোনো লিংক বা অ্যাপ্লিকেশন থেকে দূরে থাকুন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ভিডিওতে কী কী দেখা যাচ্ছে বা শোনা যাচ্ছে তা খেয়াল করা। অনেক সময় ভিডিওতে পেছনে থাকা ব্যক্তিগত কাগজপত্র, ঠিকানা, ফোন নম্বর কিংবা সংবেদনশীল কিছু তথ্য অনিচ্ছাকৃতভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়ে যায়। এমনকি পারিবারিক কোনো অপ্রকাশযোগ্য মুহূর্তও রেকর্ড হয়ে যেতে পারে। তাই শেয়ার করার আগে ভিডিওটি ভালোভাবে দেখে নিন, অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে ফেলুন বা ব্লার করে দিন।
ভিডিওর অবস্থান (location) তথ্যও অনেক সময় গোপনীয়তা নষ্ট করতে পারে। অনেক ডিভাইস বা অ্যাপে ভিডিওর সঙ্গে লোকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত থাকে। যদি ভিডিওটি কোথায় ধারণ করা হয়েছে তা অন্যদের জানাতে না চান, তাহলে ভিডিওর লোকেশন সেটিং বন্ধ রাখুন বা শেয়ার করার সময় তা মুছে ফেলুন।
অনেকেই ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করেন যেমন গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স বা আইক্লাউড। সেখানেও ভিডিও শেয়ারের সময় লিংকের প্রাইভেসি চেক করতে হয়। “Anyone with the link can view” এই অপশন চালু থাকলে ভিডিওটি যে কেউ দেখতে পাবে, এমনকি যাকে আপনি পাঠাননি সেও। তাই ভিডিওর লিংক শেয়ারের আগে কনফিডেনশিয়াল অপশন বা "Restricted" সেটিং ব্যবহার করা ভালো।
এছাড়া ইউটিউবেও ভিডিও আপলোড করার সময় তিনটি অপশন দেওয়া হয়—Public, Unlisted, এবং Private। যদি আপনি ভিডিওটি শুধু নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে পাঠাতে চান, তাহলে Unlisted বা Private অপশন বেছে নিন। Unlisted ভিডিও লিংক ছাড়া খুঁজে পাওয়া যায় না এবং Private ভিডিওতে কেবল যাদের আপনি অনুমতি দেবেন তারাই দেখতে পারবে।
সবশেষে বলতেই হয়, ইন্টারনেটে একবার কিছু শেয়ার করলে তা পুরোপুরি মুছে ফেলা যায় না। স্ক্রিনরেকর্ড, ডাউনলোড বা শেয়ার করার মাধ্যমে তা অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। তাই শেয়ারের আগে বারবার ভাবুন— এই ভিডিওটি কি সত্যিই শেয়ার করার মতো? কারা এটি দেখলে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন? কেউ কি এটি দেখে আপনার বা পরিবারের কারো ক্ষতি করতে পারে?
একটু সচেতন থাকলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ভিডিও বা ছবি নিরাপদ রাখা সম্ভব। ভুল করে হলেও যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভিডিও সবার সামনে চলে না আসে, সেটাই হোক আমাদের সবার লক্ষ্য। মনে রাখবেন, সচেতনতাই ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রথম ধাপ।
এম.কে.