
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান অস্থিরতার যুগে নেতাদের সামনে বড় প্রশ্ন হলো-ভবিষ্যৎ কখন বদলাবে, সেটা নিশ্চিত নয়, কিন্তু বদল আসবেই। এই অনিশ্চয়তার মাঝে শুধু কৌশল ও দূরদৃষ্টিই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন আত্মসংযম, স্বচ্ছতা ও মনের দৃঢ়তা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অধ্যাপক কার্থিক রামান্না মনে করেন, এই মানসিক কাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করে একটি প্রাচীন, তবে ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠা দর্শন-স্টোয়িকিজম (Stoicism)।
গ্রিক দার্শনিক মার্কাস অরেলিয়াস ও সেনেকার অনুসৃত এই দর্শন এখন আবার ফিরে এসেছে আধুনিক কর্পোরেট জগতে। টুইটার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট ব্র্যাড ফেল্ড, এবং GoDaddy-র সাবেক সিইও ব্লেক আর্ভিং এরকম বহু শীর্ষ নেতাই আজ স্টোয়িক দর্শনের অনুসারী। তবে রামান্না মনে করিয়ে দেন, স্টোয়িক নেতৃত্ব মানেই নিঃস্পৃহতা নয়; বরং এটি একটি নিয়ন্ত্রিত, বাস্তবতাভিত্তিক ও নীতিনিষ্ঠ উপায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পদ্ধতি।
স্টোয়িকিজম মূলত আত্মনিয়ন্ত্রণ, মানসিক দৃঢ়তা ও যুক্তিবোধের উপর জোর দেয়-যাতে আবেগকে দমন না করে বরং সচেতনভাবে কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। একজন নেতার পক্ষে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক চক্র, বা রাজনৈতিক টানাপড়েন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়; তবে তিনি নিজের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এর অর্থ হলো চাপের মুখেও স্থির থাকা, নৈতিকতা বেছে নেওয়া, ও জটিলতার মাঝেও স্বচ্ছতা বজায় রাখা।
২০২৫ সালের হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ লিডারশিপ সামিটে রামান্না বলেন, “নেতারা যেন সব সময় দমকলকর্মী না হয়ে বরং ফায়ার চিফ হন-যিনি জানেন কোন আগুন নেভাতে হবে, কোনটাকে কিছুক্ষণ জ্বলতে দেওয়া যায়।” এই ধরনের সংযমের জন্য অবশ্য মূল্য দিতে হয়-সবাই খুশি নাও হতে পারে।
তিনি বলেন, “এই বিভাজনের সময়ে জনপ্রিয়তা ধরে রাখার চিন্তা না করে কঠিন সিদ্ধান্ত নিন।”
স্টোয়িক নেতৃত্ব মানে কেবল প্রতিক্রিয়া জানানো নয়, বরং সময়ের আগেই সংকট শনাক্ত করা। এর জন্য প্রয়োজন কার্যকর যোগাযোগব্যবস্থা-একটি বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক, যা চাপের মধ্যে চিন্তা যাচাই করতে পারে, সময়মতো সংকেত দিতে পারে, ও অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয় এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
এই দৃষ্টিভঙ্গিই বহু অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী নেতার পথপ্রদর্শক হয়েছে। যেমন, বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেট দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিনয়, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য, ও সরলতার মাধ্যমে। তিনি সিইওদের পরামর্শ দিয়েছেন-অপ্রয়োজনীয় ভুল এড়াতে, ‘গোলমাল’ উপেক্ষা করতে এবং সততা ও গ্রাহকের ওপর মনোযোগ রাখতে।
ব্রুকস রানিং-এর সাবেক সিইও জিম ওয়েবার জানান, ইউরোপে মুদ্রামূল্যের ওঠানামার কারণে একবার তাদের বিক্রি কমে গেলে, বাফেট তাঁকে বলেন-যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তা উপেক্ষা করো; গ্রাহকের চাহিদার দিকে মনোযোগ দাও।
রামান্না এই মনোভাবকে স্টোয়িক নেতৃত্বের সারমর্ম হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তার মতে, এটি বুঝতে শেখায়-কোন বিষয় গুরুত্ব পাওয়া উচিত এবং কোনটি ছেড়ে দেওয়া যায়। এই স্বচ্ছতা সমস্যা দূর করে না, তবে নেতাদের সংকটের মুখোমুখি হতে শেখায় পরিকল্পনা ও দৃঢ়তার সাথে, আবেগের বশে নয়।
সূত্র: https://shorturl.at/4bX3P
মিরাজ খান