ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

জেলা ও মহানগর জামায়াতের আমির সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান

এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০২, ৩ মে ২০২৫

এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত

ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী ২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছেন। ফেব্রুয়ারির শেষে এবং মার্চের তিন ভাগের দুই ভাগ সময়জুড়ে পবিত্র রমজান থাকবে, তার পরেই ঈদ। এই সময় কোনো নির্বাচনের সময় নয়। দু’টি সময় আমরা নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত মনে করি। একটি হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাস রোজা শুরুর আগে।

আরেকটা হচ্ছে যদি কোনো কারণে এই সময়ের ভেতরে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে- তাহলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পার হওয়া উচিত নয়। শনিবার সকালে রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে দুদিনব্যাপী জেলা ও মহানগর আমির সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্বশীল ব্যবস্থায় নির্বাচন হতে হবে। বিশ্বের ৬২টি দেশ এটা অনুসরণ করে। বেশির ভাগ উন্নত দেশ, তারা এর সুফল পেয়েছে। এটা যারা একবার শুরু করেছে, তারা আর বাদ দেয়নি। আমরা ট্র্যাডিশনাল (প্রচলিত) নির্বাচন পদ্ধতি দেখেছি। এর মাধ্যমে সংসদের মধ্যে আইন প্রণেতা হিসেবে মনোনীত ব্যক্তিরা, যারা লেখা দেখে পড়তে পারেন নাÑ তারাও সংসদ সদস্য হয়েছে।

তারা কি আইন রচনা করে বাংলাদেশের মানুষকে দেবেন? তারা কোন আইনটা সংস্কার সাধন করার মতো যোগ্যতা রাখেন? এজন্য আমরা বলেছি যে, আনুপাতিক হারে সেখানে যাবে। যে যত পার্সেন্ট ভোট পাবে, সে তত আসন পাবে। এতে করে কোনো দলকে ছোট এবং বড় বলার কারও সাহস হবে না। দল ছোট হোক বড় হোক, দল দলই এবং কোনো দল কারও দয়ার পাত্র হবে না। তার নিজের দল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই সুষ্ঠু এবং বস্তুনিষ্ঠতার স্বার্থে কতিপয় সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। এ বিষয় আমরা আমাদের সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলোর কাছে পেশ করছি। আমরা সকল দলের প্রতি আহ্বান জানাব রাজনীতি নিজের জন্য নয়। রাজনীতি দেশ এবং জনগণের জন্য। আমরা যত বেশি সহযোগিতা করব, জাতি তত বেশি উপকৃত হবে। ততটাই আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু এবং সুন্দর হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বলেছি, অবশ্যই যারা অপরাধী তাদের বিচারটা দৃশ্যমান হোকÑ জাতি এটা দেখতে চায়। এ স্বল্প সময়ে সব বিচার করা সম্ভব নয়, এটা আমরাও বুঝি। কিছু বিচার তো করতে হবে। যাতে জাতির মনে আস্থা তৈরি হয়। যারা প্রধান অপরাধী তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃশ্যমান বিচার জাতির সামনে অবশ্যই উপস্থাপন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের একটা দুর্বলতা লক্ষ্য করি, বিচারের ক্ষেত্রে আমরা আরও গতি চাই। সরকার বেশি তৎপর হয়ে এই কাজটা করবে, এটা আমরা দেখতে চাই। যদি এদের বিচার হয় তাহলে আগামী নির্বাচনেও কালো টাকা এবং পেশিশক্তির প্রভাব খাটাতে পারবে না। আর এ রকমের দুঃসাহস হয়ত কেউ দেখাবে না। কিন্তু বিচার যদি না হয় এর আশঙ্কা তো থেকেই যাবে।
আমরা এই নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য এবং জনমতের শতভাগ প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আমাদের দেশের সংসদকে মানসম্পন্ন  দেখতে চাই। এজন্য নির্বাচনকে পেশিশক্তি এবং কালো টাকার প্রভাবমুক্ত করতে হবে। 
জামায়াত আমির বলেন, ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কমপক্ষে তিনটি গণহত্যা সংঘটিত করেছে। প্রথম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায়। যেখানে আমরা হারিয়েছি ৫৭ চৌকস দেশপ্রেমিক প্রতিশ্রুতিশীল সামরিক অফিসার। এর পরে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে।

