
ছবি: সংগৃহীত
যে সভ্যতা নারীর নামে গান বাঁধে, প্ল্যাকার্ড তোলে, মিছিল করে, তারই রক্তমাখা হাতে আজও ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে নারীর অন্তর্নিহিত মর্যাদা। আধুনিকতার নামে, নারীবাদের নামে একধরনের রূঢ় সাম্যবাদ নারীর কোমল অস্তিত্বকে গলাটিপে ধরেছে। যার শেষ পরিণতি—নারীর স্বাধীনতা নয়, বরং এক আত্মবিস্মৃত নিঃসঙ্গতা।
ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায়ে, যখন নারী ছিল চিরনির্যাতিতা—জীবন্ত কবর ছিল তার নিয়তি—তখন এক দীপ্ত জ্যোতির মতো আবির্ভূত হয় ইসলাম। এই ধর্মই সর্বপ্রথম ঘোষণা করে, "নারী কোনো পুরুষের সম্পত্তি নয়, বরং সে এক স্বতন্ত্র আত্মা, সম্মানিত সৃষ্টি।" মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন এমন উচ্চতর আসনে, যা বিশ্বসভ্যতা স্বীকার করতে শিখেছে বহু শতাব্দী পরে।
ইসলাম নারীর শিক্ষা নিশ্চিত করেছে, তার উপার্জনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে, তার উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেছে, এবং তাকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামোয় গৌরবময় অবস্থানে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। খাদিজা (রা.)-র বাণিজ্যিক নেতৃত্ব, আয়েশা (রা.)-র জ্ঞান ও ফতোয়া প্রদান, উম্মে সালামা (রা.)-র রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক পরামর্শ—ইতিহাস এসব সাক্ষ্যে পরিপূর্ণ।
অথচ আজ, তথাকথিত নারী অধিকার পরিষদ ও এক শ্রেণির নারীবাদী আন্দোলন যেভাবে ইসলামের নারীনীতিকে আক্রমণ করে, তা যেন অজ্ঞতার এক নির্মম উদাহরণ। তারা হিজাবকে বন্দিশালা ভাবে, মাতৃত্বকে পিছুটান ভাবে, পরিবারে নারীর ভালোবাসাময় ভূমিকাকে দাসত্ব ভাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এরা কি নারীর সম্মান চায়, না তাকে পুরুষের প্রতিযোগী বানিয়ে নারীত্ব হারাতে চায়?
এই ‘উন্নত সমাজ’ নারীর স্বাধীনতার নাম করে তাকে ছুঁড়ে দেয় কর্পোরেট কারখানায়, বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে, রাজনৈতিক মঞ্চে, চলচ্চিত্রের গ্ল্যামারজগতে—যেখানে নারী শুধুই দৃষ্টিভোগ্য এক উপকরণ। অথচ তারা মুখে বলছে—নারী নাকি আজ স্বাধীন! এ কেমন স্বাধীনতা, যেখানে হৃদয়ের প্রশান্তি নেই, সমাজে স্থিতি নেই, এবং আত্মার তৃপ্তি নেই?
ইসলাম নারীর জন্য যে কাঠামো গড়ে তোলে, তা কেবল ধর্মীয় অনুশাসন নয়—তা এক মানবিক দর্শন, যেখানে নারী পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, পরিপূরক। সেখানে নারী কেবল প্রেমিকা বা মা নয়, সে সমাজের বাতিঘর, সভ্যতার প্রথম শিক্ষক। ইসলাম নারীকে দেয় শুদ্ধ আত্মপরিচয়, চরিত্রের মর্যাদা, হৃদয়ের আশ্রয় এবং সৃষ্টির এক অনন্য সম্মান।
তবে একথা সত্য, কিছু ভ্রান্ত সামাজিক প্রথা ও সংস্কার ইসলামের নামে নারীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে—যা ইসলাম নয়, বরং সমাজের কুপ্রথার ফল। তাই নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন ইসলামকে বোঝা, চর্চা করা, এবং অপপ্রচারের জবাব দেওয়া।
নারীর প্রতি যে দাবিগুলো আজ ‘অধিকার’ নামে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তার মধ্যে বহু দাবি আদতে নারীত্বের বিরুদ্ধে। নারীর হাত থেকে হিজাব কেড়ে নেওয়া, তাকে ঘর থেকে টেনে এনে রাতের পার্টিতে ঠেলে দেওয়া, স্বামীর দায়িত্বকে নিপীড়ন বলে আখ্যা দেওয়া—এসব দাবি নারীর আত্মাকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলে।
নারীকে মুক্তি দিতে হলে, তার সত্তার স্বীকৃতি দিতে হবে। আর ইসলামই সেই প্রথম ও চূড়ান্ত ব্যবস্থা, যেখানে নারী কেবল মর্যাদা পায় না—সে হয় শ্রদ্ধেয়, ভালোবাসার যোগ্য, নিরাপদ ও পূর্ণ স্বত্তাসম্পন্ন এক গর্বিত সত্তা।
আজ এই সময়ে দাঁড়িয়ে, প্রয়োজন সত্যকে সাহস করে বলা—নারীবাদের নামে যারা নারীত্ব হরণ করছে, তারা নারীর শত্রু। আর যারা ইসলামের পথে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা ইতিহাসের ধারক। এই দ্বন্দ্বের মাঝেই আজকের প্রজন্মের জন্য বেছে নেওয়ার আছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য—আপনি নারীকে কী বানাতে চান? এক নিঃসঙ্গ ভোগ্যপণ্য, না এক সম্মানিত সত্তা?
আলীম