
ছবি: সংগৃহীত।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সোনাদিয়া ইউনিয়নে কৃষি উপ-সহকারী মোঃ দাউদের বিরুদ্ধে সরকারি প্রণোদনার বোরো ২০২৪-২৫ মৌসুমের হাইব্রিড ধানবীজ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত বীজ ২৫০ জন অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কৃষকের মধ্যে কেবল ১৫ জনকে প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাকি বরাদ্দ allegedly আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী।
ধান কাটার মৌসুমে বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে ক্ষুব্ধ কৃষকরা দীর্ঘদিনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার তদন্ত এবং উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোরো ২০২৪-২৫ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনার আওতায় হাতিয়া উপজেলার জন্য ৫ হাজার কেজি হাইব্রিড ধানবীজ বরাদ্দ হয়েছিল। প্রতি কৃষককে ২ কেজি করে দেওয়া হলে মোট ২,৫০০ জন কৃষক উপকৃত হওয়ার কথা ছিল। সোনাদিয়া ইউনিয়নের জন্য ২৫০ জন কৃষকের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৫০০ কেজি ধানবীজ।
সরকারি ওয়েবসাইটে উফশী ধানবীজের তালিকা প্রকাশ করা হলেও, হাইব্রিড ধানবীজের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। ফলে তালিকার একটি কপি সংগ্রহ করে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে নামেন প্রতিবেদক।
সংগৃহীত তালিকায় ১ থেকে ১৫ নম্বর ক্রমের কৃষকরা পূর্ব সোনাদিয়ার পাটনী গ্রামের বাসিন্দা। এদের মধ্যে প্রথম ক্রমের আবুল হাসেম বাবলুসহ অন্তত ১০ জন কৃষকের সঙ্গে মাঠে কথা বলা হয়। তারা সবাই জানান, তারা কোনো হাইব্রিড ধানবীজ পাননি, শুধু পাঁচ কেজি ওজনের ধান ও কিছু সার পেয়েছেন। গ্রুপ প্রধান আবুল হাসেম বাবলু অভিযোগ করেন, উপ-সহকারী দাউদ তাদেরকে প্রায়ই নিজ মালিকানাধীন মাইজদী বাজারের দোকান থেকে কীটনাশক ও সার কেনার জন্য চাপ দেন।
তালিকার ১৩ নম্বরের কৃষক অনাথ চন্দ্র দাস এবং ৭ নম্বরের আব্দুর রহমানও একই অভিযোগ করেন। আব্দুর রহমান বলেন, “দাউদ দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বরাদ্দ লুটে খাচ্ছেন। তালিকায় স্বাক্ষর নিলেও বাস্তবে কৃষি উপকরণ দেন না।”
মধ্য সোনাদিয়ার ৩০ নম্বর ক্রমিকের মোহাম্মদ হাসানের বাবা আশরাফ উদ্দিন জানান, তিনজন কৃষক ১ কেজি করে মোট ২ কেজি ধানবীজ পেয়েছেন। মধ্য সোনাদিয়ার অধিকাংশ কৃষক জানান, তারা কোনো হাইব্রিড ধানবীজ পাননি। এ পর্যন্ত ৫০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে মাত্র ৩ জনের ধানবীজ প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর ভিত্তিতে ধরা যায়, সোনাদিয়া ইউনিয়নের ২৫০ জন অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কৃষকের মধ্যে মাত্র ১৫ জন ধানবীজ পেয়েছেন, ২৩৫ জন বঞ্চিত হয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, প্রতি কেজি ধানবীজের বাজারমূল্য ৪০০ টাকা ধরে প্রায় ৪৭০ কেজি বা ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকার ধানবীজ আত্মসাৎ হয়েছে।
এছাড়া, সোনাদিয়ার মদিনা নগর এলাকার কৃষক নবীর ট্রাক্টর, তাজউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তান ও ফজল করিমসহ আটজন কৃষকের কাছ থেকে স্থানীয় আফসার নামে এক ব্যক্তি আউশ মৌসুমের সার-বীজ দেওয়ার কথা বলে ৪০০ টাকা করে নিয়েছেন। এ অভিযোগও উঠেছে যে, উপ-সহকারী দাউদের নাম ব্যবহার করেই এসব টাকা সংগ্রহ করা হয়।
সোনাদিয়া ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য বিতরণে ট্যাগ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ও মোঃ দাউদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল চরচেঙ্গা বাজারে নিম্নমানের চাল-ডাল এবং ওজনে কম দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
স্থানীয় কৃষি সচেতন ব্যক্তিরা প্রশ্ন তুলেছেন, “একটি ইউনিয়নে যদি এত অনিয়ম হয়, তাহলে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়ন ও পৌরসভায় কী ঘটছে?”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপ-সহকারী মোঃ দাউদ জানান, “তালিকা পুরনো হওয়ায় সব কিছু মনে নেই, তবে আমি সবাইকে ধানবীজ দিয়েছি।”
প্রণোদনা বঞ্চিত কৃষকদের অভিযোগ, মোঃ দাউদ পাশের তমরুদ্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা হলেও গত ৭ বছর ধরে সোনাদিয়ায় দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন একই এলাকায় দায়িত্ব পালনের ফলে তিনি প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন।
হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজ বলেন, “অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে।”
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মীরা রানী দাস বলেন, “অভিযোগের বিষয়টি তদন্তে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হবে।”
সায়মা ইসলাম