আর তৃতীয় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে গত বছরের জুলাই মাসের মধ্য দিনগুলো থেকে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত। ফ্যাসিবাদের হাতে দলের অনেক নেতা-সহকর্মী, বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং আলেম-উলামা  নির্যাতিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ডা. শফিকুর বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসের ৫ তারিখে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আপনারা সাক্ষী প্রথম তিনদিন কার্যত কোনো সরকার ছিল না। এ রকম পরিবর্তন যেসব দেশে সংঘটিত হয়েছে সেখানে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা পারিপার্শ্বিক এ ঘটনাবলি থেকে শিক্ষা নিয়েছি এবং খুবই অনুভব করছিলাম জাতিকে শান্তি-শৃঙ্খলা ও ধৈর্য ধরার আহ্বান করা প্রয়োজন। আমরা ৫ আগস্ট রাতেই সে কাজটা করেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, এ পরিবর্তনের পর আমাদের প্রথম কাজ ছিল শহীদ পরিবারের কাছে যাওয়া এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো। দল হিসেবে নিশ্চয়ই আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরেও মানবিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করেছি শহীদ পরিবারের কাছে যাওয়ার। এরপর আমাদের অগ্রাধিকার ছিল যারা আহত এবং পঙ্গু হয়েছেন তাদের দিকে নজর দেওয়া।

জামায়াত আমির বলেন, দেশে যদি অস্থিরতা বিরাজ করে, যদি দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েÑ তাহলে আমরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হব। এজন্য এখানে নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের দায় রয়েছে। তবে পরিবর্তনকামী একটি গঠনমূলক দল হিসেবে জামায়াতের দায় অনেক বেশি। এজন্য আমরা সমসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, সাড়ে ১৫ বছর ধরে যারা হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, খুন, লুণ্ঠন ও অপহরণ করেছেন, জনগণের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন তাদেরও আমরা ন্যায্য বিচার দাবি করি।

তারা যেন কোনোভাবেই কোনো ফাঁকফোকরে পার পেতে না পারে। আইনের আওতায় এনে তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ দাবি আমরা করে আসছি এবং করতেই থাকবÑ বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের দাবি থাকবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এরপরে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছিলাম, এ সরকার গঠিত হয়েছে জনআকাক্সক্ষার ভিত্তিতে। তাদেরকে ন্যায়সংগত কাজে সহযোগিতা করা। তাদের জনস্বার্থবিরোধী কোনো কাজ আমাদের সামনে ধরা পড়লে আমরা সহযোগিতা করব না, আমরা পরামর্শ  দেব, প্রতিবাদ করব এবং ক্ষেত্র বিশেষে আবার প্রতিরোধ করব।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতিসম্প্রতি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর সুপারিশমালা পেশ করেছে। তারা কিছু সুপারিশমালায় কিছু কিছু সুপারিশ আল্লাহর বিধানের বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে পেশ করেছে। তাদের এই সুপারিশ গ্রহণ করলে কুরআন পরিবর্তন হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহতা’য়ালা কুরআন নাজিল করে বলেছেন, কুরআন নাজিল করেছি আমি, রক্ষাও করব আমি। এখানে একটা হরফ, নুকতাও কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না।
জামায়াত আমির বলেন, আগস্টের পরিবর্তনের পর শহীদের রক্ত ও পঙ্গু ভাই-বোনদের প্রতি সকলের সম্মান দেখানো উচিত ছিল। কিন্তু কোনো কোনো দল সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে তাদের নিজেদের সহকর্মীদেরকে সামাল দিতে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা মো. শাহজাহান, অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী ও কর্মপরিষদ সদস্য, জেলা ও মহানগরের আমিররা।

×