ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সীসা থেকে স্বর্ণ! অবিশ্বাস্য সাফল্য বিজ্ঞানীদের

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ১৯ মে ২০২৫

সীসা থেকে স্বর্ণ! অবিশ্বাস্য সাফল্য বিজ্ঞানীদের

ছবি : সংগৃহীত

যুগে যুগে মানুষ স্বপ্ন দেখেছে পরশ পাথরের, একটি জাদুকরী বস্তু, যার ছোঁয়ায় সস্তা ধাতু যেমন লোহা বা সীসা রূপান্তরিত হয়ে যেত মহামূল্যবান স্বর্ণে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের আলকেমিস্টরা এই স্বপ্নেই বিভোর ছিলেন। এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক আইজ্যাক নিউটনের মতো প্রতিভাবান বিজ্ঞানীও জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সেই পরশ পাথরের খোঁজে।

 

 

তবে বাস্তবতা ছিল কঠিন। কারণ সীসা ও স্বর্ণ, দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন মৌলিক উপাদান। সাধারণ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একটিকে আরেকটিতে রূপান্তর করা অসম্ভব। কারণ মৌলিক পার্থক্যগুলো নিহিত থাকে পরমাণুর গঠনে।

কিন্তু পরমাণবিক স্তরে ছবি বদলে যায়। বিজ্ঞানীরা জানেন, সীসার একটি পরমাণুর তুলনায় স্বর্ণের পরমাণুতে মাত্র তিনটি অতিরিক্ত প্রোটন থাকে। অর্থাৎ, তাত্ত্বিকভাবে যদি এই তিনটি প্রোটন সীসা থেকে সরানো যায়, তাহলে সেটিই রূপ নিতে পারে স্বর্ণে।

 

 

এতদিন পর্যন্ত এটি ছিল কেবল গবেষণাগারের গাণিতিক কল্পনা। কিন্তু সম্প্রতি সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে ফেলেছেন সুইজারল্যান্ডের সার্ন (CERN)-এর বিখ্যাত গবেষণা কেন্দ্র লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের (LHC) পদার্থবিজ্ঞানীরা—তা–ও ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, একেবারে দুর্ঘটনাবশত!

 

 

গবেষণার এক পর্যায়ে হাই-এনার্জি কণার সংঘর্ষে এমন একটি পারমাণবিক রূপান্তর ঘটে, যাতে দেখা যায়—সীসা থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া প্রোটনের ফলে একধরনের স্বর্ণতুল্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এটি প্রাথমিক এবং ক্ষণস্থায়ী ছিল, তবুও এই ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন এক “ঐতিহাসিক মুহূর্ত”।

তবে বাস্তবে এই প্রক্রিয়ায় স্বর্ণ উৎপাদন এখনও অর্থনৈতিক বা ব্যবহারিকভাবে সম্ভব নয়। কারণ এর জন্য প্রয়োজন হয় অতি-উচ্চ শক্তির কণা ত্বরণ এবং অত্যন্ত জটিল প্রযুক্তি। কিন্তু এই আবিষ্কার এক নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে পরমাণবিক প্রকৌশল এবং মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানে।

 

 

শুধু স্বর্ণ নয়, ভবিষ্যতে হয়তো এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিতভাবে তৈরি করা যাবে অন্য মৌলিক উপাদানও। তাই বহু শতাব্দী ধরে যেটিকে কেবল ‘মিথ’ বা ‘কাল্পনিক’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হতো, আজ তা দাঁড়িয়ে গেছে বিজ্ঞানের মজবুত ভিত্তির ওপর।
 

আঁখি

আরো পড়ুন  

×