
ছবি: জনকণ্ঠ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা যারা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ছিলাম, তারা সবাই মিলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দায়িত্ব দিয়েছি। বিগত সাড়ে ৯ মাস ধরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আছে। এই সময়ে এখনো আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলিনি। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে— সরকারে থেকে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ভালো লক্ষণ নয়। এটা আমাদের ভালো লাগে না।
বুধবার (২১ মে) দুপুর ২টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে বিভাগীয় বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রতি জেলা, মহানগর এবং প্রতিটি গ্রামে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন করতে হবে। তবে নতুন সদস্য বুঝে-শুনে করতে হবে। জানতে হবে, তারা বিএনপির নীতি ও আদর্শ বিশ্বাস করে কিনা। যিনি নতুন সদস্য হতে চান, তিনি কি বিপদে পড়ে এসেছেন, নাকি ক্ষমতার লোভে এসেছেন— তাও বিবেচনায় নিতে হবে। নতুন সদস্য করার আগে পুরনোদের মতামত নিতে হবে। যারা দীর্ঘদিন দলে সক্রিয় থেকে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তারা সামনে যাবেন। আর যারা পরে আসছেন, তারা পেছনে থাকবেন। কারণ নেতা তাকেই মানতে হবে, যিনি দলে বেশি অবদান রেখেছেন।
বিএনপি নেতা ইশরাকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল রায় দেওয়ার পরও প্রশাসনিক ক্ষমতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যিনি মেয়র পদে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যে নির্বাচন কমিশনকে এই সরকার নিয়োগ দিয়েছে, সেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করলেও, তাদের হুমকি দেওয়ার জন্য ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ভালো লক্ষণ নয়। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা বিভিন্ন সময় এই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি। কিন্তু অনেক কথাই কার্যকর হচ্ছে না।
সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে দেশের লাখ লাখ মানুষ জেল-জুলুম সহ্য করে যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল, সেই ক্ষেত্রেই জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও এখনো আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য পূরণ হয়নি। আংশিক দাবি আদায় হয়েছে। এখন প্রয়োজন জাতীয় সংসদ নির্বাচন— যেখানে আইন প্রণয়ন করে সংস্কার করা যায়। স্থানীয় সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যম হতে পারে না। আমরা বলেছি— ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক। নির্বাচন কমিশন বলছে— জুনের মধ্যে তারা প্রস্তুত। আবার সংস্কারও চায়। বিএনপির ৩১ দফায় রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের কথা বলা হয়েছে।
ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এই বিএনপি নেতা বলেন, বিএনপি যখন সংস্কারের কথা বলেছে, তখন বাংলাদেশের কোনো দলই সংস্কারের প্রস্তাব দেয়নি। তখন অনেক দলের জন্মই হয়নি। কিন্তু এখন তারা আলোচনা করে বলে বিএনপি সংস্কারের পক্ষে না। তাদের জানতে হবে— বিএনপির জন্মই হয়েছে রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যতগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তা সবই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার অন্তর্ভুক্ত। বরং অনেক বিষয় বাদই পড়ে গেছে। আগামী দিনে বিএনপি জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। বিএনপি থেকে বলা হয়েছে— আমাদের থেকে ভালো কোনো প্রস্তাব কেউ দিলে বিএনপি তা সাদরে গ্রহণ করবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির কর্মী হিসেবে গর্ব করার অনেক কিছু আছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিএনপির অর্জন। মিডিয়ার স্বাধীনতাও বিএনপির সময়েই হয়েছে। রুদ্ধ অর্থনীতিকে মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে পরিণত করেছে বিএনপি। খাদ্য উৎপাদনের সূচনা, পোশাক শিল্প, রেমিটেন্স— সবকিছুই বিএনপির হাত ধরে শুরু হয়েছে। পল্লীবিদ্যুৎ, সমুদ্রে মাছ আহরণ, নারী শিক্ষা, উপবৃত্তি, শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি, সমবায় প্রতিষ্ঠা, গ্রাম সরকার গঠন— সবই বিএনপির উদ্যোগ।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা একটু পড়াশোনা করেন। বিএনপির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক জানার আছে। তাহলে বিএনপি নিয়ে কারও কথা বলার সাহস হবে না।
তিনি আরও বলেন, যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। কিন্তু কেউ কেউ সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার দিকে তাকান, বুঝুন তারা কী চায়।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন ও আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন— বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ জাকির হোসেন বাবলু, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম এনায়েত উল্লাহ কালাম, সদস্য সচিব মোতাহার হোসেন তালুকদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম প্রমুখ।
উদ্বোধন শেষে উপস্থিত বিএনপি, ছাত্রদল ও মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ প্রধান অতিথির কাছে সদস্য ফরম ও ২০ টাকা জমা দিয়ে তাদের সদস্য পদ নবায়ন করেন। পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ মহানগরসহ বিভাগের প্রতিটি জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম চলমান থাকবে।
এম.কে.