
অনেক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যখন একটি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে একসঙ্গে কোরবানি ও আকিকা এই দুটি ইবাদত পালনে সমর্থ হয় না। তখন প্রশ্ন আসে কোরবানির পরিবর্তে কি আকিকা করা যাবে? ইসলামি শরিয়ত এই বিষয়ে কী বলে, সেটিই স্পষ্ট করা হলো নিচে।
ফেকাহবিদদের মতে, কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব আর আকিকা করা মুস্তাহাব। জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে যদি কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব।
সন্তান জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে আকিকা সুন্নত। আকিকা না দিলে কোনো গুনাহ হবে না। পরবর্তীতেও আকিকা করা যাবে। কিন্তু কারো ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবার পর তা না করলে সেই ব্যক্তি গুনাহগার হবে।
তবে একসঙ্গে কোরবানি ও আকিকা দুটোই করার সামর্থ্য না থাকলেই কেবল কোরবানি মওকুফ হয়ে যায় না। দেখতে হবে, ঋণ বাদ দিয়ে বাকি সম্পদ নেসাব পরিমাণ আছে কি না।
যদি ঋণ বাদ দিয়ে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি করা আবশ্যক।
কোরবানির নেসাব বলতে বোঝানো হয় কোরবানির দিনগুলোতে কোনো ব্যক্তি যদি আবশ্যকীয় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমমূল্য পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তাহলে তার ওপর কোরবানি করা আবশ্যক। (আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫)
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী,যিনি ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবেন তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। ওয়াজিব হওয়ার পরও কোরবানি না দেওয়া ব্যক্তি সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন-
"যার সামর্থ্য আছে, তবুও সে কুরবানি করল না (অর্থাৎ কুরবানি করার সংকল্প তার নেই), সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।" (মুসনাদে আহমদ, মুসতাদরেকে হাকেম)
‘আকিকা’ একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ কাটা, আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা, জানের সদকা দেওয়া ও আল্লাহর নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ইসলামি পরিভাষায় আকিকা হলো নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবেহ করা। আলেমদের অনেকেই আকিকাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন।
কিছু অঞ্চলে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে,যার ছোটবেলায় আকিকা করা হয়নি, তার কোরবানি হয় না। আবার অনেকে কোরবানির চেয়ে আকিকাকে এত গুরুত্ব দেন যে, কোরবানি না করে আগে আকিকার পশু জবেহ করেন। তখন অনেকে প্রশ্ন তোলেন,কোরবানি না করে আকিকা করা যাবে কি না?
এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, তাকে কোরবানি করতেই হবে না। সে আকিকা করলেও সমস্যা নেই। তবে যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তাকে কোরবানি করতেই হবে। আকিকা ও কোরবানির মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।
আকিকা একটি আমল, কোরবানি আরেকটি আমল। আকিকা মোস্তাহাব আর কোরবানি ওয়াজিব। আকিকা সারা বছরই করা যায়, অথচ কোরবানি করা যায় মাত্র তিন দিনে ১০, ১১ ও ১২ জিলহজে।
এ তিন দিনে যদি কোনো ব্যক্তির কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ বাদে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা, বা তার সমমূল্যের সম্পদ, অথবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা তার সমমূল্যের সম্পদ থাকে তাহলে তার ওপর কোরবানি করা আবশ্যক।
কোরবানি ও আকিকা দুটিই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলেও, শরিয়তের দৃষ্টিতে তাদের স্থান ও বাধ্যবাধকতা এক নয়। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী আগে কোরবানি করা আবশ্যক, এরপর আকিকা। ভুল ধারণা বা সংস্কার নয়, বরং সঠিক জ্ঞান ও শরিয়তের নির্দেশনাকে প্রাধান্য দেওয়াই প্রকৃত মুসলিমের কর্তব্য।
আফরোজা