
মসজিদ
মসজিদ আরবি শব্দ। এর অর্থ সেজদার জায়গা। আল্লামা জারকাশি রাহমতিল্লাহি আলাইহি বলেন, নামাজের কর্মসমূহের মধ্য হতে সেজদা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্ম। তাই নামাজ আদায়ের স্থানের নামকে সেজদা শব্দ থেকেই নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই মসজিদকে মসজিদ বলা হয়। মুসলিম সমাজের মূল কেন্দ্র মসজিদ।
কেননা মসজিদকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে মুসলমানদের সমাজ। মুমিন মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচবার এই মসজিদে একত্রিত হয়েই জামাতে নামাজ আদায় করেন। প্রতিদিন পাঁচবার সবার সঙ্গে দেখা হয়। এতে একে অপরের মাঝে গড়ে উঠে ভালোবাসা ও ভ্রতৃত্ববোধ। তৈরি হয় একতা।
এই একতাই মুসলমানদের সব জায়গায় সমুন্নত রাখে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের প্রথম দিনেই যাত্রা বিরতিকালে কুবা নামক স্থানে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। পরে মদিনায় পৌঁছে মসজিদে নববী স্থাপন করে সেখান থেকেই ইসলামের আলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেন। মসজিদ নির্মাণ এবং মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণকারীদের মহান আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ইমান রাখে, নামাজ আদায় করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, তারা হেদায়তপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা তওবা ১৮)
এ আয়াতে আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণের ও আবাদের যোগ্যতা কাদের রয়েছে তা জানিয়ে বলা হচ্ছে, আল্লাহর মসজিদ আবাদ করার যোগ্যতা রয়েছে উপরোক্ত গুণাবলি সম্পন্ন নেককার মুসলিমদের। এটা থেকে বোঝা যায়, যে ব্যক্তি মসজিদের হেফাজত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকে, যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলমের শিক্ষা দানে কিংবা শিক্ষা লাভের উদ্দেশে মসজিদে যাতায়াত করে, সে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হওয়ার সাক্ষ্য বহন করে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে উপস্থিত হয়, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি স্থান প্রস্তুত করেন। (সহিহ বুখারি)
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ, আর নিকৃষ্ট জায়গা হলো বাজার। (সহিহ মুসলিম) হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করবেন। (সহিহ বুখারি) সুতরাং মসজিদ নির্মাণ করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। তাই এ কাজে আমাদের খুব আগ্রহের সঙ্গে এগিয়ে আসা উচিত। কোথাও কোনো মসজিদ নির্মাণের কাজ হলে সেখানে সাধ্য অনুযায়ী অংশগ্রহণ করা কাম্য।
মসজিদ নির্মাণ করা এমন এক পুণ্যময় কাজ, যার সওয়াব মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিন প্রকার আমল ছাড়া। তা হলো সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যার দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয় এবং এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। আর সদকায়ে জারিয়ার মধ্যে মসজিদ নির্মাণ অন্যতম একটি আমল বা সদকা।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, মসজিদ নির্মাণ অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। মহান আল্লাহর প্রিয় হওয়ার মাধ্যম। তাই আমাদের উচিত একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মসজিদ নির্মাণ করা, কারও সেই সামর্থ্য না থাকলে কমপক্ষে সহযোগিতা করবে। মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণে আত্মনিয়োগ করবে। সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো অপরকে নামাজ পড়ার দাওয়াত দেওয়ার মাধ্যমে সমাজের সবাইকে নামাজে আগ্রহী করে তোলা। মহান আল্লাহকে ভুলে যাওয়া মানুষকে আল্লাহর পথে নিয়ে আসা। মসজিদের সঙ্গে তাদের মন সম্পৃক্ত করে দেওয়া।
কেয়ামতের দিন সেসব মানুষকে আরশের ছায়ায় স্থান দেওয়া হবে, যাদের অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।
শহীদ