ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রিকে উপেক্ষা করার কারণসমূহ

প্রকাশিত: ২১:০২, ৯ মে ২০২৫

কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রিকে উপেক্ষা করার কারণসমূহ

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান প্রযুক্তি দুনিয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান এখন কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রিকে একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা না করে, বাস্তবে কাজ করতে সক্ষম এমন প্রোগ্রামারদের খুঁজছে। আধুনিক বাস্তবতা বলছে-এই চিন্তা একেবারে ভুল নয়।

আজকের দিনে প্রোগ্রামিংয়ের যে রূপ, তা দ্রুত বদলে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন টুলের হাত ধরে। এই অবস্থায় অ্যাকাডেমিক তত্ত্ব আর পুরোনো পাঠ্যক্রমগুলো কতটা প্রাসঙ্গিক-সেটাই এখন প্রশ্ন।

১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বদলে দিচ্ছে প্রোগ্রামিংয়ের সংজ্ঞা।
আজকের বড় ভাষার মডেলগুলো এমনভাবে কোড লিখতে পারে, সমস্যার সমাধান দিতে পারে, যা অনেকটা পূর্ণ কোর্স শেষ করার সমান কার্যকর। ফলে, ডিগ্রির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাচ্ছে।

২. নো-কোড টুলের আধিপত্য
নানা ধরনের নো-কোড ও লো-কোড প্ল্যাটফর্ম আজ সহজেই সফটওয়্যার তৈরি করতে পারছে। প্রোগ্রামারদের প্রয়োজন কমছে।

৩. অতিরিক্ত তাত্ত্বিকতা বিভ্রান্তি তৈরি করে
CS ডিগ্রিধারীরা প্রায়ই তাত্ত্বিক সমস্যায় আটকে যান, যেখানে বাস্তব জীবন চায় কার্যকর সমাধান। অনেক সময় জটিল সমস্যা বাস্তবে অনেক সহজেই সমাধানযোগ্য হয়।

৪. অ্যাকাডেমিক ভাষাগুলোর বাস্তব প্রয়োগ নেই
CLU, Haskell, Lisp-এর মতো ভাষা শেখানো হলেও প্রকৃত কর্মজগতে সেগুলোর চাহিদা নেই। গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান সহজ ভাষার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে (যেমন Go)।

৫. অনেক প্রফেসর কোড লিখতেই জানেন না
কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে অনেক প্রফেসর গত দশকে কোড লিখেননি। গবেষণা ও গ্রান্ট পাওয়াই তাঁদের প্রধান কাজ।

৬. অনেক বিষয়ের আর ব্যবহার নেই
ডেটা স্ট্রাকচার বা কম্পাইলার ডিজাইনের মতো বিষয়গুলো এখন অনেকটাই অপ্রয়োজনীয়। লাইব্রেরি ও অটোমেটেড টুল সেগুলোর কাজ সহজ করে দিয়েছে।

৭. গাণিতিক মডেল বাস্তবে ধীর করে তোলে
ডেটাবেস ডিজাইনের ক্ষেত্রে Boyce–Codd Normal Form-এর মতো গাণিতিক পদ্ধতিগুলো বাস্তবের সাথে খাপ খায় না। অধিকাংশ প্রকৌশলী পরে এসে শিখে নেয়-"ডেনর্মালাইজেশন" অনেক কার্যকর।

৮. ডিগ্রি অহংকার জন্ম দেয়
CS ডিগ্রিধারীরা কখনও কখনও অ্যাকাডেমিক মানদণ্ডকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। তারা কোড রিভিউতে অহেতুক ছোটখাটো ভুল তুলে ধরে সময় নষ্ট করেন।

৯. আধুনিক টুল বা ফ্রেমওয়ার্ক শেখানো হয় না
React, Node.js, Cloud–এসবের খুব একটা স্থান নেই অধিকাংশ CS কারিকুলামে। অথচ, চাকরিতে এটাই দরকারি।

১০. গবেষণালব্ধ ধারণা বাজারে আসতে সময় নেয়
AI বা ML নিয়ে গবেষণা বহুদিন ধরে চলছে, কিন্তু প্র্যাকটিকাল প্রয়োগ অনেক দেরিতে আসে। অ্যাকাডেমিক ধারা সাধারণত বাস্তব জীবনের চেয়ে পিছিয়ে।

১১. টেনিউর থাকলে উদ্যম হারায়
টেনিউর পাওয়া অনেক প্রফেসর যুগের চাহিদা থেকে দূরে সরে যান। কেউ কেউ ব্লগ লেখেন বা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন, যার বাস্তব শিক্ষার সঙ্গে সংযোগ নেই।

১২. বুদ্ধিবৃত্তিকতা সবসময় ফল দেয় না
CS বিভাগ প্রায়ই বলিষ্ঠ স্কিলের পরিবর্তে “গভীর সত্য” অন্বেষণের ওপর জোর দেয়। কিন্তু বাস্তবে সফটওয়্যার সময়মতো ডেলিভারি দিতে হয়। তখন তাত্ত্বিকতার সময় নেই।

কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রি অবশ্যই মূল্যবান, তবে তা একমাত্র পথ নয়। বাস্তব সমস্যা সমাধানে দক্ষতা, নতুন প্রযুক্তি শেখার ক্ষমতা, এবং প্রযোজ্য সমাধান দেওয়ার ক্ষমতাই আজকের কর্মদুনিয়ায় আসল চাহিদা।

 

সূত্র: https://shorturl.at/pUbAd

মিরাজ খান

×